ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ ব্যবস্থায় অকাল মাতৃত্বের অভিশাপ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

বিশেষ ব্যবস্থায় অকাল মাতৃত্বের অভিশাপ

‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৬’ প্রথম অনুমোদন পায় মন্ত্রিপরিষদ সভায়। পরবর্তী পর্যায়ে তা সংসদ এবং রাষ্ট্রপতির সনদও লাভ করে। অর্থাৎ এই নতুন বিধি সম্পূর্ণরূপে আইনসিদ্ধ, এখন তা প্রয়োগের অপেক্ষায়। পূর্বে বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত যে বিধি লিপিবদ্ধ ছিল, বয়সের মাপকাঠিতে সেখানে বিশেষ বিবেচনায় আরও কমানো হয়েছে। এই বিশেষ বিবেচনাটি হলো বিয়ের পূর্বে গর্ভবতী হওয়া কিংবা কোন বালিকা পিতৃমাতৃহীন অনাথ হলে তাদের ক্ষেত্রে এই নতুন বিধি প্রযোজ্য হবে। বাল্যবিয়ের একটা ঝুঁকি তো আছেই, তার ওপর অকাল মাতৃত্ব এই অমানবিক ব্যবস্থাকে সর্বনাশের শেষ ধাপে নিয়ে যেতে পারে। অপরিপক্ব মন আর শরীরে মাতৃত্ব লক্ষণ যে কোন বালিকা বধূর জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। এমনকি প্রাণ সংহারের মতো বিপন্ন অবস্থার শিকার হওয়াও অমূলক নয়। সেখানে বয়স কমানোর বিশেষ বিবেচনা রাখা হয়েছে আরও অল্প বয়সের মাতৃত্বের অভিশাপকে বৈধতা দেয়ার জন্য। এতে কত শিশুকন্যার ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে তা ভাবলে ও মানতে কষ্ট হয়। একজন কিশোরী কিংবা বালিকা যখন বুঝতেই শেখে না বিয়ে এবং সংসারের তাৎপর্য, সেখানে তাকে সেই নিপীড়নে ফেলে দেয়া হয়। আর মাতৃত্ব তো একজন শিশুকন্যার কাছে পুতুল খেলা। যে নিজেকে মাতৃত্বের আবরণে সাজায় এবং সেই অনুভবে পুলকিত হয়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়Ñ ছিলি আমার পুতুল খেলায় প্রভাতের শিব পূজার বেলায় তোকে আমি গড়েছি আর ভেঙ্গেছিÑ সেই খেলাচ্ছলে ভাঙ্গা-গড়ার আনন্দযজ্ঞে বালিকাদের স্বাপ্নিক অনুভূতিকে বাস্তবের কশাঘাতে নির্মমভাবে দলিত করা হয়। কল্পনার মাতৃত্ব আর বাস্তবে শরীর আর মনের ওপর তীব্র নির্যাতনের ফারাক এত বেশি, যা বালিকা বধূদের নানামাত্রিকে শঙ্কিত করে তোলে। আর তাই নতুন আইনে কেন এ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হলো তা পুনর্বার বিবেচনার দাবি রাখাই যেতে পারে। ১৮ বছর যেখানে মানা হয় না বলে বাল্যবিয়ে আজও বাংলাদেশেই শুধু নয়, সারাবিশ্বে সামাজিক অভিশাপ। যে আবর্জনা আজও শিশু-কিশোরীর শুদ্ধ জীবন থেকে সরানো সম্ভব হয়নি, সেখানে নতুন করে আরও বয়স কমানোর আইন তাদের কোন্ দিকে নিয়ে যেতে পারেÑ তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। ‘বাল্যবিবাহ আইন ২০১৬’-এর খসড়া তৈরি হওয়া থেকে শুরু হয় তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা আর প্রতিবাদের ঝড়। বিশেষ করে নারী সংগঠনগুলো এ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জোর দাবি জানায়। সব ধরনের প্রতিরোধ -প্রতিবাদকে পাশ কাটিয়ে আইনটি শেষ অবধি সংসদে অনুমোদন পায় এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতিও তাতে স্বাক্ষর দেন। এরপরও আশা করতে বাধা নেই এ আইনের বিশেষ সুযোগ কোন সহৃদয় কিংবা সচেতন ব্যক্তি অবশ্যই মেনে নেবেন না। প্রত্যেক স্নেহশীল এবং বিজ্ঞ বাবা-মারা যেমন নিজের কন্যাসন্তানের ব্যাপারে সতর্ক এবং যতœশীল হবেন, তেমনি অন্যান্য কিশোরীও যেন এ ভয়াবহ আবর্তের মধ্যে পড়ে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য করা অত্যন্ত জরুরী। তা না হলে কন্যাসন্তানরা যদি সামাজিক দুর্বিপাকের রোষানলে পড়ে তাহলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত বিপন্ন হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। কারণ সমাজের অর্ধাংশ নারী। তাদের সিংহভাগ যদি সামাজিক উন্নয়নে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে না পারে তাহলে সামগ্রিক সমৃদ্ধিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অবোধ এবং নিরপরাধ বালিকারা যাতে কোন ধরনের অপতৎপরতা কিংবা সুযোগের বলি না হয় সেটা দেখা প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব। অপরাজিতা ডেস্ক
×