ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভালোবাসা বয়স মানে না

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

ভালোবাসা বয়স মানে না

অনলাইন ডেস্ক ॥ নিরাশপুরের একাব্বর বাদশা (৬০) আটকুঁড়ে। আটকুঁড়ে বাদশার মুখ দর্শনে রাজ্যের অমঙ্গল। তাই বাদশা নিজেই রাজ্য ছেড়ে নির্বাসনে চলে যায়। গভীর বনে বাদশা অনিচ্ছাকৃতভাবে এক সাধুর ধ্যান ভঙ্গ করেন। যার ফলে সাধু বাদশাকে অভিশাপ দেন। যে অভিশাপে বাদশার ১২ দিনের ছেলে রহিম বাদশাকে উজিরের ১২ বছরের মেয়ে রূপবানের সাথে বিবাহ দিয়ে বনবাসে পাঠাতে বাধ্য হয়। ১২ দিনের সন্তান রহিমকে লালন-পালন করার এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়ে যায় রূপবান। রূপবান রহিমকে (৫ বছর) বয়সে স্কুলে ভর্তি করায়। সহপাঠিদের সাথে রহিম নানা প্রশ্নে-বিতর্কে বড় হতে থাকে। রহিমের সাথে পরিচয় হয় ছায়েদ বাদশার মেয়ে তাজেলের। ঘটনাক্রমে দুষ্টু ছায়েদ বাদশা রূপবানকে বিয়ে করতে প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হলে রূপবানসহ রহিমকে বাদশা বন্ধি করে। এক পর্যায় জংলী রাজা ও একাব্বর বাদশার সহযোগিতায় তাদের পরিচয় প্রকাশ পায় এবং অভিশাপের ১২ বছর পূর্ণ হয়। রহিম ও রূপবান আবার রাজ্যে ফিরে যায়। সেই রহিম-রূপবান চরিত্র আজও গ্রাম বাংলায় যাত্রামঞ্চে দর্শকের রাত জাগিয়ে রাখে। চোখ ভাসিয়ে দেয় পানিতে। ভালোবাসা বয়স মানে না। মানে না কোন বাধা। সেই যুগেই নয়, এ যুগেও মাঝে মধ্যে দেখা মেলে রহিম-রূপবানের। প্রেমিকের বয়স বেশি হতে হবে বলে যে ভ্রান্ত রেওয়াজ আছে তা মিথ্যা করে দিতে কালে কালে হাজির হন রহিম-রূপবানরা। তেমনই এ যুগের রহিম-রূপবান হয়ে এসেছেন ইমানুয়েল ম্যাখঁ ও তার শিক্ষিকা ব্রিজিত থনিওর। ইমানুয়েল ম্যাখঁ নামের ওই কিশোর প্রেমে পড়ল তারই শিক্ষিকা ব্রিজিত থনিওর। তখন সে মাধ্যমিকে পড়ছে। বেশ সাহস নিয়ে ১৭ বছরের এই কিশোর সে কথা জানায় ৪১ বছরের শিক্ষিকাকে। শুনে শিক্ষিকা ব্রিজিত ভেবেছিলেন, এটি তার ছাত্রের কিশোর বয়সের আবেগ। বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, ছেলেটি শিক্ষিকাকে বলেছিল, ‘আমি তোমাকে একদিন বিয়ে করব, দেখো। ’ সেই কথা রেখেছে ইমানুয়েল। তারা এখন হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়ায় মাঠে, জঙ্গলে, সাগর পাড়ে। ডিজিটালযুগে ভালোবাসা যেখানে প্রাণহীন, নীরস, ফেইক বলে অনেকে মনে করেন। তাদের অনুমানকে আবারো মিথ্যা প্রমাণ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনের প্রথম ধাপে বিজয়ী ইমানুয়েল ম্যাখঁ। গল্পকথার কল্প কাহিনী মনে হলেও তা জনসম্মুখে প্রকাশ করলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থী ইমানুয়েল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটের ঠিক আগে ম্যাখঁ তার প্রেমের সম্পর্ক জনসম্মুখে এনে অনেকের বাহবা কুড়াচ্ছেন। অপরদিকে তরুণ ভোটারদের ভোটকে প্রভাবিত করতেই দারুণ এক চমকপ্রদ ঘটনা উপহার দিতেই তার এ আয়োজন। নির্বাচনের বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থক একে স্ক্যাণ্ডাল হিসেবে প্রচার করতে চাইলে ঘটনাটি হিতে বিপরীত হয়ে যায়। নির্বাচনের আগে চেহারা পাল্টে যায়। বরং ম্যাখঁ এটাকে পজিটিভলি উপস্থাপণ করে সমর্থকদেরকে ভোট নিজের বাক্সে নিয়ে আসেন। ২০০৪ সালে ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রনালয়ের ফাইন্যান্স ইন্সপেক্টর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন ইমানুইয়েল। দ্রুত পদন্নোতি পেয়ে ২০০৮ সালে সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। রথ চাইল্ড এন্ড সি ব্যাঙ্কুয়ে থেকে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হিসেবে নিয়োগ পান। মোটা অংকের আয়েরও সুযোগ হয়ে যায়। ২০০৬ সালে সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। ২০১৪ সালে ফ্রান্সের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পান তিনি। ম্যাখঁ- এর মা পেশায় চিকিৎসক এবং বাবা নিউরোলজির অধ্যাপক। ইমানুয়েল ম্যাখঁ-এর যখন ১৫ বছর বয়স তখন তিনি তার শিক্ষিকা ব্রিজিতের প্রেমে মজে যান। শিক্ষিকার বয়স তখন ছিল ৩৯ বছর। ওই শিক্ষিকা জানান, “১৭ বছর বয়সের ম্যাক্রোন আমাকে বলে, তুমি আর যাই করো আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। ” এই প্রেমের জন্ম নেয় ব্রিজিতের নাটকের ক্লাস থেকে। ১৮ বছর বয়সে ইমানুয়েল ফ্রান্সের উত্তরে এমিনেস এর স্কুলে যেতেন। তিন সন্তানের জননী ব্রিজিত থনিওর তখন নাটকের ক্লাসের তদারকি করতেন। ম্যাখঁ সাহিত্য ভালোবাসতো। সে নিজেকে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার স্বপ্ন দেখতো। প্যারিস শহরে চলে আসার পর ব্রিজিত থনিওর সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলতেন। ২০০৭ সালে ম্যাখঁ বিয়ে করার সিধান্ত নেন। তখন রাজনৈতিকভাবে তার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু হয়েছে। কিন্ত তখনো তিনি তার প্রেমিকার নাম কাউকে জানাননি। ব্রিজিত থনিওর তখন ম্যাখেঁর পক্ষে রাজনৈতিক প্রচারনায় অংশ নেন। ইমানুয়েল ফ্রেঞ্চ টিভিতে সাক্ষাৎকারের সময় উল্লেখ করেন, “আমার প্রিয়তমা এখানেই আছে। চিরদিনই সে আমারই রবে। ” “ তাকে আমার ভালো লাগতো। সে কেমন । তার বয়স কত? সে কি? এসব ভেবে ভালোবাসা যায় না। মনের সাথে আর যাই হোক লড়াই করা সম্ভব না। একটাই মন। তাকে ভালো লেগেছে। আর তাই ভালোবাসি শুধু তাকেই। সবাই ভালবাসে। আমরাও এর ব্যাতিক্রম নই...” ল্যা প্যানে বিজয়ী ম্যাখঁ ৭৬ লক্ষ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে লড়াইয়ের জন্য মনোনয়ন পান। আগামী ৭ মে, ২০১৭ তে চূড়ান্ত রায়ের জন্য আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ম্যাখঁকে। ৪৬ লক্ষ ভোটারের ভিতর ৭.৬ লক্ষ ভোট পেলেও শতকরা হিসেবে তা ২৩%। ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ইমানুয়েল ম্যাখঁ। তার চেয়ে আলোড়ন জাগিয়েছে তার থেকে দুই গুণের চেয়ে বেশি বয়স্ক প্রেমিকা। যদিও ম্যাখেঁর পরিবারের এখনো এই বিষয়ে আপত্তি আছে। ব্রিজিত থনিওর যে ক্লাসে ক্লাস নিতেন, সে ক্লাসেই তার সন্তানের সহপাঠী ছিলেন ম্যাখঁ। সবাই ভাবতো থনিওর মেয়ে হয়ত ম্যাক্রোনের গার্লফ্রেন্ড। আগামী ৭ই মেয়ে চূড়ান্ত রায় নিশ্চিত করে দিবে থনিওর কি তবে হতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি! আর ইমানুয়েল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি হবেন তারই সেই শিক্ষিকা এ যুগের 'রূপবান' ৬৪ বছর বয়সের ব্রিজিত থনিও।
×