ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

র‌্যাবের তৎপরতায় উদ্ধার

টিভি-ফ্রিজ মিস্ত্রি পরিচয়ে বাসায় ঢুকে শিশু অপহরণ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২০ মে ২০১৭

টিভি-ফ্রিজ মিস্ত্রি পরিচয়ে বাসায় ঢুকে শিশু অপহরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবধান ! ফ্রিজ-টিভি মিস্ত্রি পরিচয়ে কেউ দরজা খুলতে বললেও সাড়া দেবেন না। দিলে মুহূর্তেই ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের সুমন-মিতু দম্পতির মতো সর্বনাশ। এই দম্পতির তিন মাসের শিশুটিকে অপহরণ করে ইলেক্ট্রিশিয়ান সুমন। তারপর শিশুটির বাবা-মায়ের কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বুধবার রাজধানীর কেরানীগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। তবে র‌্যাবের তৎপরতায় পরের দিন বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ থেকে শিশু শিনকে উদ্ধার এবং সুমনকে আটক করা হয়। তারপর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ফ্রিজ টিভি মেরামতের পরিচয়ে কিভাবে বাসা বাড়িতে ঢুকে অপহরণ করা হয় শিশুদের। এ বিষয়ে শুক্রবার কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসাইন মাতাব্বর জানান, অপহরণকারী সুমন টিভি-ফ্রিজ মেরামতের কাজ করে। কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় তার একটি দোকানও আছে। সেই সূত্রে জিনজিরার মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার শাখাওয়াত হোসেন ও তার পরিবারের সঙ্গে পরিচয়। ১৭ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাখাওয়াতের বাসায় যায় সুমন। এ সময় শাখাওয়াতের স্ত্রী রিতু ইসলাম মিতুকে জিজ্ঞেস করে কোন কাজ আছে কিনা? কোন কাজ নেই জানিয়ে সুমনকে বসতে বলে মিতু পাশের রুমে বাচ্চার কাপড় আনতে যান। ড্রয়িং রুমের খাটের ওপর ৩ মাসের সন্তানটি ছিল। ফিরে গিয়ে দেখেন রুমের ছিটকিনি বাইরে থেকে আটকানো। তিনি দরজা খোলার কথা বলতে থাকেন, কিন্তু পাশের ঘর থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে কাঁদতে শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশী একজন এসে দরজা খুলে দেন। তখন ড্রয়িং রুমে এসে ৩ মাসের মেয়ে ও ইলেকট্রিশিয়ান সুমন কাউকে পাননি। এরপর সুমনকে বার বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর মুক্তিপণ চেয়ে সুমন ফোন করে। সুমন মিতুর মোবাইলে ফোন করে বলে, ‘আমি তোর মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছি। মেয়েকে ফেরত পেতে চাইলে দুই লাখ টাকা রেডি রাখ। যখন বলব নিয়ে আসবি। র‌্যাব-পুলিশ কাউকে জানালে তোর মেয়েকে পাবি না। এরপরই সে ফোন কেটে দেয়। রাত ১১টার দিকে সুমন আবার ফোন করে তাড়াতাড়ি টাকার ব্যবস্থা করতে বলে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে আবার ফোন করে শিন সুস্থ আছে জানিয়ে কখন কোথায় টাকা নিয়ে আসতে হবে জানায়। একই সঙ্গে পুলিশকে জানালে মেয়েকে হারাতে হবে বলে হুমকি দেয় সুমন। এদিকে কোন উপায় না দেখে শাখাওয়াত হোসেন র‌্যাব-১০ কে বিষয়টি জানায়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ মে বিকেল ৪টা থেকে অভিযান শুরু করে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার গোলাম বাজার কাঁচা বাজারের পাশে লাকড়ি ঘরের কাছ থেকে অপহরণকারী সুমনকে গ্রেফতার করে। সুমনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোলাম বাজার হাবিব কলোনি গলিতে দোতলা একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারী সুমন শিশুটিকে অপহরণ ও ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির কথা স্বীকার করেছে। সে আরও জানায়, অপহরণের কাজটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে করেছে। অপহরণের পর তার পূর্ব পরিচিত পারভেজের বাসায় শিশুটিকে নিয়ে যায় এবং তাদের জানায় শিশুটির মা নেই। শিশুটিকে সে দত্তক নিয়েছে। ১৯ মে তার বোন মাদারীপুর থেকে এসে সেখানে নিয়ে যাবে। এরই মধ্যে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারী সুমন শিশুটিকে অপহরণ ও ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির কথা স্বীকার করেছে। সে জানায়, অপহরণের কাজটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে করেছে। অপহরণের পর তার পূর্ব পরিচিত পারভেজের বাসায় শিশুটিকে নিয়ে যায় এবং তাদের জানায় শিশুটির মা নেই। শিশুটিকে সে দত্তক নিয়েছে।
×