ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ দিন পর মায়ের কোলে ফিরল শিশু সুমাইয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

২৪ দিন পর মায়ের কোলে ফিরল শিশু সুমাইয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চব্বিশ দিন পর মায়ের কোলে ফিরল অপহৃত পাঁচ বছরের শিশু সুমাইয়া। উদ্ধারের পর থেকে পিতামাতার কাছে ফিরতে যেন তর সইছিল না শিশুটির। তাইতো পিতামাতাকে দেখামাত্র তাদের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে আনন্দে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শিশুটি। বলে, মা তোমাকে অনেক খুঁজেছি। পিতামাতাও সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ যেন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। এ সময় উপস্থিত পুলিশ, সাংবাদিকসহ সবাই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। অনেকে চোখের জল আর ধরে রাখতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধারকৃত শিশুটিকে পিতামাতার কাছে হস্তান্তরকালে এমন দৃশ্যেরই অবতারণা হয়। সেখানে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার ইব্রাহিম খান জানান, বুধবার গভীর রাতে ঢাকার জুরাইনের একটি বাসা থেকে সুমাইয়াকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় অপহরণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সুমাইয়াদের এক সময়ের প্রতিবেশী সাবিনা আক্তার বৃষ্টি ও তার পিতা রয়েছেন। সুমাইয়ার পরিবার জানায়, তারা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানাধীন বড়গ্রাম নামের এলাকায় বসবাস করে। প্রতিদিনের মতো গত ৩ এপ্রিল বিকেল পাঁচটার দিকে বাসার সামনেই খেলছিল সুমাইয়া। খেলার এক ফাঁকে সে নিখোঁজ হয়। কোন ক্রমেই তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সুমাইয়ার পিতা জাকির হোসেন স্থানীয় একটি স্টিল মিল কারখানার কর্মী। তিনি ওইদিনই কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেই সঙ্গে পুরো এলাকায় মাইকিং করেন। কিন্তু হদিস মিলছিল না সুমাইয়ার। এমন অবস্থায় পিতামাতা এক প্রকার নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন। সন্তানের খুঁজে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার ইব্রাহিম খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, সুমাইয়াদের বাসায় তিন বাসা পরেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার মোহাম্মদ হোসেনের বাড়ি। কমিশনারের বাড়ির সামনে থাকা সিসি ক্যামেরায় সুমাইয়াকে অপহরণ করার বিষয়টি ধরা পড়ে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কালো বোরকা পরিহিত এক নারী সুমাইয়াকে নিয়ে যাচ্ছে। সেই ফুটেজের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে গ্রেফতার করা হয় অপহরণকারীদের। আর গ্রেফতারকৃতদের তথ্য মতে, উদ্ধার করা হয় সুমাইয়াকে। সংবাদ সম্মেলনে কাছাকাছি বসে ছিল সুমাইয়া আর তার পিতামাতা। একদিকে চলছিল সংবাদ সম্মেলন, আরেক দিকে চলছিল আবেগঘন মুহূর্ত। সুমাইয়ার যেন তর সইছিল না পিতামাতার কোলে যাওয়ার জন্য। আর পিতামাতার সঙ্গে বাড়ি ফেরার জন্য। আর পিতামাতাও অধীর আগ্রহে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিতে ব্যাকুল হয়ে ছিলেন। সুমাইয়াকে পিতামাতার কাছে দেয়া হয়। শিশুটি এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পিতামাতা কাছে চলে যায়। গলা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, তোমাকে অনেক খুঁজেছি মা। বৃষ্টি তাকে অনেক মেরেছে। বৃষ্টি তাকে মা বলে ডাকার জন্য অনেক জোর করেছে। না ডাকলে মারধর করেছে। মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা। থেমে যায় সব আওয়াজ। পিতামাতা শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকেন। এ সময় উপস্থিত পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্যরা আর চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না। কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোঃ শাহীন ফকির জানান, দ্বিতীয় দফায় সুমাইয়াকে পিতামাতার কাছে দেয়ার আগে বৃহস্পতিবার ভোরেই উদ্ধারের পর পরই শিশুকে পিতামাতার কাছে দেয়া হয়েছিল। তখন পিতামাতা আর সুমাইয়ার গগণবিদারী আর্তনাদ করছিল। যা ভোলার নয়। ২৪ দিন পর সন্তানকে কাছে পেয়ে পিতামাতা কি করবে কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তিনি আরও জানান, অপহরণের মূল আসামি সাবিনা আক্তার বৃষ্টি ও তার পিতা সিরাজ মিয়া। অন্য তিনজন এ দুজনের সহযোগী। অপহরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে সুমাইয়া বলে, বৃষ্টি আগেও তাদের বাসায় গেছে। প্রায়ই তাকে বাসায় নিয়ে যেতে চাইতো। ঘটনার দিন বিকেলে বৃষ্টি তাদের বাসায় যায়। মা ঘরে ছিল। আমাকে জোর করে হাত ধরে রাস্তায় নিয়ে যায়। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মুখ চেপে ধরায় আর চিৎকার দিতে পারিনি। এরপর রিক্সায় মুখ চেপে ধরে তুলেই আমাকে নিয়ে যায়। সুমাইয়ার মা মুন্নি বেগম জানান, ওই দিন বৃষ্টি তাদের বাসায় যায়। বাড়িওয়ালার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে বলে জানায়। খানিক পরে দেখি বৃষ্টি ও তার মেয়ে নেই। অপহরণের বিষয়ে বৃষ্টি কোন কিছুই বলেনি। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান জানান, কি কারণে বৃষ্টি সুমাইয়াকে অপহরণ করেছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বৃষ্টি এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। তবে বৃষ্টির ভারতে যাতায়াত রয়েছে। বৃষ্টি পাচারকারী দলের সদস্য কি না, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
×