ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য যা যা করা লাগে আমরা করব: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য যা যা করা লাগে আমরা করব: প্রধানমন্ত্রী

এমরানুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ ॥ অকাল বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর ক্ষতিগ্রস্ত হাওড় এলাকা পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূন্ন। হাওড়ের ফসলের ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু তাতে দেশের খাদ্যের ওপর প্রভাব পড়বে না। যত খাবার লাগবে, আমরা দিতে পারব। প্রয়োজনে আমদানি করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য যা যা করা লাগে আমরা করব। সরকার বিনামূল্যে যে খাদ্য বিতরণ চালু করেছে সেটা অব্যাহত থাকবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন না এখানে আকাল দূর হচ্ছে। হাওড় অঞ্চলের একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না। প্রয়োজনে ভিজিএফের সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভিজিএফ, ভিজিডি, ওএমএস, ১০ টাকা কেজির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি উপজেলা পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসককে। হাওড়ের বোরো ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণে ওঠা অনিয়ম দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণে কারো গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সরকার সচেতন রয়েছে।’ রবিবার সকাল ১০ টায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের পূর্বে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শাল্লা উপজেলা সদরের শাহেদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করেন। পরে স্পিডবোটে করে ক্ষতিগ্রস্ত হাওড় পরিদর্শন করেন। এর আগে তিনি হেলিকপ্টারে করে খুব কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হাওড় এলাকা পর্যবেক্ষন করেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘হাওড়ে গো-খাদ্যের অভাব রয়েছে, সেটাও দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ সহায়তা এবং আগামী মৌসুমের জন্য বিনামূল্যে বীজ সার দেওয়া হবে। মৎস্যজীবী ও কৃষকদের ঋণের সুদের হার অর্ধেক করা হবে। মাছের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পানি একটু নামলেই এখানে মাছে পোনা ছেড়ে অবমুক্ত করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওড়ের বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য তিন হাজার ৫২৪ মেট্রিকটন চাল এবং নগদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রতি পরিবারকে মাসে ৫০০ টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। শাল্লার কৃষক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী হাওড়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত ও সুদ মওকুফের আহ্বান জানান। হাওড়ে বিকল্প আয়ের উৎস বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী হাওড় এলাকার মানুষকে শুধু ফসলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে মাছ, গবাদীপশু ও হাঁস-মুরগি পালন বাড়াতে পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওড়ের খালগুলো যেন বেশি পানি নিষ্কাশন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। হাওড়কে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রকৃতিকে কাজে লাগাতে হবে। প্রাকৃতি দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আমাদের সমনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। হাওড়ের সম্ভাবনাকেও কাজে লাগাতে হবে। বন্যায় ফসলহানীর সুযোগ নিয়ে বাজারে খাদ্যশষ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি, খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম এমপি, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি, দিরাই শাল্লার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা প্রমুখ। প্রসঙ্গত, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি এসে অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জসহ দেশের হাওড়াঞ্চলে বাঁধ ভেঙে একে একে তলিয়ে যেতে থাকে হাওড়ের আধপাকা বোরা ধান। এতে বিস্তীর্ণ হাওড়ের লাখ বোরো চাষী মহাবিপাকে পড়েন। সুনামগঞ্জে এবার প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরা ধান আবাদ করা হয়। গত ১৭ ও ১৮ এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়ের মানুষকে দেখতে আসেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুর হামিদ। এসময় দেয়া তথ্যে জেলা প্রশাসন জানায়, সুনামগঞ্জের হাওড়ে আবাদকৃত ফসলের ৮২ ভাগ পানির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যাওয়ার পর জেলার আরও বড় দুটি হাওড়ের ধানও তলিয়েছে। জেলায় যে ৩৭টি বড় ধানী হাওড় ছিল ইতোমধ্যে এর সবগুলোর ফসলই পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
×