ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪ লাশ উদ্ধার ॥ জঙ্গী আবুর স্ত্রী ও কন্যাকে জীবিত উদ্ধার ॥ ঈগল হান্ট শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

৪ লাশ উদ্ধার ॥ জঙ্গী আবুর স্ত্রী ও কন্যাকে জীবিত উদ্ধার ॥ ঈগল হান্ট শেষ

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ শিবগঞ্জে জঙ্গী আস্তানায় দুদিন ধরে চলা অপারেশন ঈগল হান্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে। অভিযানে জঙ্গী নেতা আবুসহ চারজন নিহত হয়েছে। আবুর স্ত্রী সুমাইয়া ও মেয়ে সাজিদাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সুমাইয়ার পায়ে গুলি লাগায় পাঠানো হয়েছে চাঁপাই হাসপাতালে। পুলিশ জানিয়েছে, নিজেদের ফাটানো বোমা বিস্ফোরণেই চার জঙ্গী নিহত হয়েছে। রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশিদ হোসেন সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সাংবাদিকদের জানান, এ এলাকার জঙ্গী আবুল কালাম আবু ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল এমন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সকালে শিবনগরের একটি বাড়িতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এরপর থেকে ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তাদের আত্মসমর্পণ এবং নারী ও শিশুদের বের করে দিতে বলা হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ না করায় ঢাকা থেকে আসা সোয়াটের একটি টিম বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেলে রেকি করে এবং সাড়ে চারটায় অভিযান শুরু করে। এ সময় মানবিক কারণে মহিলা ও শিশুদের নিরাপদে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা চালানো হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে অপারেশন ঈগল হান্ট স্থগিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুনরায় অভিযান শুরু হয়। জঙ্গীদের আত্মসমর্পণের জন্য বলা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। বিকেলে আবুর স্ত্রী সুমাইয়া বেগম মেয়ে সাজিদাকে উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আবুর স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী বলে জানান তিনি। তিনি জানান, আবু ও তার তিন সঙ্গীসহ মোট চারজন বিস্ফোরণে নিহত হয়। তবে আবু ছাড়া অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি। বিকেল পাঁচটার দিকে আবুর স্ত্রী সুমাইয়া বেগম এবং পাঁচটা ২৩ মিনিটে তার মেয়ে সাজিদাকে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। তারা বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি আরও জানান, অপারেশন ঈগল হান্ট সমাপ্ত হলেও এখন বম্বডিস্পোজাল ইউনিট ও ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করবে। ডিআইজি খুরশিদ চার জঙ্গী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সোয়াট অভিযান শুরুর আগে কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। অভিযান চলাকালে সারাদিনই থেমে থেমে গুলি ও তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ওই বাড়িটি ঘিরে রাখার পর থেকে শিবনগর ও এর আশপাশের এলাকায় বুধবার ভোর ছয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয় পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। এর আগে বুধবার রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার জানিয়েছিলেন, আবু জেএমবির সক্রিয় সদস্য। বুধবার আবুর মা ফুলসানা বেগম জানিয়েছিলেন তার ছেলের নাম রফিকুল আলম আবু। কে এই আবু বিডিনিউজ জানায়, শহর থেকে দূরে পল্লীর একতলা ওই বাড়িতে মাস তিনেক ধরে রফিকুল আলম আবু (৩০) তার স্ত্রী ও আট ও ছয় বছর বয়সী দুটি মেয়ে নিয়ে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের ওই বাড়িতে থাকছিলেন। ৭৫ বছর বয়সী জেন্টু বিশ্বাস ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নিজের পরিবার নিয়ে পাশেই আরেকটি বাড়িতে তিনি থাকেন। স্থানীয়রা জানান, মাস তিনেক আগে একই উপজেলার চাচরা গ্রামের দিনমজুর আফসার আলীর ছেলে আবু এই বাড়িতে ওঠে। এক সময় মাদ্রাসায় পড়া আবু একজন ভ্রাম্যমাণ মসলা বিক্রেতা। ত্রিমোহনীর ওই বাড়ি থেকে আধা কিমি দূরে চাঁচড়া গ্রামে তার বাবা-মা থাকেন। আবুর মা ফুলছানা বেগম বলেন, প্রায় নয় বছর আগে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ের পর একই উপজেলার আব্বাস বাজারে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আবু। ছেলেবেলায় আবু চাঁচড়া গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বলে জানালেও কোন শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন- সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তার মা। তিনি জানান, আবু দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করে।
×