ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ালটনের বিপক্ষে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো ষড়যন্ত্র করেছে

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

ওয়ালটনের বিপক্ষে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো  ষড়যন্ত্র করেছে

প্রচ্ছদ-৬ অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইটি বা আইসিটি পণ্য উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু যখনই বাংলাদেশে কোনও পণ্য তৈরি হয়েছে, তখনই বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছে। তবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশে মোবাইল ফোন শিল্প স্থাপনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ব্রাণ্ড ওয়ালটন। জানা গেছে, ইতোমধ্যে দেশে মাল্টিলেয়ার মাদারবোর্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ওয়ালটন। মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ আইসিটি পণ্য দেশে তৈরির ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়ালটন দেশে মোবাইল ফোন তৈরি করলে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়বে, এই ভয়ে দেশি শিল্পবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, ফ্রিজ, টিভি, এয়ারকন্ডিশনারের মতো পণ্য দেশেই তৈরি হচ্ছে। ফলে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো পিছিয়ে পড়ছে। কারণ দেশি পণ্য উচ্চমান বজায় রেখে ক্রেতাদেরআস্থা অর্জন করেছে। অন্যদিকে দামেও সাশ্রয়ী, বিক্রয়োত্তর সেবাও হাতের নাগালে। এখন দেশে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ আইসিটি পণ্য তৈরি হলে এসবের দাম অনেক কমে আসবে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোও তখন অতিরিক্তি মুনাফা করতে পারবে না। তাই তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোন শিল্প স্থাপন করতে পারলে দেশে বিশাল কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে বিকশিত হবে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্প। চক্রান্তকারীরা বুঝতে পেরেছে, এ খাতের নতুন শিল্প উদ্যোগ থামাতে পারলে আগামি ২০ বছর এ শিল্পে বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারবে না। ফলে তারা মধ্যসত্তভোগী হিসেবে মুনাফা করতে পারবে। দেশে মোবাইল ফোন শিল্প স্থাপনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশে একটি অগ্রগামী ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি খুচরা যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল এখন দেশেই তৈরি করছে। তারা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্যও অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সম্প্রতি ভারত মোবাইল ফোন উৎপাদন করে কয়েকটি স্থানীয় ব্র্যান্ড ডেভেলপ করেছে। দেশটি এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাপক সুযোগ সুবিধা ঘোষণা করেছে। ফলে সেখানকার বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশকে টার্গেট করে নিম্নমানের বিদেশি পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন বানাতে চায়। এদিকে বাংলাদেশেও কয়েকটি স্থানীয় ব্র্যান্ড ডেভেলপ হয়েছে। সিংহভাগ মার্কেট শেয়ারও দখল করেছে ওয়ালটন এবং সিম্ফনি। এখন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা এদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিবাচক নীতি তৈরির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, যত ষড়যন্ত্রই হোক ওয়ালটনের উদ্যোগ কেউ প্রতিহত করতে পারবে না। মোবাইাল ফোন কারখানা স্থাপন থেকে ওই চক্র আমাদের একচুলও নড়াতে পারবে না। এ শিল্প দেশের স্বার্থেই হবে।সরকার এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কারখানা করবোই। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বছরে ৩ কোটিরও বেশি হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়। মোট বাজার ১০ কোটি হ্যান্ডসেটের। সেই সঙ্গে বিক্রি হয় হ্যান্ডসেটের বিপুল পরিমান এক্সেসরিজ। সবমিলিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। যার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এই নির্ভরতা কমাতে দেশেই মোবাইল ফোন ও এক্সেসরিজ উৎপাদন শিল্প স্থাপনে ওয়ালটনসহ কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান সক্ষমতা অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে, নিজস্ব কারখানায় মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে, মাল্টি-লেয়্যার মাদারবোর্ড তৈরিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ওয়ালটন। স্থাপন করেছে ডিজাইন ডেভেলপ, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহম্মদ বলেন, বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের চেয়ে আমদানি করা লাভজনক। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। মোবাইল ফোন শিল্প স্থাপনের বিষয় রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার পাওয়া এখন সময়ের দাবি। যে কোনও শিল্প গড়ে উঠার পেছনে সহায়ক রাষ্ট্রীয় নীতি ও প্রণোদনা বিশাল ভূমিকা রাখে। আশা করি সরকার বিষয়টিকে প্রধান্য দেবে।
×