ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

যুগ মানসের বিবর্তন ও উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১ মে ২০১৭

যুগ মানসের বিবর্তন ও উন্নয়ন

গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০-এর দশকে মান্না দের সেই বিখ্যাত গান- ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ আমাকে অভিভূত করেছে। এই গানটি সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে বার বার শুনেছি। পরম অতীতার্তিক বা নস্টালজিক অনুভূতি নিয়ে তখনকার দিনের তরুণদের জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি ও বিতর্কে প্রবৃত্ত হয়েছি। ওই সময়েই কয়েকবার কলকাতা গিয়ে সেই কফি হাউসে বসেছি, তরুণ-তরুণীদের কলকাকলি ভরা জীবনের উচ্ছ্বাস অবলোকন করেছি। একই দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ও আশপাশের রেস্তরাঁয় তরুণ-তরুণীদের চা ঘেরা তর্ক-বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনায় ব্রতী হয়েছি। তাদের জীবনছোঁয়া কথাগুলো শুনেছি ও বুঝতে চেষ্টা করেছি। সেই যুগের দিকে যখন ফিরে তাকাই তখন মনে হয় আমরা তরুণরা সেকালে আমাদের স্ব-স্ব উন্নয়নকে সামষ্টিকভাবে সকলের উন্নয়নের উপকরণ ও অংশ হিসেবে বিবেচনা করেছি। মান্না দের কথায় প্যারিসে প্রবাসী নিখিলেশ, ঢাকায় চলে যাওয়া মইদুল, কবরে ঘুমিয়ে থাকা গীটারিস্ট গোয়ানীস ডিসুজা, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে পাগলা গারদে বাসরত রমা রায়, দুরন্ত ক্যান্সারে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া অমল আর ঘটনাপ্রবাহে লাখপতি স্বামীর ঘরানা সুজাতাসহ সকলের খবর নিয়ে ও জেনে এবং সকলকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সেই সামষ্টিক মানস আমাদের আরাধ্য ছিল। মনে ছিল সেই বিকেলগুলো যা আমাদের সকলের জন্য সোনালি স্বপ্নের ধারক ও প্রতিফলক, অনুধাবন হয়েছিল, প্রাণখোলা আড্ডার তীক্ষèতায় শিক্ষা কেবল কতিপয়ের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠার সুযোগ নয়, বরং সকলের জন্য প্রসারিতব্য অধিকার হিসেবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যম। আমরা তখন সমাজ বিপ্লবের কথা ভেবেছি, বিপ্লবের বাণীতে সন্দীপিত হয়েছি এবং ক্ষেত্র ও সময় বিশেষে সমাজের সামষ্টিক পরিবর্তনকে আমাদের সকলের জীবনের আরোধ্য হিসেবে গ্রহণ করেছি। প্রায় ৬০ বছর পরও এই পরিণত বয়সে পারিপার্শ্বিকতার উপলব্ধির ভিত্তিতে প্রায়শই সেই নস্টালজিক অনুভূতিতে আপ্লুত হয়ে অনুক্ত কণ্ঠে অনুররণ করে আক্ষেপ করেছি- ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই আজ আর নেই।’ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দু’দশক ধরে বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে মেশার ও আলাপচারিতায় যোগ দেয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চা পানের আসরের বাইরে বনানী, গুলশান ও উত্তরায় কফি হাউসগুলোতে তারুণ্যের সন্দীপন নিয়ে জড়ো হওয়া তরুণদের আলাপচারিতায় প্রতিফলিত এ যুগের পরিবর্তিত মানসের রূপরেখা আমার কাছে স্পষ্টতর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণারত তরুণ সমাজের মধ্যে তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জীবনদর্শনের অনুরূপ পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। এখনকার তরুণ সমাজের আলাপচারিতায় ও ব্যক্তি উদ্যোগী প্রস্তাবনার সঙ্গে পরিচিতির আলোকে মনে হচ্ছে যে, গত শতাব্দীর ’৬০ ও ’৭০ দশকের সেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার দর্শন পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের সেই সময়ে আমাদের সামনে চলার দর্শন ছিল সামষ্টিক- সকলকে নিয়ে এক সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আর এখনকার তরুণ সমাজের দর্শন মূলত ব্যক্তিবৃত্তে, মেধাচর্চা ও পরিশ্রমের আলোকে ব্যক্তিগত ধারণা বা স্বপ্নসমূহকে উদ্যোগে রূপান্তরিত করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠার প্রচেষ্টা প্রযুক্তকরণ। সামষ্টিক উন্নয়নের দর্শন অনুসরণ করে গত শতাব্দীর প্রথম অংশে রুশ বিপ্লব ঘটেছে, চীনে মাওয়ের নেতৃত্বে নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছে, পূর্ব ইউরোপে সমাজ কাঠামো বিবর্তিত হয়েছে এবং তার আরও পরে কিউবা ও নিকারাগুয়ায় সাধারণ মানুষ সামষ্টিকভাবে এগিয়ে যাওয়ায় ব্রত তাৎপর্যমূলক সংখ্যায় গ্রহণ করেছে কিংবা সেই দর্শনে প্রভাবিত হয়েছে। লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনাতে গুয়েভেরা এবং পেরুতে গুজমেনের দেখানো পথ ধরে সমাজতান্ত্রিক দর্শন গঠিত ও কিয়দংশে বিস্তৃত হয়েছে। এই দর্শনের প্রান্তিক প্রতিফলন ঘটেছে পৃথিবীব্যাপী রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ বা সীমিতকরণে, উপনিবেশবাদ শেষ করার প্রক্রিয়ায় এবং ধনতান্ত্রিক দেশে সমাজতান্ত্রিক দর্শন অনুযায়ী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পরিব্যাপ্ত করে সকলের জন্যে সমভাবে ও গতিতে এবং মুক্তভাবে এগিয়ে যাওয়ার বা ওপরে উঠার সিঁড়ি উন্মুক্তকরণে। এ সকল পরিবর্তনের পটে সমকালীন বিশ্বের তরুণরা এক বিবর্তিত দর্শন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যমে ব্রতী হয়েছেন বলে প্রতিভাত হচ্ছে। সেই যুগের কফি হাউস ও চায়ের আসরের আড্ডায় ও আলোচনায় প্রতিফলিত সামনে এগিয়ে যাওয়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এখন যুগ প্রেক্ষিতে সন্দেহাতীতভাবে ভিন্নতর অবয়ব গ্রহণ করেছে। এখনকার মেধাবীদের আলোচনায় বিপ্লবের কোন কথা থাকে না, সামষ্টিক উন্নয়নের জন্যে প্রযুক্তি সামগ্রিক প্রচেষ্টা নিরর্থক বলে ধরে নেয়া হয় এবং এর বিপরীতে ব্যক্তিগত উদ্যমকে অধিকতর ফলপ্রসূ দর্শনের স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই দর্শন অনুযায়ী ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে ব্যক্তি প্রচেষ্টায় সকলের জন্য নিজ নিজ কর্মবৃত্তে সফলতার ধারক ও বাহক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ফলত ধনতান্ত্রিক দেশসমূহে সমাজতাত্ত্বিক দর্শনের অনুসরণে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়া হয়েছে এবং এ দায়িত্ব পালনের ফলশ্রুতি অনুগমন করে সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগকে সফল করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সৃষ্টি ও সংরক্ষণের দায়িত্ব আপাতত নেয়া হয়েছে। আমাদের পঞ্চম থেকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসমূহকে দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এ কথা স্পষ্টতর হয় যে, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা জাতি হিসেবে যে সামষ্টিক অগ্রগতি অর্জনের পথ অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম তা ব্যক্তি উদ্যোগের সমকালীন সফলতার নিরিখে অনেকাংশে স্তিমিত হয়ে গেছে। এ যুগের মেধায় বিকশিত তরুণরা মনে করেন, ব্যক্তির স্বাধীনতার ভিত্তিতে এবং রাষ্ট্র কর্তৃক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো পরিব্যাপ্ত করার কারণে তারা স্ব-স্ব উদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টার ফলপ্রসূতায় সকলে নিজ নিজ মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে পারেন। যথার্থ গুরুত্বসহকারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার যথা প্রয়োজন বিস্তৃতির সঙ্গে যোগাযোগ, বিদ্যুত এবং এ ধরনের সামষ্টিক অবকাঠামো সৃষ্টি ও সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার স্বাধীন সত্তায় সমৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্য সুস্পষ্টভাবে জাতির জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা সমকালীন ব্যক্তি উদ্যোগের প্রত্যয় অনুযায়ী রাষ্ট্র কর্তৃক সামাজিক সমতা, উন্নয়ন সহায়ক সেবা ও অবকাঠামিক পরিম-লের নিশ্চয়তা বিধানের দর্শন হিসেবে সর্বজন কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। ‘আমরা করব জয়’ এই সংকল্পবোধের মধ্যে এই সামুষ্টিক সহায়ক সেবা ও সুযোগের আলোকে ব্যক্তি উদ্যমভিত্তিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অনুকূলে নিরবধি আস্থার অনুগমন উদ্ভাসিত হয়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও ব্যক্তি স্বাধীনতাভিত্তিক উদ্যমের সহায়ক শক্তি হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাকৃতিক অবকাঠামোর ভূমিকা এভাবে ও মাত্রায় স্বীকৃতি পেয়েছে। এই তিন ক্ষেত্রে সমকালীন প্রায় সকল ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাদের সামষ্টিক প্রচেষ্টা প্রযুক্ত করছে। কিন্তু এর বাইরে উন্নয়নের পরিপূরক ও অনুগামী উপকরণ হিসেবে আরও তিনটি উপাদান যুগপৎভাবে প্রযুক্তকরণের দাবিদার। এক. রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যক্তি সম্পদ ও সম্পত্তি রক্ষা ও ভোগকরণের নিশ্চয়তা বিধান। এই নিশ্চয়তা প্রতিটি উদ্যোগী ব্যক্তির অনুকূলে সর্বাত্মক দৃঢ়তা, দ্রুততা এবং স্বল্প ব্যয়ে নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় কাঠামো এবং তৎপরতা প্রয়োজন। দুই. সম্পত্তি ও সম্পদভিত্তিক সকল বিবাদ ও মতানৈক্যের তেমনি দৃঢ়, দ্রুত এবং স্বল্প ব্যয়িক বলবৎকরণ ব্যক্তি উদ্যোগ প্রযুক্ত ও প্রসারিতকরণের অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত। যে সমাজ কাঠামোয় সম্পদ ও সম্পত্তিভিত্তিক বিবাদ ও মতানৈত্যের অনুরূপ সুনিশ্চিত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা না থাকে সে সমাজে ব্যক্তি উদ্যমের প্রসারণ হয় না। তিন. এই দুটি শর্ত পূরণের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের পারস্পরিক লেনদেন বিষয়ক ঠিকা সম্পর্কিত দায়-দায়িত্ব সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে এবং স্বল্প ব্যয়ে বলবৎকরণের জন্যে অনুরূপ কাঠামো সৃষ্টি ও সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। এই কাঠামো যদি ঠিকা সম্পর্কিত দায়-দায়িত্ব সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে এবং স্বল্প ব্যয়ে ব্যক্তি উদ্যোগের অনুকূলে দিতে সমর্থ না হয় তাহলে লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বাত্মকভাবে প্রসারিত হয় না, তারুণ্যের স্বাধীনসত্তার স্বপ্ন সহজে অর্জিত কিংবা বাস্তবায়িত হয় না। তর্কাতিতভাবে উপরোক্ত তিনটি উপাদানের অনুপস্থিতি কিংবা অপূর্ণাঙ্গতা ব্যক্তি উদ্যমভিত্তিক সমকালীন উন্নয়ন দর্শন যথাযথভাবে সফল করতে পারে না। নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, সমকালে আমাদের দেশে উন্নয়নের অনুকূলে এ তিনটি উপাদান বিস্তৃত ও অধিকতর ফলপ্রসূ করার পরিধি বিদ্যমান। এই তিনটি উপাদান ব্যক্তি-উদ্যমভিত্তিক উন্নয়নের অদৃশ্য শক্তি এবং সেজন্যই সম্ভবত এগুলোর সৃষ্টি ও সম্প্রসারণে এখন পর্যন্ত যথা ইপ্সিত নজর দেয়া হয়নি। তর্কাতিতভাবে এসব প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য যুগ মানসের বিবর্তনের প্রেক্ষিতে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ, স্বাধীন সত্তায় ব্যক্তি উদ্যোগকে প্রবৃদ্ধি অর্জনের সবচেয়ে ফলপ্রসূ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করার প্রক্রিয়ায় সমাজের সঞ্চয়কে যথাযথ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যক্তি উদ্যোগের অনকূলে বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চালিত করার প্রয়োজন রয়েছে। ইউরোপ, জাপান, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং সাম্প্রতিককালে চীনে এবং কিয়দংশে ভারতে দেশের সঞ্চয়কে উদ্যোগী তরুণদের অনুকূলে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সঞ্চালিত করার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিদ্যমান। আমাদের দেশে এরূপ কাঠামো এবং ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য ও বিন্যাস এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে অর্জিত বা স্থিরকৃত হয়নি। উদাহরণত এ দেশে মেয়াদী ঋণ সহায়কী ও সুলভ সমমূলধনের সরবরাহ দেয়া এবং বন্ড বাজারের ভূমিকার বিস্তৃতকরণ এবং সবচাইতে বড় কথা, ঝুঁকি মূলধনিক সমর্থন দেয়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। সমকালের শিক্ষিত ও তরুণ সমাজের ধারণা ও স্বপ্ন কার্যকর করার লক্ষ্যে এখনকার কফি হাউস ও চায়ের ক্যাফেগুলোতে মেধাবীদের উচ্চারিত ও অনুরণিত ব্যক্তি প্রচেষ্টাভিত্তিক উদ্যোগকে সহায়তাকরণের বিস্তৃত অবকাশ বিদ্যমান। আগের যুগের কফি হাউসের সেই নস্টালজিক আক্ষেপের বিকল্পে এখনকার বিনোদন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে চা ও কফি ঘিরে প্রতিদিনের মিলনমেলায় উচ্চারিত ও শ্রুত ব্যক্তিসত্তার স্বাধীন প্রসারণের প্রতিকূলে সমাজের পরিণত বয়স্কদের আক্ষেপ করার কিছু নেই। বরং শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন অনুগামী সমকালীন তারুণ্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ‘আমরা করব জয়’-এর মর্ম-নির্যাস গ্রহণ করে আমাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ সংস্কার ও বিস্তৃত করে এগিয়ে গেলেই আমরা আমাদের সমাজকে অধিকতর ও দ্রুততর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। যে তারুণ্য সৃষ্টি সুখের উল্লাসে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কথায় বার বার বাংলার মুখ দেখে বাংলার প্রতি ভালবাসাকে তার দীপ্ত সেøাগান হিসেবে ধ্বনিত করে , ‘আমার আমি’কে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাওয়ার ব্যাপ্ত আশায় দেশের সব এলাকা ও দিকের মায়াভরা পথে নিরন্তর হেঁটে চলে, কিংবা রবীন্দ্রনাথ যেমন দেশের মাটির প্রতীতী যেমনি মেধাবী দেশপ্রেমিকের দেহের সঙ্গে মিশেছে এবং প্রাণে-মনে মিলেছে বলে দেশকে বন্দনা ও বিশ্বাস করে তারুণ্যকে স্মরণ করিয়েছেন, তেমনি তাকে তার স্বাধীন সত্তার অনুকূলে সকল সহায়তা দেয়ার জন্যে এই রাষ্ট্রের তরফ থেকে, সমাজের সার্বিক সঞ্চয়কে যথার্থ বিনিয়োগে রূপান্তরিত করার পথে আমাদের এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। লেখক : সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও আমলা
×