ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অমিত দাস

সাধ আছে সাধ্য নেই

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৮ মে ২০১৭

সাধ আছে সাধ্য নেই

জীবনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি হলো মানুষের মৌল মানবিক প্রয়োজন। আর এ মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রথমেই রয়েছে খাদ্য। খাদ্য ছাড়া জীবন চালানো সকল জীবের পক্ষেই দুঃসাধ্য। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, বাজারে খাদ্যের যোগান ভোক্তার চাহিদার অনুপাতে সবসময়ই সমান থাকে না। ফলে বাজার স্থিতিশীল থাকে না। জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এমন কি সীমিত আয়ের লোকের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যায়। তখন জন সাধারণকে বাধ্য হয়ে সাধ্যাতিরিক্ত দাম দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয়। না কিনে উপায় নেই? দোকানিদের সঙ্গে দরকষাকষি কিংবা দাম নিয়ে দাঙ্গা এতো এক নিত্যনৈমিত্তিক কা-। অর্থনীতির ভাষায়, বাজারে বস্তু সামগ্রীর যোগান চাহিদার তুলনায় যখন কমে যায়, তখন বাজার ভারসাম্যহীন হয়। আর তখনি আমাদের মতো গরিব মানুষ বাজারে আগুন লেগেছে বলে চিৎকার করে। এতে বিন্দুমাত্রও অসত্য নেই। কিন্তু কেন বাজার ভারসাম্য হারায়, সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়? এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছেÑ হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নয়ত মানবসৃষ্ট সামাজিক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপরে মানুষের হাত না থাকলেও সামাজিক দুর্যোগের পেছনে ব্যবসায়ী অবশ্যই মানুষ দায়ী। এই সমাজে এক ধরনের অর্থলোভী পাবলিকের পকেট কাটার নিমিত্তে কিছুদিন পরপরই দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে এক প্রকার অর্থনৈতিক অরাজকতা বা দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির সৃৃষ্টি করে। এরা মুনাফালোভী, অর্থান্ধ, মানুষের কষ্টে এদের অন্তর কাঁদে না। এদের লোভের লেলিহান শিখা আমাদের মতো দরিদ্র সাধারণকে দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারে চিরকাল। অথচ ইতিহাস পাঠে জানা যায় এই দেশে শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত। বর্তমানে বাজারে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এ যেন মহাজন-মজুতদারদের মগেরমুল্লুক। তারা যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। একটি মফঃস্বল বাজারের চিত্র এ রকম কেজি প্রতি-চাল-৪৭, আটা-৩০, লবণের প্যাকেট-৩০, রসুন-১৬০, ডাল মুসুর, মুগ-১৩০-১৪০, গরু ও খাসির মাংস-৪৮০-৭০০, মাছ-৩৫০-৪০০, পটল-৬০, ঢেঁড়স ও বেগুন-৫০ টাকা। এই যদি হয় বাজারের হাল, তাহলে কেমনে সুখে থাকে ভোজনরসিক বাংলার বাঙাল! সবকিছুর দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে, শুধু আইন করে হুমকি-ধমকি দিয়ে ব্যবসায়ীদের অসৎ কারবার বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য দরকার পারিবারিক পরিম-লে শৈশবেই সুষ্ঠু নীতি নৈতিকতার শিক্ষা। বিবেকের বন্ধ দুয়ার খোলার চেষ্টা বৃথা। রমজান এলে চোখে সুরমা হাতে তজবি গায়ে আতর, এতে করে অসাধু ব্যবসায়ীদের লেবাসটি হয়ত বদলানো যেতে পারে কিন্ত চরিত্র কী একেবারে বদলে যায়? কেননা চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার চাই। আমাদের আর কোন চাওয়া নেই। আমরা বর্তমান বাজারের সঙ্গে তাল মিলাতে না পেরে একেবারে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের সাধ আছে, কিন্তু সাধ্য নেই। বর্তমান বাজারদরের হাত থেকে কে আমাদের বাঁচাবে? চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×