ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড় কিভাবে রক্ষা করা যায় তা খুঁজে বের করতে হবে ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

হাওড় কিভাবে রক্ষা করা যায় তা খুঁজে বের করতে হবে ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও এর টার্গেটগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম মূল্যায়নে উপাত্ত ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। এসডিজি পরিমাপের ৬৩টি সূচকের উপাত্ত বাংলাদেশে একেবারেই নেই। বর্তমানে ৭০টি সূচকের উপাত্ত রয়েছে এবং ১০৮টি সূচকের উপাত্ত আংশিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এসডিজির ১৭টি বৈশ্বিক অভীষ্টের অধীনে ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে প্রয়োজন ২৩০টি সূচকের। সূচকের এই ঘাটতি পূরণে তথ্য সংগ্রহের তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাওড়ের উন্নয়নে সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান ও ইজারা প্রথা বাতিল এবং ব্যাংকিং খাতে জনসম্পৃক্ততা আগের চেয়ে বাড়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে উপাত্ত ঘাটতি বিশ্লেষণ : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’, ‘ব্যাংকিং এ্যাটলাস’ ও ‘হাওড়াঞ্চলের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন’ শীর্ষক তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ ও ইউএনডিপির সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল এ্যান্ড ইনক্লুসিভ প্ল্যানিং (এসএসআইপি) প্রকল্প যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে উপাত্ত ঘাটতি বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট উপাত্তের ২৯ ভাগ পাওয়া গেছে, ৪৫ ভাগ উপাত্ত আংশিকভাবে বিদ্যমান যেগুলোর সংযোজন এবং পরিমার্জন প্রয়োজন। বাকি ২৬ ভাগ উপাত্ত একেবারেই নেই। ব্যাংকিং এ্যাটলাস প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০-২০১৫ সালের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে যা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমে ব্যাপক উন্নতির বার্তা বহন করে। হাওড়াঞ্চলের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নীতিমালা ঘাটতি বিশ্লেষণ শীর্ষক প্রতিবেদনে হাওড় এলাকার উন্নয়নে সরকারী সংস্থাসমূহের কাজের মধ্যে সুসমন্বয় ও বেসরকারী খাতের উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৪০ ফুট বাঁধ কেন, হিমালয় সমান বাঁধ দিলেও হাওড়কে বাঁচানো যাবে না। হাওড়কে কিভাবে রক্ষা করা যায় তা খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য এ বিষয়ে দেশী-বিদেশী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। তিনি বলেন, তবে আমাদের এক জায়গায় হাত পা বাঁধা, তা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। যদিও আমরা এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নই। হাওড়ের এবারের বন্যা শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। এপ্রিল মাসে লন্ডনে বরফ পড়া, ভারত, ইরানসহ অনেক দেশের যেসব জায়গায় বৃষ্টি হয় না সেখানে বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলে মনে করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, হাওড়ের পুরো এলাকার সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব আছে। সবাইকে সম্পৃক্ত করা না গেলে সুফল পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে পরিকল্পনা দরকার। তিনি বলেন, প্রচলিত আছে যে অঞ্চলে সম্পদ বেশি, ওই অঞ্চলের মানুষ সে সম্পদ ভোগ করতে পারে না। হাওড়ের সম্পদ যেন সেখানকার মানুষের জন্য অভিশাপ না হয়। হাওড়ের সম্পদ সঠিক ব্যবহার করে সবাই সমান সুবিধা ভোগ করতে পারে সেজন্য সমন্বিত পরিকল্পনার সঙ্গে হাওড়াঞ্চলের মানুষদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে ব্যাংকিং সুবিধা সম্প্রসারণ হয়েছে। কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও হাওড় বিশেষজ্ঞ ড. হামিদুল হক বলেন, হাওড় রক্ষার জন্য প্রথমে হাওড় ইজারা দান পদ্ধতি বাতিল করা প্রয়োজন। বর্ষাবাদে বাকি সময় হাওড়াঅঞ্চলে ৪০ ভাগ জলমগ্ন থাকে। এই সময়টা মাছ আহরণের উপযোগী। কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে ইজারা দেয়ার ফলে হাওড়ের সাধারণ মানুষ মাছ আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বাঁধ ভাঙ্গার জন্য প্রকৌশলীদের দায়ী করে লাভ নেই। হাওড়ের বাঁধগুলো তৈরি করা হয় পাহাড়ী স্বাভাবিক ঢলে টিকে থাকার জন্য। কিন্তু সম্প্রতি যে ঢল নেমেছে তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা বাঁধগুলোর আদৌ নেই। তবে হাওড় মেরামতের জন্য সিভিল প্রশাসনের সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্র রয়েছে। সময় মতো বাঁধ মেরামত করলে ক্ষয়-ক্ষতি কম হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলমের সভাপতিতে অনুষ্ঠিত এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক সৈয়দ মুনির খসরু, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরী। জিইডি প্রধান ও এসএসআইপি প্রকল্প পরিচালক নকিব বিন মাহবুব অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। উপাত্ত ঘাটতি সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তথ্য আমাদের আছে, কিন্তু টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), লক্ষ্যমাত্রা ও এর সূচকসমূহে নতুন অনেক বিভাজিত উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করার জন্য বলেছি এবং অতি দ্রুতই আংশিকভাবে বিদ্যমান এবং যেসব তথ্য একেবারেই নেই সেগুলো পাব। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনসমূহের ফলাফল উপস্থাপন করেন ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এই উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা এখন জানতে পেরেছি, আমাদের কী ধরনের উপাত্ত আছে এবং সূচকের বিপরীতে আরও কী ধরনের উপাত্ত প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/শাখার সহায়তায় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নেতৃত্বে আমরা অতিদ্রুত অবশিষ্ট উপাত্তসমূহ সংগ্রহে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব।
×