ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে আসছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১ মে ২০১৭

জঙ্গী দমনে আসছে পুলিশের এন্টি টেররিজম  ইউনিট

আজাদ সুলায়মান ॥ অবশেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে ‘পুলিশ এন্টি টেররিজম ইউনিট’ (পিএটিইউ)। শুধু রাজধানী নয়- সারাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে আগামী বাজেটের পরপরই। এ সংক্রান্ত চূূড়ান্ত প্রস্তাব বর্তমানে আর্থিক অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। পুলিশের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল- এমন একটি বিশেষায়িত ইউনিটের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেছেন, জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশের এই ইউনিটের থাকবে বিশেষ এখতিয়ার। বর্তমানে জঙ্গী দমনে কাউন্টার এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) রাজধানীতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করলেও ঢাকার বাইরে কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদর দফতরের অনুমতিসহ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এজন্য আরও গতিশীল ও দক্ষ ইউনিটের দরকার যা- পূরণ করতে পারবে পিএটিইউ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নতুন এই ইউনিট ঢাকা থেকে দেশের যে কোন স্থানে নিজস্ব এখতিয়ার বলেই সরাসরি অভিযান চালানো, গ্রেফতার ও তদন্ত কাজ করার সুযোগ পাবে। একজন অতিরিক্ত আইজিপির অধীনে থাকবে ৫৯২ সদস্যের এই বিশেষ শাখা। এ ছাড়া থাকছে একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৮ জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা। আপাতত রাজধানীতে এর সদর দফতর রাখার প্রস্তাব করা হলেও পরবর্তীতে বিভাগীয় শহরগুলোতে একটি করে আঞ্চলিক ইউনিট থাকবে। জানা গেছে, পিএটিইউ গঠনের জন্য ইতোমধ্যে আমর্ড পুলিশের ২৫ জন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের ১৫ কর্মকর্তাকে ভারতের ন্যাশনাল সিকিরিউরিটি গার্ড সেন্টার থেকে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। তারাই এখন খাগড়াছড়িতে প্রশিক্ষকের কাজ করছেন। তাদের তত্ত্বাবধানে প্রথম ব্যাচের বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে গত ৬ এপ্রিল। দ্বিতীয় ব্যাচেরও প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গেছে। এ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তারাই যোগ দেবেন পিএটিইউতে। এছাড়া যা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অধীনে থাকা সোয়াত, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দক্ষ জনবল। এ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা জানান, পুলিশের দীর্ঘ দাবি ছিল দেশব্যাপী জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনের জন্য একটি চৌকস বাহিনীর। ২০১১ সালে পুলিশ সদর দফতর থেকে ‘পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম’ নামে একটি বিশেষ প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও সেটা নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে এই প্রস্তাব যে কতোট যুক্তি ও ন্যায়সঙ্গত ছিল তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে- দেশে গত ৭ বছর ধরে গজিয়ে ওঠা জঙ্গীর দৌরাত্ম্য দেখে। এ সময়ে জঙ্গীরা একের পর ব্লগার, ম্ক্তু চিন্তার প্রকাশক, ভিন্নধর্মী যাজক ও বিদেশী নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এমন বাস্তবতা ও প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই দ্বিতীয় দফা পিএটিইউ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদনের পর আর্থিক অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে অনুমোদনের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ বিষয়ে অষ্টম আর্মড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম খান বলেন, উন্নত বিশ্বে এ ধরনের বিশেষায়িত পুলিশ রয়েছে। আমাদের এখানে আরও ২০ বছর আগেই এ ধরনের ইউনিট চালু করা উচিত ছিল। তাহলে জঙ্গী সমস্যা এতটা ভয়াবহ হতো না। কেননা জঙ্গী দমনে অভিযান চালানোর চেয়ে গোয়েন্দাবৃত্তি ও ডাটা সংগ্রহের ওপর জোর দেয়া জরুরী। দেশব্যাপী থানা পুলিশের পক্ষে মফস্বলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাদা পোশাকে জঙ্গী কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করা বা আগাম তথ্য নিয়ে অভিযান চালানো খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু বিশেষ ইউনিট সার্বক্ষণিক জঙ্গীদের অবস্থান, পরিসংখ্যান ও কার্যক্রম নজরদারিতে রাখতে সক্ষম। সারাদেশের জঙ্গীদের সব ডাটা একটা সেন্ট্রাল সার্ভারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা গেলে তাদের দমন করা সহজ সাধ্য। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত পুলিশ এন্টি টেররিজম ইউনিটের শুরুতে বেশিরভাগ জনবলই নেয়া হবে বর্তমান কাউন্টার টেররিজম ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট থেকে। সেক্ষেত্রে নতুন ইউনিট শুরুতেই অভিজ্ঞ জনবল দিয়ে দেশব্যাপী জঙ্গী বিরোধী অভিযানসহ অন্যান্য কার্যক্রম করতে পারবে বেশ দক্ষতার সঙ্গেই।
×