ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১২ জেলায় হচ্ছে একটি করে আইটি হাইটেক পার্ক ॥ কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

১২ জেলায় হচ্ছে একটি করে আইটি হাইটেক পার্ক ॥ কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

আনোয়ার রোজেন ॥ দেশে আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) ব্যবসার বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য স্থানীয় ও বিদেশী কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য দেশের ১২টি জেলায় একটি করে আইটি-হাইটেকপার্ক নির্মাণ করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। প্রাথমিকভাবে ভারতের দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা (১৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার) এ সংক্রান্ত প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আইটি ও আইটিইএস (ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবলড সার্ভিসেস) শিল্প পরিচালনার জন্য আইটি পার্ক স্থাপন করা প্রয়োজন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব আইটি পার্কের অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আইটি, আইটিএস এবং বিজনেস প্রোসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) হাব তৈরি হবে এবং দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাইটেকপার্ক। পার্কের ৩৫৫ একর জমির মধ্যে ২৩২ একর ৫টি ব্লকে ভাগ করে বাংলাদেশ টেকনোসিটিকে ৩ নম্বর ব্লকে ৪০ একর, সামিট টেকনোপলিসকে ২ নম্বর ব্লকে ৬২ একর এবং ৫ নম্বর ব্লকে ২৯ একর জমিতে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ দেয়া হয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান মোট ২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে। এসব ব্লকে বর্তমানে মাল্টিটেনেন্ট বিল্ডিং, শিল্প এলাকা, কনভেনশন সেন্টার, হোটেল, হেলিপ্যাড, শিল্প এলাকা, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ইত্যাদি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। পার্কটি নির্মিত হলে এখানে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কের নির্মাণকাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সিলেট ইলেকট্রনিক্স সিটি এবং রাজশাহী বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। দেশে বর্তমানে ১ হাজারের অধিক আইটি সংশ্লিষ্ট কোম্পানি রয়েছে যেখানে ১২ হাজারেরও বেশি আইসিটি প্রফেশনাল কাজ করছেন। এসব কোম্পানি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) আয় করেছে। সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ৫০০ কোটি ডলার রফতানি আয় করার টার্গেট ঠিক করেছে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম আরও বেগবান করতে বিভাগীয় শহর এবং প্রতিটি জেলায় একটি করে হাইটেকপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আইসিটি বিভাগ আরও ১২টি জেলায় হাইটেকপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য প্রায় ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা দেবে ইন্ডিয়ান ক্রেডিট লাইন, বাকি প্রায় ২৫২ কোটি টাকার যোগান দেয়া হবে সরকারী খাত থেকে। নতুন যে সব জেলায় হচ্ছে আইটি-হাইটেকপার্ক সূত্র জানায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, খুলনার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), বরিশাল সদর, রংপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, কুমিল্লার লালমাই, গোপালগঞ্জ সদর, কক্সবাজারের রামু, জামালপুর সদর এবং নাটোরের সিংড়া উপজেলায় একটি করে আইটি-হাইটেকপার্ক নির্মাণে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আইসিটি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ হাইটেকপার্ক কর্তৃপক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশ হাইটেকপার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুশান্ত কুমার সাহা এ বিষয়ে বলেন, ১২টি হাইটেকপার্ক নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এসব হাইটেকপার্ক নির্মাণের জন্য জায়গা পাওয়া নিয়ে যে জটিলতা ছিল সেটিও কেটে গেছে। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাইটেকপার্ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। গড়ে উঠবে কলসেন্টার, টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। যেখানে তৈরি হবে বিশ্বমানের পণ্য। দেশের নির্মিত সফটওয়্যার দিয়েই চলবে ব্যাংক, বীমা, কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প বিষয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমরা যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও ডিজিটাল ইকোনমি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি এবং আইসিটি খাতে ৫০০ কোটি ডলার রফতানি আয় ও ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি; এ প্রকল্প সেসব উদ্যোগের অন্যতম ভিত্তি।
×