ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিউটি পারভীন

টাইগারদের ফেরার লড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

টাইগারদের ফেরার লড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে

পুরো দলের জন্যই ফেরার লড়াই। কারণ গত দুই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আসলে সুযোগ পায়নি। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দল নিয়ে এ টুর্নামেন্ট আয়োজন শুরুর পর থেকেই দর্শক হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সে কারণে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা হয়নি। এবার ফিরছে বাংলাদেশ মর্যাদার এ টুর্নামেন্টে। বিশ্বের সেরা আট দলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭ নম্বরে। ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে অন্তত আট নম্বরে থাকার প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশ দল সেখানে ৭ নম্বরে উঠে যায়। এখন পর্যন্ত সেই অবস্থান অটুট রেখেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারেরও ফেরার লড়াই। নিজেদের যোগ্যতা ও সামর্থ্য প্রমাণের লড়াই। সেই লড়াইটার আগেই দলে ফেরা ক্রিকেটাররা সুযোগ পাচ্ছেন নিজেদের প্রমাণ করার। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে খেলবে দল। সেই দলে ফিরেছেন অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। সেখানে ভাল করতে পারলে নাসির সুযোগ করে নেবেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও। কারণ মূল দলে না থাকলেও আছেন স্ট্যান্ডবাই হিসেবে। এছাড়া দলে ফিরেছেন দুই পেসার রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলামও। এ তিনজনের লড়াই হবে নিজেদের ফিরে পাওয়ার। আয়ারল্যান্ডে গিয়ে তিন জাতি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওই দলে আছেন নাসির। ঘরোয়া ক্রিকেটে সম্প্রতি দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোয় এ অলরাউন্ডারকে আয়ারল্যান্ড সফরের দলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু জুনে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নেয়া হয়নি নাসিরকে। ওই দলে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে নাসিরকে। নাসিরকে আয়ারল্যান্ড সফরে রেখে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে না রাখলেও পেসার শফিউল ইসলামকে ঠিকই আয়ারল্যান্ড সফর ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রাখা হয়েছে। দলে আবার ফিরেছেন শফিউল। সেই সঙ্গে ফিরেছেন পেসার রুবেল হোসেনও। নাসিরের মতোই অবস্থা হয়েছে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান ও পেসার শুভাশীষ রায়ের। আয়ারল্যান্ড সফরের জন্য ঘোষিত ১৮ সদস্যের দলে নাসির, সোহান, শুভাশীষ থাকলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নেই। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে তিনজনই থাকছেন। শ্রীলঙ্কা সফরে টি২০ খেলা তরুণ পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য স্ট্যান্ডবাই হিসেবে থাকছেন। এবার দল ঘোষণায় কোন চমকও নেই। পুরনোরাই দলে স্থান পেয়েছেন। কোন দলেই জায়গা হয়নি স্পিন অলরাউন্ডার শুভাগত হোম চৌধুরীর। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট আর ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে সাসেক্সে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সে উদ্দেশে ২৬ এপ্রিল দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সাসেক্সে গিয়ে ১ মে ডিউক অব নরফোকের বিপক্ষে এবং ৫ মে সাসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর আয়ারল্যান্ডে চলে যাবে দল। আয়ারল্যান্ডে ৭ মে গিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ ছাড়াও স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড খেলবে। ১২ ও ১৯ মে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ১৭ ও ২৪ মে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে মাশরাফিবাহিনী। অবশ্য ২৬ এপ্রিল ইংল্যান্ডগামী দলের সঙ্গে যাচ্ছেন না তিন ফরমেটেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) বর্তমানে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার কারণে ছাড়পত্র পেয়েছেন কন্ডিশনিং ক্যাম্প থেকে। সাকিব ৪ মে সরাসরি আয়ারল্যান্ডে গিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে ২৫ মে ইংল্যান্ডে রওনা হবে বাংলাদেশ দল। সেখানে গিয়ে প্রথমে ২৭ মে পাকিস্তানের বিপক্ষে ও ৩০ মে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। এরপর ১ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ দল। ৫ জুন অস্ট্রেলিয়া এবং ৯ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। যদি বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলে তাহলে ম্যাচ বাড়বে। না হলে এখানেই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিশন শেষ হয়ে যাবে। নাসিরকে আয়ারল্যান্ড সফরে বিবেচনা করলেও কেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বিবেচনা করা হলো না? প্রধান নির্বাচক নান্নু জবাব দেন, ‘নাসির এক বছর ধরে দলের সঙ্গে সফর করছে না। সে হিসাবে ওকে আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে এনেছি। ইমার্জিং কাপে সে ভাল খেলেছে এবং ঘরোয়া ক্রিকেটও যথেষ্ট ভাল খেলেছে। সাসেক্সে প্রস্তুতি ক্যাম্প আছে। আয়ারল্যান্ড সফরে নিয়েও ওকে অভ্যস্ত করা দরকার। ও অনেকদিন ধরে দলের বাইরে থাকায় এবার টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কাজ করবে। আমাদের ১০ দিনের প্রস্তুতি ক্যাম্প আছে ইংল্যান্ডে। ওখানে ওকে দেখা হবে।’ সঙ্গে নান্নু যোগ করেন, ‘যেহেতু ওর অভিজ্ঞতা আছে, আশা করি তাড়াতাড়িই আগের ছন্দে ফিরবে।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নাসির স্ট্যান্ডবাই। স্ট্যান্ডবাই ক্রিকেটার হিসেবে থাকছেন শুভাশীষ, সাইফউদ্দিন, সোহানও। কিন্তু সোহানের ভাগ্য যেন একটু বেশি ভাল। স্ট্যান্ডবাই হয়েও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দলের সঙ্গে থাকবেন সোহান। কেন? প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘নুরুল হাসান সোহানকে আমরা অতিরিক্ত উইকেটরক্ষক হিসেবে রাখব আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। কোন উইকেটরক্ষকের ইনজুরি সমস্যা হলে আমরা যেন অনতিবিলম্বে সেটা রিপ্লেস করতে পারি।’ সাইফউদ্দিন এবার কোন দলেই নেই। এ পেস অলরাউন্ডার না থাকায় সে অভাব স্বাভাবিকভাবেই থাকছে। তবে অধিনায়ক মাশরাফিকে দিয়ে সে অভাব দূর করার ভাবনাতেই যেন আছেন নির্বাচকরা। তাই তো প্রধান নির্বাচক বলেছেন, ‘পেস বোলিং অলরাউন্ডার? আমাদের অধিনায়কই তো পেস বোলিং অলরাউন্ডার। আরেকজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে নিয়ে আমরা মাত্র শুরু করেছি (সাইফউদ্দিন)। ইতোমধ্যে আমরা ওকে দিয়ে টি২০ খেলিয়েছি। ধীরে ধীরে ওর উন্নতি করাতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগে। তবে ওর যথেষ্ট যোগ্যতা আছে।’ শফিউলকে নেয়ার ব্যাপারেও জানান নান্নু। বলেছেন, ‘শফিউল ইনজুরিতে ছিল। এরপর টানা ম্যাচ খেলার ফিটনেস নিয়ে তার সমস্যা ছিল। যেহেতু শ্রীলঙ্কায় এর আগে খেলা ছিল। সেখানে তার টানা খেলার বিষয়টি মাথায় রেখেছি। আর ইংল্যান্ডের কন্ডিশন ঠা-ানির্ভর। এ কন্ডিশনে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখন ফিটনেসও ভাল। টানা ম্যাচ খেলতেও পারবে।’ এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য ঘোষিত দলে কোন নতুন চমক নেই। পুরনো ও নিয়মিতদের নিয়েই দল গড়া হয়েছে। এবার চ্যালেঞ্জে নামার অপেক্ষা। মাশরাফির নেতৃত্বে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর ওয়ানডে দলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ এবার দারুণ কিছু করার স্বপ্ন দেখছে। সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা নিজেদের প্রমাণ করার। আগের দুই আসরে খেলতে না পারার আক্ষেপ ঘোচানোর মিশন টাইগারদের।
×