ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেবশ্রী চক্রবর্তী

উৎসবের অপেক্ষায় রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৭ মে ২০১৭

উৎসবের অপেক্ষায় রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদ

২০১২ সালের পর স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে রিয়াল মাদ্রিদ। এ লক্ষ্যে বড় বাধা পেরিয়েছে জিনেদিন জিদানের দল। ১৪ মে শক্ত প্রতিপক্ষ সেভিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে রিয়াল। সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নদের হয়ে জোড়া গোল করেন সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। একটি করে করেন নাচো ও টনি ক্রুস। একই রাতে আরেক ম্যাচে একই ব্যবধানে জয় পেয়েছে বার্সিলোনা। ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারের হ্যাটট্রিক করেন স্বাগতিক লাস পালমাসের বিরুদ্ধে। অপর গোলটি করেন লুইস সুয়ারেজ। এখনও পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে বার্সা। ৩৭ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৮৭। সমান পয়েন্ট রিয়ালেরও। গোলগড়ে দ্বিতীয় স্থানে তারা। তবে রিয়ালের বাকি আছে আরও দুটি ম্যাচ। সেখানে বার্সার একটি। আজই বার্সাকে টপকে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে জিদানের দল। এদিন সেল্টা ভিগোর বিরুদ্ধে লড়বে তারা। এরপর রবিবার শেষ ম্যাচে নামবে সবাই। অন্যদিকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর রেকর্ড একে অপরের পরিপূরক হয়ে গেছে। রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপারস্টার আছেন তুখোড় ফর্মে। লা লিগায় সেভিয়ার রিবুদ্ধে জোড়া গোল করে আরও একটি গৌরবময় মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বর্তমান ফিফা সেরা তারকা। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে রোনাল্ডো স্পর্শ করেছেন ৪০০ গোলের মাইলফলক। রাউল গঞ্জালেসকে টপকে রিয়ালের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা অনেক আগেই হয়েছেন রোনাল্ডো। এবারের কীর্তিটা আরও বড়। ১৯৯৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদে খেলে স্প্যানিশ কিংবদন্তি রাউল করেছেন ৩২৩ গোল। তাকে অনেক আগেই টপকে গেছেন সি আর সেভেন। এবার ইউরোপের অন্যতম সেরা এই ক্লাবকে নতুন এক মাইলফলকের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পর্তুগীজ তারকা। সেভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথম গোলটি করেই রোনাল্ডো স্পর্শ করেন ৪০০ গোলের মাইলফলক। পরে আরেকটি গোল করায় তাঁর গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০১। রাউল ১৬ বছর ধরে ৭৪১টি ম্যাচ খেলে করেন ৩২৩ গোল। আর রোনাল্ডো মাত্র ৩৯১টি ম্যাচ খেলেই পূর্ণ করেছেন ৪০০ গোল। ২০০৯ সালে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে রিয়ালে আসেন রোনাল্ডো। এরপর থেকে তিনি পরিণত হয়েছেন রিয়ালের নির্ভরতার প্রতীকে। আর এবারের মৌসুমে সেটা আরও ভাল করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পর্তুগীজ তারকা। করে চলেছেন একের পর এক গোল। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রোনাল্ডোর অসাধারণ নৈপুণ্যের সুবাদেই ফাইনালে উঠেছে রিয়াল। ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগে বেয়ার্ন মিউনিখের রিবুদ্ধে হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ গোল করার পর সেমিফাইনলের প্রথম লেগেও এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন। তাতেই অনেকগুলো রেকর্ড সি আর সেভেনের কব্জায় এসেছে। একসময় চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটির জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতো মেসি ও রোনাল্ডোর। রিয়াল তারকা সব সময়ই কিছুটা এগিয়ে থাকলেও বার্সিলোনা তারকা এতদিন ছিলেন তাঁর খুব কাছাকাছিই। কিন্তু সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচে ব্যবধান অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছেন সি আর সেভেন। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক করার রেকর্ডেও রোনাল্ডো নাম লিখিয়েছেন মেসির পাশে। ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিক সংখ্যা এখন ৭টি। বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন তারকারও হ্যাটট্রিক ৭টি। সবচেয়ে বেশি গোল করার দৌড়ে অবশ্য মেসির চেয়ে বেশ এগিয়ে পর্তুগীজ অধিনায়ক। ১৪৪ ম্যাচে রোনাল্ডো করেছেন ১০৩টি গোল। আর ১১৮ ম্যাচ খেলে মেসি করেছেন ৯৪ গোল। এ্যাটলেটিকোর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে আরও একটি নতুনের জন্ম দিয়েছেন রোনাল্ডো। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নকআউট পর্বে তিনি ৫০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। তাঁর ১০৩টি গোলের ৫২টিই এসেছে নকআউট পর্বে। আর ৫১টি করেছেন গ্রুপ পর্বে। সেমিফাইনালে সবচেয়ে বেশি, ১৩টি গোল করার রেকর্ডের পাশেও লেখা আছে রোনাল্ডোর নাম। অবাক করার মতো তথ্য হলো, নিজেদের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ যতগুলো গোল করেছে, রোনাল্ডো একাই করেছেন তার চেয়ে বেশি। এ্যাটলেটিকো এখন পর্যন্ত দলগতভাবে করেছে ১০০টি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ গোল। আর রোনাল্ডো একাই করেছেন তার চেয়ে তিনটি বেশি গোল। শুধু তাই নয়, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পরপর দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছেন রোনাল্ডো। শিরোপার পথে থাকা রিয়াল দারুণ একটা রেকর্ডও গড়েছে। টানা ৬২ ম্যাচে গোল করার অনন্য রেকর্ড এখন তাদের দখলে। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লীগে টানা গোলের রেকর্ডটি এত দিন ছিল বেয়ার্ন মিউনিখের। জাপ হেইঙ্কেসের ট্রেবল জয়ী বেয়ার্ন পেপ গার্ডিওলার অধীনেও গোলবন্যা বইয়ে টানা ৬১ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছে। সেই রেকর্ডটা টপকে গেছে জিনেদিন জিদানের দল। শিরোপা নিয়ে রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান বলেন, এটা দীর্ঘ পথ। আমরা জানি স্পেনে লীগ শিরোপা জেতা মোটেই সহজ নয়। প্রতিটি দিনই আমরা শিরোপা কাছে গিয়েছি। আমরা জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলাম। এখন হাতে আর মাত্র দুটি ম্যাচ আছে। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। প্রিয় শিষ্য রোনাল্ডোর প্রশংসা করে রিয়াল বস বলেন, সে ভিন্ন প্রকৃতির খেলোয়াড়। টনি ক্রুসের পাসটি খুব ভাল, ওখানে একটি ফাঁকা জায়গা ছিল এবং সে বল জালে জড়িয়ে দেয়। ফল নির্ধারক মুহূর্তগুলোতে সবসময় সে অবদান রাখে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ধরে রাখতে ন্যূক্যাম্পে এইবারের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে জয় চায় কাতালানররা। এ প্রসঙ্গে সুয়ারেজ বলেন, এটা এখন নির্ভর করছে তারা (রিয়াল) সেল্টা ও মালাগার রিবুদ্ধে কি করে। আর আমরা কোন ম্যাচ হারতে পারি না এবং আমরা সঠিক পথেই আছি। আশা ছাড়ছেন না বার্সা কোচ লুইস এনরিকেও। তিনি বলেন, তাদের (রিয়ালের) খুবই কঠিন দুটি ম্যাচ আছে। যাদের কাছে এই মৌসুমে আমরা হেরেছি। যেহেতু আমরা তাদের মাঠে হেরেছি, এর মানে ওখানে যে কেউ হারতে পারে। আমি নির্দিষ্ট করে বলতে চাই যে, সেল্টার মাঠে আমরা অনেকবার হেরেছি।
×