ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহেশখালীকে দেশের প্রথম ডিজিটাল আইল্যান্ড ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

মহেশখালীকে দেশের প্রথম ডিজিটাল আইল্যান্ড ঘোষণা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ হিসেবে ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ ঘোষণার মাধ্যমে মহেশখালীর অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ সুফল ভোগ করতে সক্ষম হবে। মহেশখালীকে ডিজিটাল আইল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী দ্বীপের চার লাখ বাসিন্দার জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মহেশখালী, যা চিরদিন অবহেলিত ছিল, আজ এই ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে মূল ভূখ-ের সঙ্গে এবং বিশ্বব্যাপী এই মহেশখালীর একটি সংযোগ স্থাপিত হয়ে গেল। তিনি বলেন, এই যে সুযোগটা আজ সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে- এটা শুধু মহেশখালী নয়, আরও যেসব বিচ্ছিন্ন এলাকা আছে, সেখানেও আমরা এই ডিজিটাল পদ্ধতিটা চালু করে দেব। সেটাও আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। আর মহাশূন্যে আমরা যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করব (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট) সেটা উৎক্ষেপণ হয়ে গেলে আরও সুবিধা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ আর নিজেদের কখনও অবহেলিত ভাববে না। তাছাড়া মহেশখালীতে আমরা আরও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কাজেই এই অঞ্চলের সার্বিকভাবে উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মহেশখালীবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই যে, এই অঞ্চলের উন্নয়নে সব রকমের প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। তাতে ওই অঞ্চলের মানুষ আরও উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ পাবে, চিকিৎসার সুযোগ পাবে, তাদের কর্মসংস্থানের সুবিধা হবে। আর ওই দ্বীপে বসেই সারাবিশ্ব তাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে। সারাবিশ্বকে জানতে পারবে। দেশে-বিদেশে যোগাযোগটা রাখতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি স্বাধীন জাতি। এই স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। তিনি আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা, সেভাবেই গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। তিনি বলেন, সে অর্থে আমাদের এই উদ্যোগ মহেশখালীবাসীর সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলেই আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার সুযোগ থেকে এই দুর্গম এলাকার লোকেরা যেন বঞ্চিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যায় অতর্কিতে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও তারা যেন সতর্ক থাকতে পারে- সেজন্যও এই ডিজিটালাইজেশন। তিনি বলেন, হাইস্পিড ইন্টারনেট সুবিধা আমরা যে মহেশখালীর মতো একটি দ্বীপে করতে পারছি সেজন্য আজ আমি সত্যই আনন্দিত। আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যত করে ফেলেছি, এখন সেটাকে আরও উন্নতি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি কক্সবাজারে বাবার সঙ্গে যাতায়াত করে দেখেছেন এ অঞ্চলটি এক অফুরন্ত সম্পদের ভা-ার, যা অতীতে কোনদিন কাজে লাগানো হয়নি। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যাত্রায় এই প্রথম কোন ডিজিটাল দ্বীপ ঘোষণা দেয়া হলো। এ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী দ্বীপে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তির সব সেবা নিশ্চিত করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে মহেশখালীর মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি সুবিধা পাবেন। এতে তাদের শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, তথ্য ও জ্ঞানে প্রবেশাধিকার বাড়বে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষামূলক কর্মসূচী চালু ও শিক্ষার্থীদের এমআইএস ডাটাবেজ তৈরি, কৃষকদের জন্য ই-বাণিজ্য সুবিধা, তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও সরকারী কর্মকর্তাদের দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম চালু করা হবে। সূত্র জানায়, কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর তিন লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কোরিয়ান টেলিকম (কেটি) প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের ৩০ জুন।
×