ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আপন আলোয় সিমোনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৭ মে ২০১৭

আপন আলোয় সিমোনা

গত কয়েক বছর ধরেই টেনিস কোর্টের আলোচিত নাম সিমোনা হ্যালেপ। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পঞ্চাশে জায়গা করে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন তিনি। পরের বছরেই শীর্ষ বিশে। পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতেই সেরাদেশে জায়গা করে নেন রোমানিয়ার এই টেনিস তারকা। সে বছরই প্রথমবারের মতো ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালের টিকিট কাটেন তিনি। কিন্তু শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে রাশিয়ান তারকা মারিয়া শারাপোভার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় হ্যালেপের। তারপরও ধমে যাননি পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার এই রোমানিয়ান। সর্বশেষ মাদ্রিদ মাস্টার্সেও নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন সিমোনা হ্যালেপ। শেনজেন টুর্নামেন্ট দিয়ে ২০১৭ সালের সূচনা করেন সিমোনা হ্যালেপ। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডেই থেমে যায় তার জয়রথ। এরপর মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও ব্যর্থ। শেলি রজার্সের কাছে হেরে টানা দুইবার মৌসুমের প্রথম মেজর এই টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়েন হ্যালেপ। এরপর ধারাবাহিকভাবে খেলেছেন সেন্ট পিটাসবার্গ, বিএনপি পরিবাস ওপেন, মিয়ামি এবং স্টুটগার্ট ওপেনে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। বছরের প্রথম ছয়টি টুর্নামেন্টে শিরোপা জয় তো দূরের কথা কোনাটার ফাইনালেই জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি। তবে স্টুটগার্ট ওপেনের সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে ক্লে কোর্টে নিজেকে মেলে ধরার ইঙ্গিত দেন ২৫ বছর বয়সী হ্যালেপ। তারপর বাজিমাত করেছেন মাদ্রিদ ওপেনেই। যেখানে ক্যারিয়ারের ১৫তম ডব্লিউটিএ শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তিনি। গত বছর ডোমিনিকা সিবুলকোভাকে হারিয়ে মাদ্রিদ ওপেনের শিরোপা জিতেছিলেন হ্যালেপ। যে কারণে এবারও ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মাখানো ছিল তার। শুরু থেকে দুর্দান্তই খেলেন তিনি। প্রথম পর্বে ক্যারোলিনা পিসকোভাকে হারিয়ে মিশন শুরু করেন হ্যালেপ। এরপর ক্রমান্বয়ে রবার্তা ভিঞ্চি, সামান্থা স্টোসার, কোকো ভেন্ডেওয়েঘে এবং এ্যানাস্তাসিয়া সেভাস্তোভাকে পরাজিত করে টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নেন। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়ান ক্রিস্টিনা মাদেনোভিচ। সেখানেও দেখা গেল দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। উত্তেজনায় ঠাসা এক লড়াই। সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ফরাসী তরুণী টেনিস তারকা ক্রিস্টিনা মাদেনোভিচ কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন হ্যালেপকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদ ওপেনের শিরোপা ধরে রেখেছেন তৃতীয় বাছাই। প্রায় ৩ ঘণ্টার লড়াইয়ের পর সিমোনা হ্যালেপ ৭-৫, ৬-৭ (৫-৭) ও ৬-২ সেটে মাদেনোভিচকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। রোমান কিংবদন্তি ইলি নাসতাসির নামে ট্রফির নামকরণ করা হয়েছে, তাই সাবেক এই তারকাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান সিমোনা। কিন্তু ডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতিই বাজে আচরণ ও অশ্লীল মন্তব্যের জন্য নাসতাসির পুরস্কার বিতরণীতে উপস্থিত থাকার বিষয়টি ভর্ৎসনা করেছে। ম্যাচ চলার সময়ও উপস্থিত ছিলেন নাসতাসি। ফেড কাপে গত মাসে তিনি রোমানিয়ার দলটির অধিনায়ক ছিলেন। ওই সময় প্রতিপক্ষ গ্রেট ব্রিটেনের খেলোয়াড়, কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করেন। বর্ণবিদ্বেষী আচরণ করার পাশাপাশি চেয়ার আম্পায়ারের বিরুদ্ধেও অশ্লীল মন্তব্য করেন। এরপর সবাই তাকে বয়কট করেছিলেন। কিন্তু মাদ্রিদের ফাইনালে তার উপস্থিতিটাকে সহজভাবে দেখছে না ডব্লিউটিএ। কারণ ফেড কাপের ওই আচরণসমূহের জন্য ইতোমধ্যেই সিমোনাকে ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডন থেকে নিষিদ্ধ করেছে ডব্লিউটিএ। ডব্লিউটিএ প্রধান নির্বাহী স্টিভ সাইমন এ বিষয়ে বলেন, ‘কোর্টে তার কোন জায়গা ছিল না এদিন। তিনি আপাতত যে কোন টুর্নামেন্টের জন্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছেন আইটিএফ থেকে। মাদ্রিদ ওপেনের আয়োজকদের এটি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য একটি পদক্ষেপ তাকে রাখা।’ পুরস্কার বিতরণীর সময় নাসতাসি চ্যাম্পিয়ন সিমোনার প্রশংসা করেন। সিমোনাও শিরোপা হাতে পাওয়ার আগে বক্তব্যে নাসতাসিকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘ইলি আসার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি আমাকে সব ম্যাচেই দারুণ সমর্থন দিয়েছেন।’ মাদ্রিদে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি রেকর্ড তিনবার ফাইনালেও জায়গা করে নেন হ্যালেপ। এই টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর সাবেক রোমানিয়ার গ্রেট টেনিস তারকা ইয়ন টিরিয়াচ। তিনি আবার নাসতাসির দ্বৈতের সঙ্গী ছিলেন। সবমিলিয়ে দেশ থেকে দূরের একটি শহরে হলেও নিজের ঘরের মতোই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ছিল সিমোনার জন্য। কিন্তু তবু শিরোপা জেতাটা তার জন্য একেবারে সুনিশ্চিত কোনভাবেই বলা যায়নি। কারণ প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিনা মাদেনোভিচ। র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৭ নম্বর হলেও সাম্প্রতিক পারফর্মেন্সের বিচারে হ্যালেপের জন্য বড় ধরনের হুমকি ছিলেন তিনি। ফাইনালেও শুরু থেকে সিমোনাকে অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে ফেলেন মাদেনোভিচ। কঠিন লড়াইয়ের পর অবশ্য হারতেই হয়েছে তাকে। পরাজয়ের পর মাদেনোভিচ বলেন, ‘এই ফাইনালটা সত্যিই বিস্ময়কর রকমের ভাল ছিল। আমরা উভয়েই কোর্টে যা প্রদর্শন করেছি সেটার জন্য শুধু গর্বই বোধ করছি। দারুণ স্পিরিট, মনোভাব এবং সুন্দর একটি খেলা উপহার দেয়ার সম্পূর্ণ কৃতিত্বই আমি সিমোনাকে দিতে চাই।’ মাদেনোভিচ এর আগে চারবার খেলেছিলেন সিমোনার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে তিনটিতেই জিতেছিলেন মাদেনোভিচ। গত মার্চেও ইন্ডিয়ান ওয়েলসে সিমোনাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
×