ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে পাটের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ২৫ শতাংশ বেড়েছে

প্রকাশিত: ০১:১৫, ১৩ মে ২০১৭

দেশে পাটের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ২৫ শতাংশ বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে পাটের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ২৫ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারমূলক আইন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। আমি দেখেছি, কীভাবে একমাসের মধ্যেই এই আইনটি বাস্তবায়ন হয়। সকলের সহযোগিতায় আমরা পাটের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পেরেছি। তিনি বলেন, পাটের হারানো সোনালী ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার নানা ধরণের কাজ করে যাচ্ছে। পাটের বহুমুখী পণ্য রফতানিকারকদের জন্য ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তবে এই পক্রিয়াটি এখনও চলমান। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে আশা করছি। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে ‘ইকো ফ্রেন্ডলি পাল্প অ্যান্ড পেপার প্রসেসিং ফরম জুট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং ইউএসএআইডি এগ্রিকালচারাল ভেলু চেইন (এভিসি) প্রজেক্ট। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। যে পরিমাণ পাট আমরা উৎপাদন করি, তার ১০ শতাংশও আমরা ব্যবহার করি না। আমাদের দেশে সেই সুযোগ নেই। অন্যদিকে ভারত যেপরিমাণ পাট উৎপাদন করে তারা এরমাত্র ২ শতাংশ রফতানি করে। বাকি ৯৮ শতাংশ নিজেরাই ব্যবহার করে। আর তারা রফতানি করে পাটের পণ্য। কিন্তু আমরা রফতানি করি কাঁচাপাট। তাই রফতানি নির্ভরতা কমাতে প্রধানমন্ত্রী বাধ্যতামূলক প্যাকেজিং আইন ২০১০ করেছেন। যা ইতিমধ্যেই আমরা বাস্তবায়ন করেছি। পাট পণ্য রফতানিতে ভারতের এন্টি ডাম্পিং সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে আসলে আমাদের ত্রুটি রয়েছে। আমরা যারা পাট রফতানি করি, ত্রুটিটা তাদের। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারত তাদের প্রত্যেকটা ধাপ মেনেই এই এন্টি ডাম্পিং দিয়েছে। এখানে বলার কিছু নেই। তবে রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা পাট সংশ্লিষ্ট শিল্পে এগিয়ে আসুন। কেউ যদি পাট সংশ্লিষ্ট কোনো শিল্প করতে চান, তাহলে আমাদের জানান। আমরা তাদের জমির ব্যবস্থা করে দিবো। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিজেআরআই)’র পরিচালক ড. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত পাট হতে আন্তর্জাতিক মানের পাল্প ও কাগজ প্রস্তুত সম্ভব এবং এ ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার একান্ত আবশ্যক। স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি পাট হতে পাল্প ও পেপার উৎপাদনে মনোযোগী হলে আমরা আবার পাটের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে পারবো। এ লক্ষ্যে পাট খাতে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন, প্রযুক্তির ব্যবহার, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও আর্থিক সহায়তা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত পাটের তৈরি পাল্পের চাহিদা বাড়ছে। তাই এ খাতে আমাদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার বলেন, বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে পাটের চাষ বেশি হয়, সেখানে পাল্প ও কাগজ প্রস্তুতকারী কারখানা স্থাপন করতে হবে, যার মাধ্যমে স্বাশ্রয়ী মূল্যে পাট হতে পাল্প ও পেপার প্রস্তুতে পাট চাষী ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিজেআরআই)-এর মহাপরিচালক ড. মোঃ মনজুরুল আলম বলেন, গাছ থেকে কাগজ তৈরির মাধ্যমে সারা পৃথিবীতেই বন ধংসের মুখোমুখি হয়েছে, যার ফল হিসেবে পাট হতে পাল্প ও পেপার তৈরির বিষয়ে সকলের আগ্রহ বেড়েছে। তিনি বছরের দুবার পাট চাষের জন্য বীজ ও প্রয়োজনীয় কার্যপ্রনালী আবিষ্কার এবং বিশেষ করে লবনাক্ত পানিতে পাট চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ের বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিজেএমসি’র প্রাক্তন যুগ্ম সচিব ও পরিচালক বাবুল চন্দ্র রয়, ডিসিসিআই পরিচালক ইমরান আহমেদ, রাশেদুল আহসান, রিয়াদ হোসেন, সেলিম আকতার খান, বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন-এর চেয়ারম্যান এনামুল হক পাটোয়ারী ও পাট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।
×