ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

মেসি সর্বকালের সেরা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

মেসি সর্বকালের সেরা

সময়ের সেরা কে? ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নাকি লিওনেল মেসি? এ নিয়ে আছে জোর বিতর্ক। তবে ২৩ এপ্রিল রাতের এল ক্লাসিকোর পর হয়ত রোনাল্ডোর নামটি তার সমর্থকরাও বলতে চাইবেন না! ম্যাচে বার্সা তারকা লিওনেল মেসি দেখিয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরমেন্স। অন্যদিকে রিয়াল তারকা রোনাল্ডো ছিলেন সুপারফ্লপ। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জোড়া গোল করে বার্সাকে মেসি পাইয়ে দিয়েছেন অসাধারণ জয়। সেই সঙ্গে বার্সিলোনার হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে শেষ ছয়টি ক্লাসিকোতে গোলশূন্য ছিলেন মেসি। তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়েই জ্বলে উঠেছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। ম্যাচের আগে বার্সিলোনার হয়ে মেসির মোট গোল ছিল ৪৯৮টি। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে দলের হয়ে প্রথম গোল করেন তিনি। এরপর ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আরও একটি জাদুকরী গোল করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। চলতি লা লীগায় মেসির এটি ৩১তম গোল, আর বার্সিলোনার জার্সিতে সব মিলিয়ে ৫০০তম। ক্লাসিকোর ইতিহাসে ২১ গোল নিয়ে আগেই শীর্ষে ছিলেন মেসি। এদিনের জোড়া গোলে সংখ্যাটিকে ২৩-এ নিয়ে গেছেন। ক্লাব ক্যারিয়ারে পাঁচশ গোলের ৩৪৩টিই মেসি করেছেন লা লীগার ম্যাচে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে বার্সার জার্সিতে তার গোল ৯৪টি। এছাড়া কাতালানদের হয়ে কোপা ডেল’রেতে ৪৩, স্প্যানিশ সুপার কাপে ১২, ক্লাব বিশ্বকাপে ৫ ও ইউরোপিয়ান সুপার কাপে ৩টি গোল করেছেন মেসি। লা লীগায় সেভিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ২৯টি গোল করেছেন মেসি। পরে আছে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, করেছেন ২৭টি আর ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে ২৪টি গোল করেছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। আছে মোট ৩৭টি হ্যাটট্রিক। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা ৮বার প্রতি মৌসুমে ক্লাবের জার্সিতে ৪০টি গোল করার কীর্তিও মেসির। ঝমমলে পারফরমেন্সের পর মেসিতে মুগ্ধ সবাই। শত্রুমিত্র সবাই প্রশংসার স্রোতে ভাসাচ্ছেন। বার্সিলোনা কোচ লুুইস এনরিকে তো নির্দ্বিধায় বলেছেন, মেসিই সর্বকালের সেরা ফুটবলার। ম্যাচ শেষে এনরিকে বলেন, ইতিহাসে মেসিই সর্বকালের সেরা। দলের প্রয়োজনের সবসময় সে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। আমি অনেক ফুটবলারকে দেখেছি। তাদের মধ্যে মেসিই সেরা। সে খেলাটির ইতিহাসের সর্বসেরা। এনরিকের সমর্থনে মেসির পক্ষেই কথা বললেছেন রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান। শত্রুপক্ষের এই কোচ বললেন, ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন মেসি। আমরা তাকে আটকাতে পারিনি। সেই সঙ্গে নিজের দলের সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পারফরমেন্স হতাশা ব্যক্ত করেন ফরাসী গ্রেট। জিদান বলেন, আমি খুশি হতে পারি না। আমরা ম্যাচটা শেষ করে দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। অনেক গোল করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সুযোগ নষ্টের কারণে আমরা হতাশ। রোনাল্ডোর কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি। শেষ পর্যন্ত (সুযোগ নষ্টের কারণে) আপনাকে একটা দলের বিরুদ্ধে শাস্তি পেতে হয়েছে। যে দল জানে, কিভাবে খেলতে হয় এবং আপনার ক্ষতি করতে হয়। তারা সেটা করেছেও। তবে আমার ছেলেদের দোষ দেয়ার কিছু নেই। মেসির শেষ মুহূর্তের গোলে হতাশ ও ক্ষুব্ধ রিয়ালের খেলোয়াড় থেকে সমর্থক সবাই। আচমকা গোলটি হজমের পর রিয়ালের সব খেলোয়াড় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। গ্যালারিতে দর্শকদেরও কাদতে দেখা যায়। তবে অস্বস্তিটা মনে হয় রোনাল্ডোর চেয়ে আর কারো বেশি ছিল না। মেসির গোলের পর রাগে গজগজ করতে থাকেন সিআর সেভেন। মাদ্রিদ ভিত্তিক এক ক্রীড়া দৈনিক লিখেছে, মেসির গোলের পর রোনাল্ডো ভীষণ ক্ষুব্ধ। ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, শেষ গোলের পর আনন্দ করছেন মেসি। আর চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ রোনাল্ডো হাত-পা ছুড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে গজগজ করছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে ম্যাচটি খেলতে পারেননি নেইমার। তবে না খেললেও মেসির উদযাপনে ঠিকই ছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। বার্নাব্যুর ড্রেসিংরুমে বার্সিলোনার খেলোয়াড়দের উল্লাসে সঙ্গী ছিলেন নেইমারও। মেসির হাতে ধরা মোবাইলে ভিডিও কলের অপর প্রান্তে দেখা যায় ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ফুটবলপ্রেমীরা সাক্ষী হয়েছেন নেইমারের উন্মাতাল উদ্যাপনের। দলের সঙ্গে মাদ্রিদ যাননি নেইমার। তাই ঘরে বসেই টেলিভিশনে ‘এল ক্লাসিকো’র স্বাদ নিয়েছেন। ম্যাচ শেষেও মোবাইলে ভিডিওকলের মাধ্যমে গোটা দলের উৎসবের সঙ্গী হন। ম্যাচের শেষ দিকে রিয়াল অধিনায়ক রামোস লালকার্ড পাওয়ায় হারতে হয়েছে বলে মনে করেন দলটির ডিফেন্ডার দানি কারভাহাল। তার দাবি রেফারির এই সিদ্ধান্ত ক্লাসিকোতে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কারভাহাল বলেন, রামোসের বহিষ্কৃত হওয়া ম্যাচ নির্ধারণ করেছে। আমরা ড্র প্রায় করে ফেলেছিলাম। কিন্তু শেষ দিকের খেলায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি এবং হেরেছি। আমাদের ভাগ্য সহায় ছিল না। এদিকে মেসিকে ফাউলের জন্য লালকার্ড প্রাপ্য ছিল না বলে মনে করেন রামোস। রিয়াল অধিনায়ক বলেন, লালকার্ড দেয়াটা বেশি ছিল। আমি কারও ক্ষতি করতে যাচ্ছিলাম না। আমার মতে, এটা হলুদ কার্ড দেয়ার মতো ছিল, লাল কার্ড নয়। কখনই কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্য আমার থাকে না। রিয়ালের এই সেন্টার-ব্যাক জানিয়েছেন, মাঠ ছাড়ার সময় তার ইশারা রেফারির উদ্দেশে ছিল না, ছিল বার্সিলোনা ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকের দিকে। রামোস বলেন, আমি মাঠ ছাড়ার সময় রেফারিকে হাততালি দেইনি। আমি পিকের সঙ্গে কথা বলছিলাম, রেফারির সঙ্গে নয়। রেফারিরা সঠিক হতে পারেন এবং মাঝে মাঝে তারা ভুলও করেন। সিদ্ধান্তটা ছিল (জয়-পরাজয়) নির্ধারক। কিন্তু আমি পিকের সঙ্গে আলাপ করছিলাম, রেফারির সঙ্গে নয়। রামোস বলেন, বার্সিলোনায় সবসময় তারা রেফারিদের প্রসঙ্গে কথা বলে। কিন্তু আমরা রেফারিদের ব্যাপারে কথা বলব না, এটা আমাদের ধরন না। পিকে সবসময় রেফারিদের ব্যাপারে কথা বলে। হয়তো চুপ করে থাকার চেয়ে কখনও রেফারির ব্যাপারে কথা বলাটা ভাল। কিন্তু আমি কোন বিতর্ক শুরু করব না।
×