ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল, হাসপাতাল, আবাসিকসহ বাজার এলাকায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি গাড়ির গতি নয়

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ১৩ মে ২০১৭

স্কুল, হাসপাতাল, আবাসিকসহ বাজার এলাকায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি গাড়ির গতি নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক দুর্ঘটনারোধে রাজধানীতে মোটরবাইকের র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত গ্লোবাল রোড সেফটি উইক উদযাপন উপলক্ষে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ব্যবস্থাপনায় এ র‌্যালীর আয়োজন করা হয়। ‘জীবন বাঁচাও, গতি কমাও’ স্লোগানে এ র‌্যালীর আয়োজন করা হয়। শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে র‌্যালীর যাত্রা শুরু হয়, যা শেষ হয় বনানি রেলস্টেশনে। এতে রোড রাইডারস জেড (আরআরজেড) সংগঠনের ১০০টি বাইক অংশ নেয়। র‌্যালীতে সচেতনতামূলক ব্যানার, ফ্লাগ ও প্ল্যাকার্ডসহ ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকায় ৩০ কিলোমিটারের গতি বেশি নয়, জীবন বাঁচাও, গতি কমাও ইত্যাদি স্লোগান থাকে। র‌্যালীর উদ্বোধনীতে ব্র্যাকের পরিচালক নাজমুল হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার ৩টির মধ্যে ১টি ঘটে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। এই কারণেই আমরা স্লো ডাউন স্লোগানে র‌্যালী করছি। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর প্রচার করছি। তবে ৩০ কিলোমিটার গতি সব ক্ষেত্রে নয়। বিশেষ করে স্কুল, হাসপাতাল, আবাসিক, বাজার ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তিনি আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার বড় একটি অংশ মোটরবাইক। এ ক্ষেত্রে নিজেরাও কারণ হয়, আবার অন্যরা কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করা বাইকারদেরও সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। উদ্বোধনীতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, ড্যানিশ অ্যাম্বাসেডর মিকেল হেমনিটি উইন্থার, রাজধানীর পশ্চিমের ট্রাফিক ডিসি লিটন কুমার সাহাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। সংগঠনটি বলছে, অতিরিক্ত গতি তাকেই বলি যখন কোন গাড়ি নির্দিষ্ট একটি রাস্তার নির্ধারিত গতিকে অতিক্রম করে। আর অযাচিত গতি হলো যখন যানবাহন সড়কের নির্ধারিত গতিসীমার মধ্যে থেকেও রাস্তার অবস্থা, প্ররিবেশ, প্ররিস্থিতি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিবেচনা করে গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে না। তাই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পরিবহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে গাড়ি চালানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংগঠনের নেতারা। নিসচা প্রধান ইলিয়াস কাঞ্চন এক সমাবেশে বলেছেন, গতি যখন বৃদ্ধি পায় তখন সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির প্ররিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঘন্টায় ১ কিঃ মিঃ গতি বাড়লেই ৪ থেকে-৫ ভাগ দুর্ঘটনায় প্রাণহানী বাড়ে। দেখা যাচ্ছে গতির সাথে দুর্ঘটনার একটি বিরাট সম্পর্ক। গতি বাড়লে বিশেষ করে পথচারী, সাইকেল আরোহী, মটরসাইকেল আরোহী ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেশি। একজন পরিণত বয়স্ক পথচারীর প্রাণহানী হওয়ার সম্ভাবনা ২০ ভাগ এর নীচে থাকে যদি গাড়ির গতি থাকে ৫০ কিলোমিটার থাকে। আর যখন গতি হয় ৮০ কিঃ মিঃ তখন প্রাণহানীর সম্ভাবনা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৬০ ভাগ। দেখা যাচ্ছে দুর্ঘটনায় নিহত-আহতের সংখ্যা নির্ভর করে গতির উপর। এজন্য আমরা বলছি গতিই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মূলত দায়ী। তিনি বলেন, গাড়ির গতি বেশি থাকলে গাড়ি থামানোর জন্য বেশি দুরত্বের প্রয়োজন হয়, না থাকলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। যখন গাড়ি একটি শুষ্ক রাস্তায় ৮০ কিঃ মিঃ বেগে চলে তখন গাড়ির রি-এ্যাকশন সময় ১ সেকেন্ডে ২২ মিটার এবং ব্রেক করার পর গাড়ি সম্পূর্ণ থামতে প্রায় ৫৭ মিটার অগ্রসর হয়। কিন্তু গাড়ি যখন ৫০ কিঃ মিঃ বেগে চলে তখন রি-এ্যাকশন হতে ১৪ মিটারসহ গাড়ি থামতে ২৭ মিটার অগ্রসর হয়। কাজেই গতির ওপর নির্ভর করবে গাড়ি কত দূরে গিয়ে থামবে এবং কিভাবে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। শুধুমাত্র গতিকে বাড়ানোর জন্য আরো অনেকগুলো উপাদান চালককে উৎসাহিত করে। যথা চালকের বয়স এবং লিঙ্গ। বেশিরভাগ দেশের যুবকশ্রেণীর চালকরা দ্রত গতিতে গাড়ি চালাতে পছন্দ করে যা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়াও চালক নেশাগ্রস্থ থাকলে বা রাস্তা সম্পর্কিত লে-আউটসহ চালকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা এবং আইনের প্রয়াগের গাফিলতিগুলোও উৎসাহিত করে অতি দ্রুত গাড়ি চালানোতে।
×