ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী উদ্যোগই এর কারণ

নেপালে ফিরছে গণ্ডরের সুদিন

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

নেপালে ফিরছে গণ্ডরের সুদিন

‘আপন মাংসে হরিণা বৈরি’-কথাটির মর্মার্থ হরিণের সুস্বাদু মাংসই হরিণের শত্রু। বাঘ, সিংহ, হায়েনা ও বন-জঙ্গলের অন্যান্য হিংস্র প্রাণী ছাড়াও মানুষ নানা কায়দায় হরিণ শিকারের মহোৎসবে মেতে উঠে। হরিণ ধরা বা শিকার করা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে নিষিদ্ধ হলেও তা বেশ অবাধেই চলছে এবং কখনও কচিৎ চোরাশিকারীরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। খবর এএফপির। চোরাশিকারীদের দৌরাত্ম্য এখন দেশে দেশে। যে আফ্রিকার গহীন অরণ্যগুলো ছিল হাতির অবাধ বিচরণক্ষেত্র সেখানে এখন হাতির দেখা পাওয়াই কঠিন। হরিণের মাংসের মতো হাতির শত্রু হলো এর দাঁত। প্রাচীনকাল থেকে হাতি ব্যবহৃত হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে এবং এর দাঁত দিয়ে তৈরি হচ্ছে সৌখিন শিল্পকর্ম। হাতির দাঁতের জমজমাট ব্যবসার জন্য আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলের একটি দেশের নাম হয়েছে আইভরি কোস্ট। নেপালে এক শিংবিশিষ্ট গ-ার আকৃতিতে বেশ বড় এবং উৎকৃষ্টমানের। চোরাশিকারীরা গ-ারের শিং কেটে নেয়। দুই থেকে আড়াই টন ওজনের একটি প্রাণীকে শুধুমাত্র একটি শিংয়ের জন্য প্রাণ দিতে হচ্ছে। হাতির দাঁত ও গ-ারের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ হচ্ছে চীন। চীনে সুনিপুণভাবে হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম তৈরি ও বিক্রি হয় এবং গ-ারের শিং থেকে ভায়াগ্রা জাতীয় ভেষজ ওষুধ তৈরি হয় এবং এসব ওষুধ কিনতে গিয়ে ধনিক শ্রেণী দামের দিকে তাকায় না। যে নেপালের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমভূমিতে এক সময় হাজার হাজার গ-ারের বিচরণ ছিল-গত শতাব্দীর শেষ দিকে এসে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে একশর মতো। দ্রুত বিলুপ্তির হাত থেকে প্রাণীটিকে রক্ষার জন্য নেপাল সরকার চোরাশিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এক শিংবিশিষ্ট গ-ারদের বংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেয়ায় বর্তমানে সেদেশে গ-ারের সংখ্যা ৬৪৫ টিতে উন্নীত হয়েছে। নেপালের শুক্লাফান্তা, চিতওয়ান ও বারদিয়া জাতীয় পার্কে সরকারী উদ্যোগে তাদের এই বংশবৃদ্ধি চলছে। ভারত ও নেপালে সফলভাবে এক শিংবিশিষ্ট গ-ারের বংশবৃদ্ধির ফলে প্রকৃতি সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ইউলিয়ান -আই, ইউ, সি, এন- ২০০৮ সালে প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতি প্রাণীর তালিকা থেকে এক শিং গ-ারের নাম বাদ দিয়েছে। তবে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে গ-ারের শিং এর অবৈধ ব্যবসাকে বৈধতা দেয়ায় এদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকি এখনও বহাল রয়েছে। নেপাল সরকার সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের ফলে গত তিন বছরে মাত্র তিনটি গ-ার প্রাণ হারিয়েছে। এ বিষয়ে চোরাশিকারীদের বিরুদ্ধে তৎপর প্রহরীদলের সদস্য গাম বাহাদুর তামাং (৭২) বলেন, টহল বন্ধ করলেই শিকারীরা আবার গ-ার হত্যা শুরু করবে।
×