ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মু. মিজানুর রহমান মিজান

নো, থ্যাঙ্ক ইউ

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১০ মে ২০১৭

নো, থ্যাঙ্ক ইউ

গত সপ্তাহে টিভি চ্যানেল স্কাই নিউজের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয় একটি বিশেষ ভিডিও চিত্র। সেখানে দেখা যায় সদ্য সমাপ্ত যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনার জন্য লিফলেট বিতরণ করছেন। মজার বিষয় হলো, আমরা বাংলাদেশীরা নির্বাচনী প্রচারণা বা নির্বাচনে ভোট দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে লিফলেট প্রদান করা যে রকম দেখে অভ্যস্ত সে রকম ছিল না পরিস্থিতিটি। ১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ক্লিপটিতে দেখা যায় মিসেস মে স্কটল্যান্ডের এবারডিনশায়ারের কোন এক বাংলোর ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে বাগানে কাজ করতে থাকা দম্পতি উচ্চস্বরে বলে ওঠে- আসতে হবে না, ধন্যবাদ (ঘড়, ঃযধহশ ুড়ঁ)। প্রত্যুত্তরে প্রধানমন্ত্রী মে বলেন- থাক, আপনাদের সমস্যায় ফেলতে চাই না। পরের ঘরে এসে একটি লিফলেট দিতে সক্ষম হলেন কিন্তু তা দরজার ফাঁক দিয়ে। তিন নম্বর ঘরে গিয়েও একই অবস্থার সম্মুখীন হলেন। তবে এখানএ সফল হন তৃতীয়বারের চেষ্টায় কলিংবেল চাপা ও দরজায় কয়েকবার টোকা দেয়ার পর, শুধুমাত্র দরজার ওপাশ থেকে কাগজটি নিয়ে নিলেন, ক্যামেরায় দেখা যায়নি ভেতরে থাকা লোকটিকে। বাংলোর ৬টি ঘরের শেষের দুটিতেও সাড়া মেলেনি কোন। ভিডিওতে টেরিজা মেকে বলতে শোনা গেছে, কী এমন হয়েছে? এখানে স্কটিশ কনজারভেটিভ নেতা রুথ ডেভিডসনকেও দেখা যায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি তো আপনাকে বললাম আপনার এ কাজ আমরা করব। এই অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার পর মিসেস মে গাড়িতে ওঠার পূর্বে তাঁর স্বেচ্ছাসেবককে বলেন, আমি কি লিফলেটগুলো ফেরত দিতে পারি? পরিশেষে রুথ ও স্কাই নিউজের ক্যামেরাম্যান এবং প্রতিবেদকের সঙ্গে করমর্দন করেন। এ ক্যাম্পেইনের জন্য নিজের সহযোগীদের আগে থেকেই দিন ও ক্ষণ ঠিক করতে বলে রেখেছিলেন। মে ৪, ২০১৭ এ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলও সবাই জেনে গেছেন; ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি বহুলাংশে এগিয়ে থেকেই জয় লাভ করেছে। টেরিজা মে’র কনজারভেটিভ পার্টি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলশে প্রায় সমানভাবেই প্রভাব বিস্তার ভাল অবস্থানে থাকতে পেরেছে। ইংল্যান্ড, ওয়েলশ ও স্কটল্যান্ডে সমানতালে ভাল করেছে কনজারভেটিভ পার্টি। অতীতের চেয়ে তারা ৫৬৩টি বেশি কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছে। কনজারভেটিভের ঝুলিতে মোট কাউন্সিলরের সংখ্যা ১,৮৯৯ যেখানে জেরেমি করবিনের লেবার পার্টির সংখ্যা ১,১৫২। তৃতীয় অবস্থানে থাকা টিম ফ্যারনের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটের কাউন্সিলর পদাসন সংখ্যার হিসাবে মাত্র ৪৪১। ২০১৭ এর এই নির্বাচনে লেবার ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটকে হাতছাড়া করতে হয়েছে যথাক্রমে ৩৮২ ও ৪২টি কাউন্সিলর পদ। ইংল্যান্ডে নতুন চালু হওয়া ৬টি মেয়র পদের ৪টিই জিতে নিয়ে এর বিপরীতে বাকি প্রায় সব দলই আসন হারিয়েছে। আর কনজারভেটিভ পার্টি যে স্কটল্যান্ডকে একসময় ‘নো গো এরিয়া’ মনে করত সেখানে তারা উঠে এসেছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এখানে কনজারভেটিভ ও তাদের ইউনিওনিস্ট পেয়েছে ২৭৬টি আসন। ৪৩১টি আসন নিয়ে নিকোলা স্টারজোনের নেতৃত্বে থাকা স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি স্কটল্যান্ডে ভাল ব্যবধানে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। অবশ্য হাতছাড়া হয়েছে ৭টি আসন আর জনপ্রিয়তা বেড়েছে লীন উডের পে ইড কির্মুর। পূর্বের থেকে ৩৩টি আসন বেশি পেয়ে বর্তমানে তাদের মোট ২০২টিতে উন্নীত হয়েছে। টেরিজা মে’র দল স্কটল্যান্ডের এবারডিনশায়ারের ৭০ আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩টি আসন নিয়ে সবার উপরে রয়েছে অথচ এ এলাকাতেই তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটাররা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, কাউন্সিল ট্যাক্সের মতো স্থানীয় ইস্যুগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে থাকেন তবে এবারের নির্বাচন সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) সিদ্ধান্তকে ভোটাররা প্রাধান্য দিয়েছেন। সূত্র : স্কাই নিউজ, দ্য টেলিগ্রাফ এবং বিবিসি
×