স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান বলেছেন, নিবন্ধিত ৮ লাখ ব্যবসায়ীর মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার ব্যবসায়ী ভ্যাট রির্টান দাখিল করেন, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তারমানে বিদ্যমান ভ্যাট আইনে কোন সমস্যা আছে। তবে নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হবেন। এ আইনে সবচেয়ে বেশি রিফান্ড পাওয়া যাবে। নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে যেসব ব্যবসায়ী সচেতন তাদের উচিৎ অন্য ব্যবসায়ীদের এই আইন সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন করে তোলা। ১ জুলাই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার পর প্রথম ৩ থেকে ৪ মাস কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভয় ২ জুলাই থেকে মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট কর্মকর্তারা না জানি আমাদের মুখের উপর নতুন আইন দেখায়। আমাদের ভয়টা এখানে। এটা ঠিক হতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগবে। এই ৩-৪ মাস ভ্যাট কর্মচারীরা যেন নমনীয় হয়। তারা যদি নমনীয় আচরণ করেন তাহলে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে সমস্যা হবে না।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও-এ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) আয়োজিত রাজস্ব সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় বৃহৎ করদাতারা মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা নতুন ভ্যাট আইনের পক্ষে। তবে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা এনবিআরকে দূর করতে হবে।
সালমান এফ রহমান বলেন, যেহেতু নতুন আইন আসছে, ট্রানজেকশন নিয়ে প্রথমে কিছু সমস্যা হতে পারে। ট্রানজেকশন যেন সহজ ও সুচারু হয়। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করার পর নতুন আইন বাস্তবায়নে তিনি আরও দুই বছরের সময় দেন। এই দুই বছরে এনবিআর বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, জনগণকে সচেতন করেছে। তারপরও অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়ে গেছে। পহেলা জুলাই থেতে নতুন ভ্যাট আইন চালু হবে, আমরা এটা গ্রহণ করেছি এবং স্বাগত জানিয়েছি।
ভ্যাট আইন সম্পর্কে সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো ১৫ শতাংশ ভ্যাট ১৯৯২ সাল থেকে দিয়ে আসছি। ১৫ শতাংশ ভ্যাট তো নতুন নয়। নতুন হচ্ছে মাল্টিপল রেইট থেকে কমিয়ে একটা নেটে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এ আইনের মুল কথা হল সবাইকে ট্যাক্সনেটের আওতায় আনা।
বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সুযোগ দিয়েছে। গত ৮ বছরে যেভাবে অর্থনীতি পরিবর্তিত হয়েছে, ব্যবসার আকার বেড়েছে; আমরা এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবো না। এই সময়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বেড়েছে কয়েকগুণ। সরকার সেই অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, নতুন ভ্যাট আইন হবে মসৃণ স্বচ্ছ ও চকচকে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি বলেন, এনবিআরের সর্বশেষ নতুন উদ্ভাবন ভ্যাট যাত্রা। আমি যখন যেখানে যাচ্ছি নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে তুলছি। বিদ্যমান আইন থেকে আরেকটা আইনে যাবো, জনগণকে সচেতন করে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন, শুধু কথায় নয়, এ যাত্রায় আমরা আপনাদের পাশে থাকবো। এটি কোন একক যাত্রা নয়, এটি সম্মিলিত যাত্রা।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক রেজাউল হাসান বলেন, সফলভাবে ভ্যাট অনলাইন কার্যক্রম চালু রয়েছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় প্রচার-প্রচারণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু থাকবে। পহেলা জুলাইয়ের পর থেকে আইন বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে তা আমরা কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ নিবো। নতুন এই ভ্যাট আইন হবে আন্তর্জাতিক মানের।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এনবিআরের শুল্কনীতি (সদস্য) লুৎফর রহমান, মূসকনীতির ব্যারিষ্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, বদরুজ্জামান মুন্সি ও এলটিইউ’র কমিশনার মোঃ মতিউর রহমান। মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলটিইউ’র নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪০ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের আদায়ের তুলনায় ৩০ হাজার ৪১৭ কোটি বেশি। এক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূববর্তী বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। অনুষ্ঠানে এলটিইউর’ পক্ষ থেকে জানানো হয়, এলটিইউ দফতরে ৮০৪ টি মামলা বিদ্যমান যার বিপরীতে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে আপীলত ট্রাইবুন্যালে ৩৯ টি মামলার বিপরীতে ৩ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা, হাইকোর্ট বিভাগে ৬৫৯ টি মামলার বিপরীতে ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা, আপীলত বিভাগে ১৩ টি মামলার বিপরীতে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ৯৩ টি মামলার বিপরীতে ১৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার রাজস্ব জড়িত।
