ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে ভোগ্যপন্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে-বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:৫৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

রমজানে ভোগ্যপন্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে-বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আসন্ন রমজানে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, রমজানে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে পণ্যের দাম না বাড়িয়ে যারা বাজার স্থিতিশীলে সহযোগীতা করবেন তাদের পুরস্কৃত করবে সরকার। রমজান সামনে রেখে আগামী ১৫ মে থেকে দেশব্যাপী ২৮১১ জন ডিলারের মাধ্যমে টিসিবি পণ্যবিক্রি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এতে ঢাকা শহরে ৩৩টি, চট্টগ্রামে ১০টি, খুলনায় ৭টি, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি এবং জেলা শহরে ২টি করে ট্রাকের মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যসামগ্রী বিক্রি করবে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। এছাড়া মন্ত্রীর আশ্বাসে রমজানের শুরু থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা প্রত্যাহার করেছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। গরু ও খাসিসহ সব ধরনের মাংসের দাম কমাতে শীঘ্রই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ী, মাংস ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়লেও পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় রমজানে তা স্থিতিশীল হবে বলে আশা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, দেশে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া তথ্য অনুসারে মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পাশাপাশি দেশের মাথাপিছু আয় ১৪৬৫ ডলার, যার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। এসব কারণে দু-একটি পণ্যের সামাণ্য মূল্য বৃদ্ধি পেলেও এতে জনজীবনে খুব বেশি প্রভাব পড়ছে না। চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্যের মজুদ আছে। সুতরাং দ্রব্যমূল্য বাড়ার সম্ভবনা নাই। ওই সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন মন্ত্রী। প্রতিবেদনে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, ডাল, ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজ, রসুন আদা, হলুদ ও বিবিধ মসলার বাজারমূল্য বিশ্লেষণ করা হয়। রমজানে ভোজ্যতেলের দাম ঠিক রাখতে দুইটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম। তিনি বলেন, সরবরাহ লাইন ঠিক থাকলে দাম বাড়ে না। আমাদের চাহিদা কত, কি পরিমাণ আছে-সেটা তারা ভাল বলতে পারবেন। চাহিদা অনুসারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলে সমস্যা হবে না। খুচরা ও পাইকারি বাজারের মধ্যে পার্থক্য যেন খুব বেশি না হয়। এ বিষয়ে নজরদারি করা প্রয়োজন। এখানে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে কাজে লাগানো যেতে পারে। ট্যারিফ কমিশনের সদস্য মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির সরবরাহ লাইন ঠিক আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কোনো প্রবণতা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে চিনির দাম বাড়ার বিষয়ে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় এটা হয়েছে। ডলারের দাম ৮০ টাকায় ফেরত এলে দ্রব্যমূল্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। এ সময় তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের কথা হয়েছে। ডলারের দাম আরও কমবে। প্রত্যেকটা মালই চাহিদার চেয়ে বেশি আছে। তাহলে দাম বাড়বে কিভাবে? কিছু ব্যবসায়ীর বেশি দামে ছোলা কেনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের দাম নির্ধারণ করে দিতে চাই না। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সেটা সম্ভবও নয়। তবে আমার মনে হয়, বাজারে কেউ বেশি দামে ছোলা বিক্রি করতে পারবে না। কারণ ছোলারও অতিরিক্ত মজুদ আছে। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মাওলা বলেন, খুচরা বাজারের মূল্য যেন পাইকারি বাজারের মূল্য বিবেচনায় যৌক্তিক থাকে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ালে সেটা চাপিয়ে দেয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপর। বাজারে মনিটরিং দরকার। খুচরা ব্যবসায়ীরা যেন তাদের সঙ্গে পাকা রশিদ রাখে, যাতে মনিটরিংয়ের সময় সেটা দেখা যায়। ঢাকা চেম্বার অব কমার্সে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক ক্যাপ্টেন নুরুল হক পণ্য পরিবহনে রাস্তায় চাঁদাবাজির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাস্তঘাটে অনেক সময় চাঁদাবাজি হয়। অনেকক্ষেত্রে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এতে বাড়াবাড়ি করেন। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট ভাল না। এগুলো ঠিক করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের প্রতিনিধি উপ-মহাপরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, রমজানে সাধারণ সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি ফোর্স মোতায়েন করা হয়। আমাদের রিজার্ভ ফোর্স কাজ করে। রমজানে অতীতে কোনো সমস্যা হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে গাড়ী অন্য কারণেও আটকানো হয় না। ছেড়ে দেয়া হয়। আমাদের বাহিনীর কেউ নিয়ম বহির্ভূত কাজ করলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ রকম নির্দেশনা সদর দফতর থেকে দেয়া আছে। ১৫ মে থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু ॥ রমজান মাস সামনে রেখে বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগামী ১৫ মে থেকে খোলা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু করবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার এক পর্যালোচনা সভায় টিসিবির চেয়ারম্যান আবু সালেহ মো. গোলাম আম্বিয়া এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগামী ২৭ মে থেকে রোজা শুরু হবে। আমরা আশা করছি, ১৫ মে থেকে আমরা মার্কেটিং শুরু করবো। রোজা সামনে রেখে প্রতিবছর পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা, ডাল, তেল ও খেজুর বিক্রি করে থাকে টিসিবি। গত বছরের মতোই এবারও ২ হাজার ৮১১ জন পরিবেশক টিসিবির পণ্য বিক্রি করবেন, সারা দেশে মোট ১৮৫টি ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হবে। হুমকি থেকে সরলেন মাংস ব্যবসায়ীরা ॥ পশুর হাটে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে রমজানের শুরু থেকে কর্মবিরতির হুমকি থেকে সরে এসেছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। রমজানে মাংস বিক্রি বন্ধের হুমকি ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন করে কর্মবিরতি ঘোষণার দেড় ঘণ্টার মাথায় রবিবার দুপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের তা তুৃলে নেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি বলেন, এই সরকার আমাদের, এই সরকারের সুনাম রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। মন্ত্রীর সামনে কথা দিলাম, কোন ধর্মঘটে আমরা যাব না। আমার নেতা যদি চায়, সমস্যা সমাধান হতে এক মিনিটও লাগবে না। সচিবালয়ে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় যোগ দেন মাংস ব্যবসায়ীরা। গাবতলীর পশুর হাটের খাজনা নিয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরে রবিউল বলেন, একটি মাত্র স্থায়ী গরুর হাট হওয়ায় আমরা সেখানে যেতে বাধ্য হই। অত্যাচারের এমন কোনো মাত্রা নেই যা আমাদের উপর হয়নি। আপনার কাছে অনুরোধ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একটি গরুর হাট দিন, সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যাবে। এর আগে সকালে রিপোর্টার্স ইউনিটির সংবাদ সম্মেলনে রবিউল বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে ১ রমজান থেকে সারা দেশের মাংস ব্যবসায়ীরা কর্মবিরতিতে যাবে। বাংলাদেশ এখন ফরমালিনমুক্ত ॥ বাংলাদেশে এখন ফল, শাক-সবজি কিংবা মাছ কোনোটি সংরক্ষেণে ফরমালিন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। রমজান উপলক্ষে রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা সভায় তিনি এই দাবি করেন। বাংলাদেশে পচনশীল খাদ্যপণ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় ফরমালিন ব্যবহার গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় রয়েছে। এটা ঠৈকাতে বাজারে বাজারে অভিযানও চলে। ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষায় বিভিন্ন বাজারে যন্ত্রও সরবরাহ করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রবিবারের সভায় ওই যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে এক ব্যবসায়ীর প্রশ্ন তোলার পর বাণিজ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য আসে। ঢাকার মিরপুরের শাহ আলী সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে একটা ফরমালিন মেশিন দেয়া হয়েছিল। এটা এখন কোনো কাজে আসে না। এটা কেন দিয়েছে? কী কারণে দিয়েছে? কোনো ফল পাইনি। ভোক্তাদেরকে ফল-সবজি বিষমুক্তভাবে খাওয়াতে পারছেন না স্বীকার করে তিনি এবিষয়ে সরকারের দৃষ্টি প্রত্যাশা করেন। ওই সময় মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আপনি যেটা বললেন, এটা আমাদের জানা নাই। তবে ফরমালিন এখন আর ব্যবহার হয় না। ফরমালিনের অপব্যবহার রোধ করতে ২০১৫ সালে ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করাহয়। ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন আমরা যখন পাস করলাম, এরপর আর কেউ ফরমালিন আমদানি করতে পারে না। শিল্প-কলকারখানায় যে ফরমালিন লাগে, সেটা আমার অনুমতি লাগে।
×