ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তৃণমূলে ব্যাংকিং সেবা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

তৃণমূলে ব্যাংকিং সেবা

ব্যাংকিং সেবাকে আরও জনবান্ধব করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে ‘এজেন্ট ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এই নতুন কর্ম উপযোগের যাত্রা শুরু হয়। ইতোমধ্যে এর সুফলও জনগণের দ্বারে পৌঁছে যায়। গ্রামের ওষুধের দোকান, ডাকঘর এবং ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়েই এই ছোট ব্যাংক শাখা তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামের জনগণ তাদের টাকা সঞ্চয় এবং উত্তোলন দুটো কাজই সফলতার সঙ্গে করে যাচ্ছে। বর্তমানে এই এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামের সাধারণ জনগোষ্ঠীর কাছে এক জনপ্রিয় ব্যাংকিং সেবা। প্রতিদিনই এই ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই সেবার পরিধি আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রায় ৪ বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ্যাকাউন্টের গ্রাহক সংখ্যা ৫ লাখ সাড়ে ৪৪ হাজার জন। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখেরও বেশি গ্রাহক তাদের হিসাবের লেনদেন করে থাকেন। মোট ১০টি ব্যাংক এই এজেন্ট কার্যক্রমের আওতায় সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই ১০টি ব্যাংকের কর্মপ্রক্রিয়ার আওতায় ১ হাজার ৬৪৬ জন এজেন্ট কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়নের ফলে ২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়ার হাত ধরেই এই খাতটি তার শুভ উদ্যোগের যাত্রা শুরু করে। এসব এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স জমা হয় ৩০৯ কোটি টাকা। আমানত, রেমিটেন্স এবং গ্রাহকের সংখ্যার বিচারে এই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সর্বোচ্চ আসনটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ব্যাংক এশিয়া। অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে আল্-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক অন্যতম। এতে গত ডিসেম্বরেই প্রায়ই ২১৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। নিয়োগকৃত এজেন্টরা অর্থ জমাও তুলতে পারছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, স্বল্প ঋণ প্রদান ও আদায় এবং এককালীন সঞ্চয় করার কাজও নির্বিঘেœ সম্পন্ন করছে। বিভিন্ন সেবা বিল পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তাসহ পরিকল্পিত কর্মসূচীর অধীনে অর্থ দিতে পারছে। নীতিমালার আওতায় ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ দেয়া, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ ও এখন ব্যাংকিং এজেন্টদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে। অর্থাৎ ব্যাংকিং সেবার সমস্ত আধুনিকায়নের পর্যায় এখন যেভাবে এজেন্টদের হাতে একইভাবে তাদের মাধ্যমে সাধারণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায়। গ্রামাঞ্চলে যাদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা আছে তারা সবাই মোটামুটি এই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বহুমুখী সেবায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে। এই সেবাকে আরও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দেয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব ইউনিয়নে এই এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত বাড়ানো হবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র। সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া এই সেবা খাতকে আরও গতিশীল করতে নীতিমালার ক্ষেত্রে নতুন কিছু যোগ করা যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখা অত্যন্ত জরুরী।
×