ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নুরুল করিম নাসিম

ছোট কাগজ

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৯ মে ২০১৭

ছোট কাগজ

এত কিছু বাধাবিপত্তির ভেতরও ছোট কাগজের যে জোয়ার এসেছিল ষাট দশকে, তা কিভাবে কেমন করে এত ব্যাপকতা পেল, তা গবেষকরা হয়ত একদিন অনুসন্ধান করবেন। লিখবেন। ইতিহাস রচিত হবে। কিন্তু এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমাদের সময়ে যে গল্প পত্রিকাগুলো একটা বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল তার মধ্যে ‘ছোটগল্প’, সূচিপত্র এবং ‘রূপম’ অন্যতম। উল্লিখিত এই তিনটি মূলত গল্প পত্রিকার বাইরেও রাজশাহী, চট্টগ্রাম থেকে গল্পপত্রিকা প্রকাশিত হয়ে থাকলেও, তার কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। ঢাকার শাহবাগের আজিজ মার্কেটের লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরিতে খোঁজ করে জেনেছি, তারাও এ সম্পর্কে কিছু জানেন না। এমন হতে পারে, কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহে গল্পবিষয়ক পত্রিকা থাকলেও থাকতে পারে। এ ব্যাপারে কেউ যদি আমাকে আমার ইন্টারনেটে চিঠি লেখে তা হলে কৃতজ্ঞ হব। তবে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে গল্পবিষয়ক একাধিক লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো। সবগুলোর নাম ও প্রকাশকাল এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। সাহিত্য-ত্রৈমাসিক উত্তরমেঘ-এ বেশ ক’টি ভাল গল্প ছাপা হয়েছিল, মনে পড়ে। কবিতা চর্চা সব দশকেই ব্যাপকতা পায়। এ কথা ধ্রুব সত্য যে, ‘সবাই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।’ সব প্রকাশিত কবিতা কবিতা নয়। গল্প লেখা কঠিন ও সময়ক্ষেপণ বলে, ভাল গল্প ও গল্পকারের ঘাটতি সব সময় থেকে গেছে। আমাদের সময়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ঢাকার তিনটি গল্প পত্রিকাকে ঘিরে গল্পচর্চার একটা প্রবাহ গড়ে ওঠে। গল্পকারদের একটা দলও গড়ে ওঠে। কিন্তু তুমুল কোন দলবাজি হয় না, বরং পারস্পরিক প্রতিযোগিতার একটা সুস্থ পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। ‘ছোটগল্প’ সম্পাদক কবিদের গল্প লিখতে উৎসাহিত করেন। কবি আবুল হাসান, কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখেরা গল্প লিখতে উদ্বুদ্ধ হন। এই দৃষ্টান্ত অন্য গল্প পত্রিকা ‘সূচিপত্র’ এবং ‘রূপমে’র জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এ কথা আগেও বলেছি, আমাদের সময়টা ছিল অস্থির ও এলোমেলো। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনরোষ, তদানীন্তন পাকিস্তানের দুই প্রদেশÑ পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তানে বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্য, আমলাদের ভ-ামি, সবকিছু মিলিয়ে এক জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি এবং দুর্বিনীত সময়ের ভেতর দিয়ে দেশ খুঁড়ে খুঁড়ে এগোচ্ছিল। এই সময়ে সেই সত্তর দশকে আমরা যারা গল্পের ভুবনের নীরব কর্মী ছিলাম, যেমন বুলবুল চৌধুরী, জাফর তালুকদার, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, মুহাম্মদ জুবায়ের, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম এবং আমি ও আরও অনেকে যাদের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, তারা যেসব গল্প লিখেছে, তার ভেতর অন্তত কারও কারও গল্পে সময় সেই রাত ও সেই সময়কার মানুষদের কথা উঠে এসেছে। তার কেউ কেউ শুধু ভালবাসাকে পুঁজি করে মনোমুগ্ধকর গল্প লিখেছেন। কিন্তু এদের মাঝে বুলবুল চৌধুরী বেছে নিয়েছে ভিন্ন বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক। তার গল্পে প্রাকৃতজনেরা , বিশেষত বেদিনী, সাপুড়ে, যাত্রাশিল্পী, মূর্ত হয়ে উঠেছে।
×