ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফে পানের বরজ থেকে ৩৬ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

টেকনাফে পানের বরজ থেকে ৩৬ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও মিয়ানমারকেন্দ্রিক গঠিত সিন্ডিকেট প্রধান রোহিঙ্গা জিয়াবুলকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইয়াবার গডফাদার এ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ত্র ট্রেনিং, বেআইনী কর্মকা-ে ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত করে রোহিঙ্গা যুবকদের মারমুখী করে গড়ে তুলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান এনে এবং মিয়ানমারে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের (আরএসও, আল-এ্যাকিন) হাতে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে এ রোহিঙ্গা নেতা। ইয়াবার মহাজন নামে পরিচিত রোহিঙ্গা জিয়াবুল অবস্থান করে থাকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে ভাড়া বাসায়। পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে ঐ ভাড়াবাসায় জিয়াবুলকে গ্রেফতারকল্পে অভিযান চালিয়েছে। শুক্রবার সকালে টেকনাফে পানের বরজ থেকে উদ্ধার হওয়া সাড়ে ৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ইয়াবার চালানটি রোহিঙ্গা জিয়াবুলের বলে জানা গেছে। টেকনাফে পানের বরজ থেকে সাড়ে ৩৬ কোটি টাকা মূল্যের চারটি বস্তায় ভর্তি ১২ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। শুক্রবার সকাল ১০টায় টেকনাফ সাবরাং কাটাবুনিয়া-খুরেরমুখ-সংলগ্ন একটি পানের বরজ থেকে এসব ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে বিজিবি। জানা গেছে, ইয়াবা সম্রাট মিয়ানমারের বাসিন্দা জিয়াবুল টেকনাফ ও উখিয়ার দুইটি শরণার্থী ক্যাম্প ও বস্তি থেকে অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গা যুবক-মহিলাকে ইয়াবা বহনের কাজে নিয়োজিত রেখেছে। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ মঙ্গলবার রাতে মিয়ানমারের রাইমনখালী থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান নিয়ে আসার খবর পেয়ে পাহাড়ের পাদদেশে ওৎপেতে থাকে। তুমব্রু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসার পথে ইয়াবার চালান বহনকারী নুরুল ইসলাম নামক মিয়ানমারের এক যুবককে আটক করেছে। রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম পুলিশকে জানায়, ইয়াবাগুলো কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা জিয়াবুল হকের। কুতুপালং বাজারে একটি বিল্ডিংয়ের ওপর তলায় স্ত্রীসহ ভাড়া বাসায় থাকে। তবে তার স্ত্রী হালিমা রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের (এমআরসি নং- ২০৩৫২, ব্লক- ডি, শেড নং- ১৯, রুম নং- ৪/৫) এর শরণার্থী। দুর্দান্ত এ রোহিঙ্গা জিয়াবুলের পিতার নাম শামশুল আলম হলেও বিভিন্ন স্থানে মোঃ হাকিম, আবদুল হাকিম, বলাইয়াসহ একাধিক ছদ্ম নাম ব্যবহার করে থাকে। রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রেশন কার্ডে পিতার নাম লিপিবদ্ধ করেছে দিল মোহাম্মদ, মাতার নাম নুর আয়েশা। ইয়াবার মহাজন জিয়াবুল শহর-বন্দরে যাওয়ার সময় চেহরায় দাড়ি রাখে। ওই জিয়াবুল এক সময় আরএসও ও একাধিক রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের পক্ষে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সফর করে রোহিঙ্গাদের নামে অর্থ সংগ্রহ করত। বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে এদেশে এসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে মরণ ঘাতক ইয়াবা ব্যবসা চালু করে। ক্যাম্পে তার রয়েছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে দাপিয়ে বেড়ায় রোহিঙ্গা জিয়াবুল। রাত গভীরেও ব্যবহার করে মোটরসাইকেল। জিয়াবুলের ইয়াবার চালান শুধু সড়ক পথে নয়, সাগর পথেও বড় বড় চালান সরবরাহ হয়ে থাকে ঢাকা-চট্টগ্রামে। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবার চালান ঢোকার সময় ঘুমধুম, তুমব্রু ও কুতুপালং এলাকার ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যরা মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে প্রশাসনের টহল দলের গতিবিধি নজরদারি লক্ষ্য করে। ইয়াবার চালানসহ আটক নুরুল ইসলাম ও জিয়াবুলকে আসামি করে (পলাতক) নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা (নং-০৫/১৭) রুজু করা হয়। সূত্র জানায়, জিয়াবুল দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র বেচাকেনা, জঙ্গীপনা, রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণসহ ইয়াবা সরবরাহে তৎপর রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা আটকের মামলা হলেও থেমে নেই তার ওসব অপকর্ম। জিয়াবুল কিশোর বয়সে এপারে পাড়ি দেয়। উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা-মুুছনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে জিয়াবুলের আত্মীয়। এদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে না ফেরার পক্ষে জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গা যুবক জিয়াবুল হক। বহির্বিশ্বে বসবাসকৃত রোহিঙ্গা ও আরএসওর সমর্থিত এনজিওদের নিকট থেকে এখনও অর্থ আসে এ জিয়াবুলের মাধ্যমে। বিদেশ গমনের সময় বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকে। আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে জিয়াবুল রোহিঙ্গা নেতা বনে যাওয়ার পর তার সঙ্গে একাধিক জঙ্গী সংগঠনের সখ্য গড়ে উঠে। মিয়ানমার সরকার বিরোধী বলয় সৃষ্টি করতে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক গড়ে তুলে শতাধিক রোহিঙ্গার সমন্বয়ে ইয়াবা সিন্ডিকেট। মিয়ানমার ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ইয়াবার বিশাল চালান মজুদ করে এদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে জিয়াবুল। খুব অল্প সময়ে কুতুপালংয়ের প্রভাবশালী চক্রের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে ইয়াবা ব্যবসার মহাজন নাম ধারণ করে। কুতুপালং রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোঃ শামশুদ্দোজা জানান, জিয়াবুল নামক একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারে। ইয়াবা সংক্রান্ত জড়িত কে চিহ্নিত নেই। তবে দেশদ্রোহী কাজে কোন রোহিঙ্গা জড়িত থাকলে আইনী প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×