ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাবিবুর রহমান স্বপন

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশিক্ষক সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশিক্ষক সঙ্কট

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষক ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ভাল মানের শিক্ষকের সঙ্কট। সর্বোচ্চ মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসছেন না। জাতির উন্নয়নে শিক্ষক সমাজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। টেকসই জাতীয় উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে ভাল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করে মানসম্মত শিক্ষক তৈরি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাজ্ঞ শিক্ষকগণ গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তা বিতরণ করে থাকেন। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও বই লেখার কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করে থাকেন। গত কয়েক বছরে শিক্ষকতা ছেড়ে অনেকে অবসরে গেছেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও অনেকেই চলে যাবেন শিক্ষকতা ছেড়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ ও মেধাবী প্রফেসরগণ অনেকেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবসরে গেছেন। আগামী বছরের মধ্যে আরও অনেকে অবসরে যাবেন। খ্যাতিমান এসব শিক্ষকের অবর্তমানে উচ্চশিক্ষায় সুশিক্ষক সঙ্কটে পড়বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলেও তাদের বেশিরভাগই পূর্বসূরিদের মতো যোগ্য হয়ে উঠতে পারছেন না। গবেষণায় বরাদ্দ হ্রাস পাওয়ায় এবং নতুনদের গবেষণায় অনাগ্রহের কারণেই এমন সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে বলে বিজ্ঞজনদের ধারণা। এছাড়াও শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিও এজন্য বহুলাংশে দায়ী। এক সময় ভাল ফল অর্জনকারী সর্বোচ্চ মেধাবীরাই শিক্ষকতা পেশায় আসতেন। এখন উচ্চশিক্ষার প্রসার হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে পূর্বের মতো মানসম্মত শিক্ষক তৈরি হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ এই পেশা মেধাবীদের টানতে বা আকৃষ্ট করতে পারছে না। আবার যারা আসছেন তাদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতিকরণের ফলে এবং পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে গুরুত্ব না দেয়ার ফলে এই পেশায় অনাগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকতা যে একটা আলাদা পেশা অনেক শিক্ষকই তা ভুলে গেছেন। বেশিরভাগ শিক্ষকই এখন শিক্ষকতাকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছেন। পাবলিক (সরকারী) বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছাত্র ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগ, প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং দৈনন্দিন একাডেমিক কর্মসূচীতে শৃঙ্খলার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে। ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রভাষক নিয়োগে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা আর্থিক লেনদেনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগের অনিয়ম অনেক ক্ষেত্রে শুরু হয় সংশ্লিষ্ট প্রভাষক ছাত্র থাকাকালীনই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগণ বিশেষ পছন্দের শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে তাকে বৈধ বা অনেক ক্ষেত্রে অবৈধভাবে আনুকূল্য দিয়ে ভাল ফল করিয়ে শিক্ষক হিসেবে বিভাগে যোগদানের চেষ্টা করান (পরে তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হন)। আবার কম শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রায়ই অনেক বেশিসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ঘটনা ঘটে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের গবেষণায় দেখা গেছে ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি বিভাগের জন্য ১৪টি বিজ্ঞপ্তিতে ৪৪ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে ৯২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার তথ্য। এভাবে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও মেধা প্রাধান্য পায় না। মেধা থাকলেও ঘুষ প্রদান না করায় চাকরি হচ্ছে না। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে চারটি প্রথম শ্রেণী পাওয়া (এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত) আবেদনকারীর কাছ থেকে প্রভাষক পদে চাকরি পাওয়ার জন্য ১২ লাখ এবং একই পদে তিনটি প্রথম শ্রেণী পাওয়া আবেদনকারীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ বিষয়ক কথোপকথনের চাঞ্চল্যকর তথ্য আমরা সংবাদপত্রে পড়েছি। এভাবে শিক্ষক নিয়োগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অযোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে। এসব শিক্ষক একাডেমিক কাজের চেয়ে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাজে বেশি সময় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অধিকতর নৈরাজ্যময় করে তুলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি, উচ্চশিক্ষার কোর্সে ভর্তি, কেনাকাটা নিয়ে প্রশাসনিক শীর্ষ ব্যক্তিগণ বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। ক্যান্সার নিরূপণের জন্য ‘লিনিয়ার এস্কেলেটর মেশিন’ ক্রয়ের জন্য ৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত মূল্য ধরায় তা ক্রয়ে বাধা প্রদান করে ক্রয় কমিটির কয়েকজন সদস্য। পুরাতন মডেলের ওই মেশিন আর কেনা সম্ভব হয়নি। গত বছর ডিসেম্বর মাসে ২শ’ নার্স নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এডহক ভিত্তিতে ৭১৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি এমন অভিযোগের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত ওই নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য এডহক ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক নার্স নিয়োগের সুপারিশ করে। এই সুযোগে উপাচার্য তার একক ক্ষমতাবলে উল্লিখিত ৭১৯ জনকে নিয়োগ দেন। কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে প্রতি নার্সের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ এম হাদীর সময় কিছুসংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলার পর তা বাতিল করা হয়। আদালত ওই রায়ে আদেশ দেয়, উপাচার্য একক ক্ষমতাবলে কোন নিয়োগ দিতে পারবেন না। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য আদালতের রায় অমান্য করে নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কি করে এত বিপুলসংখ্যক নার্স নিয়োগ দেয়া হলো এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান। ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অযোগ্য শিক্ষকের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আর এমন শিক্ষকরা একাডেমিক কাজের চেয়ে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক কাজে বেশি সময় দিয়ে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। এতে সরকারী বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। যোগ্য বা মেধাবীরা ঘুষ প্রদান করে চাকরি নিতে অনাগ্রহী। তারা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়াকে অপমানজনক মনে করেন। অপরদিকে যারা অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য বা মেধাবী তারা যেনতেন প্রকারে প্রভাব বিস্তার করে চাকরি নিয়ে থাকেন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দুদক দুই দফা তদন্তও করেছে। জানা গেছে দুদুকের একজন কর্মকর্তার আত্মীয়কে চাকরি প্রদান করে তদন্তটি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় ২০১৫ সালে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী যিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন (প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত) তার ভাগ্যে প্রভাষকের পদটি জোটেনি। তার এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সবগুলোতে প্রথম শ্রেণী। অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর ড. আল নকীব চৌধুরীর এক আত্মীয়সহ অপর তিনজনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। একটি সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে অপেক্ষকৃত কম মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিষয়টি দুদক পর্যন্ত গড়ায়। রহস্যজনক কারণে সেই তদন্ত ধামাচাপা পড়ে যায়। বিশেষ বিবেচনায় এসএসসি পাস করেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক তদ্বিরের জোরে চাকরি পেয়েছেন। নিছক জ্ঞানদান শিক্ষার উপজীব্য বিষয় নয়। শিক্ষার্থীকে বিকশিত করে তোলাই শিক্ষার কাজ। যিনি নিজেই সুশিক্ষায় শিক্ষিত নন তিনি কি করে ছাত্রদের জ্ঞানদান করবেন? মানুষের চরিত্র গঠন করাই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। ঘুষের বিনিময়ে বা অনৈতিক প্রক্রিয়ায় যিনি শিক্ষকতার চাকরি পান বা নেন তিনি ছাত্রদের কোন্ নীতিতে চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেবেন? বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বিগত পাঁচ বছর ধরে এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের দাবি করে আসছেন বিজ্ঞজনেরা। একই দাবি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য গত ২৮ মার্চ এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনকল্পে একটি খসড়া আইন অনুমোদন হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের সভায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে সংসদে এতদসংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়। একজন চেয়ারম্যান, চারজন পূর্ণকালীন এবং আটজন খ-কালীন সদস্যের সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবে। কিভাবে এই কাউন্সিল গঠন করা হবে এখন তা দেখার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভিসি, প্রো-ভিসি যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হয়, সেই একই প্রক্রিয়ায় যদি এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হয়, তা হলে কি পরিস্থিতির উন্নতি হবে? যোগ্য-দক্ষ এবং নীতিবান আদর্শ শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে কাজ করার সুযোগ প্রদান করা জরুরী। অন্যথায় এই কাউন্সিল গঠন করে ভাল ফলাফল আশা করা হবে বৃথা। দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে সরকার যদি এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করতে পারে, তা হলে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। স্বায়ত্তশাসনের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে নৈরাজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে একাডেমিক সকল বিষয়ে চলছে অরাজকতা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং মালদার গৌড় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সদ্য প্রতিষ্ঠিত (৫ থেকে দশ বছর)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখেছি স্বল্প জমির ওপর সুপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করে সুশৃঙ্খলতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্লাসসহ সকল কর্মকা- চলছে। আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অবকাঠামো যেমন ইমারত নির্মাণ থেকে শুরু করে যানবাহন ক্রয় সবই করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু উল্লিখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখলাম অবকাঠামো করে দিয়েছে সরকারের গণপূর্ত বিভাগ। তারপর ইমারত হস্তান্তর করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীনে শিক্ষক নিয়োগ কাউন্সিলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক নিয়োগ করার একটি প্রস্তাব করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু ওই প্রস্তাব নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা কেউ করেনি বা আমলেই নেয়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছাত্র ভর্তি ও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে নিয়মশৃঙ্খলা অনুসৃত হয় না। নবীন শিক্ষকদের অনেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। একাডেমিক কাজের চেয়ে তাদের অনেকেরই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাজে আগ্রহ বেশি। গবেষণায় নিয়োজিত হওয়ার চেয়ে অনেক নবীন শিক্ষক প্রক্টর বা আবাসিক হলের হাউস টিউটর হতে অথবা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানে বেশি আগ্রহী। প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণ ও অন্য কারণে যোগ্যদের পরিবর্তে কম যোগ্যদের নিয়োগ দেয়ায় নতুনরা একাডেমিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রকাশনা নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রকাশনাকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে অন্যান্য দেশে। প্রফেসরগণ নবীন শিক্ষকদের গবেষণায় সহযোগিতা করার কথা। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করে তাদের লেখালেখিতে পারদর্শী করে তুলে থাকেন। নবীন শিক্ষকরা এসব ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন হেতু তারা গবেষণায় পিছিয়ে পড়ছেন। একই সঙ্গে হ্রাস পাচ্ছে শিক্ষার মান। শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষকদের কাছ থেকে বিশেষ কিছু জ্ঞানও অর্জন করতে পারছেন না। প্রকাশনার পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রী প্রদানের ক্ষেত্রেও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনিয়ম ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী প্রদানের ক্ষেত্রে সুশাসনের চর্চা দেখা যায় না। নকল করে থিসিস লেখার অভিযোগও করা হয়েছে ইতোমধ্যে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসিকে প্রধান করে একটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম কোন ঘোষণা না দিয়েই কোন্ বিভাগ পরিদর্শনে যাবে এবং ওই বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ের খোঁজখবর নেবে। এমন উদ্যোগ সাধুবাদ পেতেই পারে। তবে এখনই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ব্যাপারে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক যোগ্য বা সর্বাধিক মেধাবীকে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে স্বতন্ত্র শিক্ষক নিয়োগ কমিটি বা কমিশন গঠন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। লেখক : সাংবাদিক
×