ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ১০ হাজার হেক্টর প্লাবিত ॥ শেষ বাঁধটিও গেল

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

আরও ১০ হাজার হেক্টর প্লাবিত ॥ শেষ বাঁধটিও গেল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ হাওড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সেই সঙ্গে ফসল ও মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বাড়ছে কৃষক এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। ফলে অন্তত ১৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জে শনির হাওড়ের দুটি বাঁধ ভাঙ্গার পর সোমবার ভোরে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত পাগনার হাওড়। এখানে বাঁধ ভাঙ্গায় নতুন করে তলিয়ে গেছে ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। কিশোরগঞ্জে বাঁধ ভাঙ্গার কারণে ৫৭ হাজার হেক্টর জমির ৮০৫ কোটি টাকার ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আরও বাঁধ ভেঙ্গে ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এদিকে নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে বাঁধভাঙ্গা পানিতে ১২শ’ মে. টন মাছ মরে গেছে। মাছের পাশাপাশি এসব প্রাকৃতিক জলাধারে বিপুল পরিমাণ ব্যাঙ, কাঁকড়া, কুঁচে, শামুক প্রভৃতি জলজ প্রাণীও মারা গেছে। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জে এক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বিএনপি হাওড়াঞ্চলের এই দুর্যোগকে ‘মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়’ বলে দাবি করেছে। এমরানুল হক চৌধুরী সুনামগঞ্জ থেকে জানান, টানা ২৬ দিন বাঁধে পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছিলেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওড়ের অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষক। ফসল ও বাঁধ রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন তারা। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সোমবার ভোরে উরারবন্দ নামক বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় হাওড়টি। এটি ছিল জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত হাওড়। পাগনার হাওড়ে জেলার দিরাই উপজেলা ও নেত্রকোনার খালিয়াজুরির অনেক কৃষকের বোরো জমি রয়েছে। জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পাগনার হাওড়ের ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল রক্ষার শেষ লড়াই করেছিল এলাকার লোকজন। তবে গত এক মাস ধরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা বাঁধে ছিলেন না বলে জানিয়েছেন ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদার। পাগনার হাওড়ের উরারবন্দ বাঁধ এলাকা থেকে ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অজিত কুমার রায় সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় জানিয়েছেন, শতাধিক শ্রমিক নিয়ে তিনি রবিবার রাতেও বাঁধে কাজ করছিলেন। বাঁধ রক্ষায় ৫০ জন পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার ভোরে বৃষ্টির সময় উরারবন্দ বাঁধ ভেঙে হাওড়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। তিনি গ্রাম পুলিশ, শ্রমিক ও পাহারাদারদের নিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলেন বাঁধ রক্ষার; কিন্তু পানির বেগ বেশি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এখন হাওড়ে পানি ঢুকে বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদার বলেন, হাওড়ের এত বড় দুর্যোগে পাউবোর কোন অফিসারকে বাঁধে পাওয়া যায়নি। রবিবার থেকে বাঁধে কাজ করার জন্য ১৭৪ জন শ্রমিক ও নজরদারি রাখার জন্য ৫০ জন পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সোমবার ভোরে বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়ে পানি ঢোকা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, জেলায় এ বছর ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৬৩৪ কোটি টাকা। ৪২টি হাওড়ের ফসল রক্ষায় ৬৮ কোটি টাকা ৮০ লাখ টাকার বাঁধের কাজ চলছিল। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের বৃহৎ ৩৭টি হাওড়সহ মোট ৪২টি হাওড়ে ২০ কোটি ৮০ লাখ ব্যয়ে ২২৫টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ও ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছিল। কৃষকদের অভিযোগ পিআইসির কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ঠিকাদারের কাজ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পিআইসির ও ঠিকাদারের কাজ সময়মতো শেষ হয়নি। মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কিশোরগঞ্জের হাওড় অধ্যুষিত উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলীসহ করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও ভৈরব উপজেলার সব নদ-নদীর পানি এখনও বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত হাওড়াঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকায় মেঘনা, কালনী, কুশিয়ারা, ধনু, ঘোড়াউত্রা, ধলেশ্বরীসহ সব নদীর দুই কূল ছাপিয়ে নিচু জমির পাশাপাশি উঁচু জমিও এখন ডুবতে শুরু করেছে। পানির চাপে ভেঙ্গে যাচ্ছে একের পর এক বাঁধ। ফলে কয়েকদিনে ইটনা ও তাড়াইল উপজেলাসহ হাওড়ে কয়েকটি বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে আরও ৮ হাজার হেক্টরের বেশি বোরোর ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। জেলা কৃষি বিভাগের সর্বশেষ তথ্যমতে, আগাম বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। তবে চাষিদের দেয়া বক্তব্য ও অন্যান্য সূত্রের খবর অনুযায়ী এর পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর হবে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, হাওড় উপজেলা ইটনার বাদলা ইউনিয়নের নাটুরি ও সিজলীর বাঁধ ভেঙ্গে থানেশ্বর, বর্শিকুড়া, শিমলা ও রাইটুটি এলাকার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এছাড়া তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার, সাচাইল, দামিহা, রাউতি, দিগদাইর ও ধলা ইউনিয়নের হাওড়ের বিভিন্ন স্থানে এলাকায় নেনদার বাঁধ ও হুলিয়ারসহ কয়েকটি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে নতুন করে অন্তত ২ হাজার হেক্টর ফসল তলিয়ে যাওয়াসহ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। এদিকে নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিতে কৃষক বাধ্য হয়ে পানির নিচ থেকে তুলে আনছেন নষ্ট হয়ে যাওয়া আধা-পাকা ধান। অন্যদিকে হাওড়াঞ্চলে বছরের ৬ মাস পানির নিচে থাকা একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন সাধারণ কৃষক। জেলা প্রশাসক মোঃ আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জেলার সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়াঞ্চলসহ ৯ উপজেলায় আবাদকৃত বোরোর জমির পরিমাণ সর্বমোট ১ লাখ ২৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ২৭ হেক্টর (ক্ষতির হার ৪৪.০৯%) জমির বোরো ধান আগাম বন্যায় নষ্ট হয়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে, ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে ২ লাখ ১ হাজার ৩০৫ মে. টন চাল উৎপাদিত হতো যার আর্থিক মূল্য ৮০৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৫ কৃষক। জেলা প্রশাসক আরও জানান, আগাম বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, নিকলী, বাজিতপুর, ভৈরব, তাড়াইল ও হোসেনপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে নগদ ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ৫৩৫ মে. টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে সহায়তা হিসাবে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫শ’ টাকা জুলাই মাস পর্যন্ত দেয়া হবে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পুনর্বাসন ও সহায়তার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ১৩টি সুপারিশ পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সুপারিশগুলো হলো হচ্ছেÑ জরুরী ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া, বিশেষ ভিজিএফ/ভিজিডি কর্মসূচী চালু করা, ওএমএস চালু করা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রয় কার্যক্রমে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, গৃহপালিত প্রাণীর জন্য বিনামূল্যে গোখাদ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করা, আগামী বোরো মৌসুমের আগে কৃষি উপকরণ, সার, বীজ ও নগদ অর্থ সহায়তা করা, বিশেষ কাবিটা/কাবিখা কর্মসূচী চালু করা, কৃষি ঋণের সুদ মওকুফসহ আপদকালীন ঋণ আদায় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, এনজিও ঋণ আদায় কার্যক্রম আপদকালীন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, জেলার হাওড় অধ্যুষিত উপজেলাসমূহে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৭০টি বাঁধ রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই ইতোমধ্যে প্রচ- পানির ঢেউয়ের কারণে ভেঙ্গে গেছে। এতে করে ওইসব এলাকার বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে জানান, অকাল বন্যায় পানি দূষিত হয়ে জেলার চার উপজেলার ৯৮টি হাওড়-বিলে গত এক সপ্তাহে অন্তত ১ হাজার ২শ মে. টন মাছ মারা গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৩৫ কোটি টাকা। আর ক্ষতির শিকার হয়েছেন অন্তত ১৮ হাজার ৫শ’ জেলে পরিবার। এ তথ্য জেলা মৎস্য বিভাগের। মাছের পাশাপাশি এসব প্রাকৃতিক জলাধারে বিপুল পরিমাণ ব্যাঙ, কাঁকড়া, কুঁচে, শামুক প্রভৃতি জলজ প্রাণীও মারা গেছে। জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও ভারি বৃষ্টির পানিতে মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপুতা, খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা, পাঙ্গাসিয়া, রোয়াইলসহ ৮৯টি, মদনের তলার হাওড় ও গণেশের হাওড়সহ পাঁচটি এবং বারহাট্টার কোদালিয়াসহ তিনটি বিলের সম্পূর্ণ বোরো ফসল তলিয়ে যায়। এর দু’সপ্তাহ পরই ১৬ এপ্রিল থেকে হাওড় ও বিলগুলোতে মাছের মড়ক দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেÑ বোয়াল, বাইম, গুলশা, টেংরা, তারা বাইম, ইলিশ, ঘনিয়া, আইর, কাকিলা, পুঁটি প্রভৃতি মাছ। এছাড়া ব্যাঙ, কাঁকড়া, কুঁচে ও শামুকসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা গেছে। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক দুর্গন্ধ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ডুবন্ত জমির কাঁচা ধান গাছ পচে এবং রাসায়নিক ও কীটনাশকের মিশ্রণে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিতে ‘এ্যামোনিয়া’ ও ‘হাইড্রোজেন সালফাইড’ গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অন্যদিকে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। এ কারণে শ্বাসকষ্টে মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। ভারি বৃষ্টি হলে এ সমস্যা কেটে যাবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, হাওড়-বাঁওড়ের এ জেলায় প্রতি বছর ৫৯ হাজার মে. টন মাছ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ মাছ উৎপাদিত হয় হাওড়ের নদী-বিল-ডোবা প্রভৃতি প্রাকৃতিক উৎস থেকে। কিন্তু মাছের মড়কের কারণে এবার উৎপাদন কম হবার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ প্রজনন মৌসুমে মড়ক দেখা দেয়ায় মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, গত মঙ্গলবার যেখানে দশমিক ২ মাত্রা ছিল সোমবার সেখানে দশমিক চার মাত্রা পাওয়া গেছে। রবিবার থেকে মড়ক কিছুটা কমেছে বলেও জানান তিনি। এদিকে পানি দূষণ রোধের জন্য মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে উপদ্রুত হাওড়গুলোতে ১০ হাজার ৩১০ কেজি চুন এবং ১৩৫ কেজি অক্সি সাপলিমেন্ট প্রয়োগ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান জানান, ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে এসব হাওড়ে শীঘ্র মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। ‘মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়’ এদিকে কিশোরগঞ্জে হাওড়াঞ্চলে অকাল বন্যায় বিরাজমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতিকে ‘মনুষ্য সৃষ্ট’ উল্লেখ করে মিট দ্য প্রেসে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে স্থানীয় সদর বিএনপি কার্যালয়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য সেলের সদস্য সচিব ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন আহমেদ সেলুর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপি নেতা অসীম সরকার বাঁধন। এ সময় রফিকুর রহমান, জাবেদ করিম, মেছবাহ উদ্দিন শামীম, সন্দ্বীপ রায়, আতিকুর রহমান পিন্টু, জালাল আহমেদসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ভোটের রাজনীতিকে মাথায় রেখে হাওড়বাসীর প্রয়োজনীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন না করে অপরিকল্পিত প্রকল্পের কারণেই আজকের এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ‘হাওড় মহাপরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার’ নামে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। বন্যা মোকাবেলায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ক্ষেত্র বিশেষে সম্পন্ন হয়েছে ১০ থেকে ৩৫ ভাগ। নিয়মিত নদী খননের মাধ্যমে পাহাড়ী ঢলের পলি অপসারণ না করা, ফসলি জমির ওপর রাস্তা নির্মাণ, সøুইস গেটের ত্রুটি, বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্পে দুর্নীতি এবং গড়িমসির কারণে অকাল বন্যায় হাওড়ের ফসল তলিয়ে গেছে। এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, সরকারী আমলা ও ঠিকাদারদের জন্য হাওড়াঞ্চল বিপন্ন হতে চলেছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে জরুরী খাদ্য সাহায্য চালু, ঋণের সুদ মওকুফ ও নতুন করে ঋণ প্রদান, পানি দূষণ রক্ষায় সরাঞ্জাম প্রদান, জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ ও স্বাস্থ্য শিবির স্থাপনসহ অবিলম্বে হাওড় এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে দুর্গত এলাকা ঘোষণা নিয়ে সম্প্রতি দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিবের বক্তব্যকে ব্যঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানান হয়। সংবাদ সম্মেলনে ইউরেনিয়ামের মিশ্রণের কারণে মাছ ও গবাদি পশুর মৃত্যুর সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত উপায়ে পরীক্ষার দাবি জানান। পরে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে বিএনপি নেতৃবৃন্দের হাওড় এলাকা সফরকালীন সেখানকার বিপর্যয়ের চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
×