ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ানোর পাঁয়তারা

রমজানের আগেই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে চালের দাম

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

রমজানের আগেই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে চালের দাম

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রমজান এলেই নড়েচড়ে ওঠে ভোগ্যপণ্যের বাজার। অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিতে চলে নানা কারসাজি। কখনওবা ডলারের মূল্য বৃদ্ধি দেখিয়ে আবার কখনও আমদানি এবং সরবরাহ কমের অজুহাতে বাড়িয়ে দেয়া হয় নিত্যপণ্যের দাম। এবারও সে আলামত দেখা যাচ্ছে খুচরা বাজারে। তবে দেশের বৃহত্তম পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ঠিকমতো তদারকি এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে রোজায় পণ্যের সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। রমজানের আগেই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে চালের দাম। ভোক্তাদের প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে চাল। অন্যান্য পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে রোজার পণ্য হিসেবে বিবেচিত ছোলা, খেসারি, মসুর, চিনি, দুধ, খেজুর, তেল, পেঁয়াজ এবং রসুন যেন মূল্যবৃদ্ধির অপেক্ষায় রয়েছে। এ পণ্যগুলোর মূল্য এখনও অপরিবর্তিত থাকলেও উল্লম্ফন ঘটতে পারে, এমনই আশঙ্কা ক্রেতাসাধারণের। প্রতি বছর রোজার পূর্বে রাষ্ট্রীয় সংস্থা টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) প্রস্তুতি ও তৎপরতা দেখা গেলেও এবার তা এখনও দৃশ্যমান নয়। বেসরকারী খাতকে একচ্ছত্র কারবারের সুযোগ না দিতে টিসিবিকে সক্রিয় রাখার দাবি দীর্ঘদিনের। তবে শুধুমাত্র রোজার সময় নামকাওয়াস্তে কিছু তৎপরতা থাকলেও সারাবছরই নিষ্ক্রিয় থাকে সংস্থাটি। দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ। অনেকের মতে, এখান থেকেই ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়। সেই খাতুনগঞ্জে এখন দেদার বিক্রি। প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। এখান থেকে পাইকারি দামে কেনা পণ্য চলে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। খুচরা বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কিছুটা প্রবণতা পরিলক্ষিত হলেও পাইকারি বাজারে তা বাড়েনি বলে দাবি করছেন পাইকাররা। খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জামাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। রোজায় যা প্রয়োজন তারচেয়েও বেশি আছে। সুতরাং ঠিকমতো মনিটরিং থাকলে দাম বাড়ার কোনই আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলো বাজার নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখলে এবারের রোজায় কোন সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। এদিকে, হঠাৎ ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা বিরাজ করছে। হঠাৎ করে ডলারের মূল্য চড়া হওয়ায় তা মূল্যকে প্রভাবিত করা অস্বাভাবিক নয়। তবে ব্যবসায়ী নেতারাই বলছেন, বর্তমানে যে পণ্যগুলোর মজুদ রয়েছে তা ডলারের মূল্যবৃদ্ধির আগে আমদানি করা। সুতরাং মূল্য বাড়িয়ে রাখার চেষ্টা যদি করা হয় তা হবে অনৈতিক এবং অসততা। এ ব্যাপারেও প্রশাসনের নজরদারি থাকা প্রয়োজন। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চলতি মাসের শুরুতে ছোলার দাম মণপ্রতি ২শ’ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। তবে তা আবার পূর্বের দামে ফিরে গেছে। সবচেয়ে ভালমানের অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ২ হাজার ৭৫০ টাকায় এবং ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চিনি ২ হাজার ৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন মানের মুগডাল প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা, খেসারি প্রতি কেজি ৬১ থেকে ৬৩ টাকা, মোটর ৩২ থেকে ৩৩ টাকা এবং দেশী মসুর ডাল ১০৩ থেকে ১১২ টাকা। আমদানি করা অস্ট্রেলিয়ান এবং কানাডিয়ান মসুরের দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এ মূল্যকে স্থিতিশীল বলছেন ব্যবসায়ীরা। তবে খুচরা পর্যায়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা। চালের মূল্য বেশ ক’মাস ধরেই উর্ধমুখী। প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। এতে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বলেন, চালের দাম বৃদ্ধিরও কোন কারণ ছিল না। কারণ চালের মজুদও যথেষ্ট। এর জন্য তিনি দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর মোকামগুলোকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, হঠাৎ হাওড়াঞ্চলে বন্যা এবং বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ায় মিল মালিকরা ভাবছে খাদ্য সঙ্কট হতে পারে। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় তারা চালের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
×