ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় তলিয়ে গেছে ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল

প্রকাশিত: ০২:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

নওগাঁয় তলিয়ে গেছে ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে নওগাঁয় তলিয়ে গেছে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির আধাপাকা বোরো ধান। ক্ষতি হয়েছে সব্জি ক্ষেতেরও। বোরো ধান কেটে নেয়ার আগ মুহুর্তে ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে শুরু হয়েছে হাহাকার। কেউ কেউ আবার অর্ধেক ভাগে তলিয়ে যাওয়া ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। এরপরও মিলছে না পর্যাপ্ত শ্রমিক। অনেকে নারী শ্রমিক দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন ধান কাটার কাজ। দুর্যোগ মুহুর্তে শ্রমিক না পেয়ে কৃষকরা হা-হুতাশ করছেন। সোমবার সরেজমিনে মান্দা উপজেলার হাটোইর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও তলিয়ে যাওয়া ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। ওই গ্রামের অধিকাংশ কৃষক চলতি মৌসুমে ছাতড়া বিলে তাদের একমাত্র ফসল বোরো ধান রোপণ করেছিলেন। কৃষক আজাহার আলী, সাইফুল ইসলাম, আসাদুল ইসলামসহ আরো অনেকে জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির পানি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পুঙ্গির খাড়ি হয়ে ছাতড়া বিলে এসে পানি জমা হয়েছে। ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নেয়ার আগেই হঠাৎ বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। মাত্র একদিনের ব্যবধানে তলিয়ে যায় মান্দা উপজেলার মাঠের অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান। এদিকে ছাতড়া বিলের পানি কালীতলা হয়ে শিবনদীতে পড়ছে। সেই পানিতে উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের গাংতা, চুকাইনগর মহেশপুর, মনোহরপুর পরানপুর ইউনিয়নের হাটোরই ও পরানপুর, ঠাকুরমান্দা বিলের কোঁচড়া, দেউল, দুর্গাপুর, হাড়কিশোর ও রাধানগর এবং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কুরকুচি, ও শ্যাল্লা বিলের ধান তলিয়ে গেছে। এসব বিলের জেগে থাকা ধানগুলো কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক মিলছে না। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অল্প জেগে থাকা ধান নিয়েও কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নিয়ামতপুর উপজেলার তিলিহারী গ্রাম থেকে চারজন আদিবাসী নারী এসেছেন ছাতড়া বিলে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটতে। এরা হলেন, হিমালী রানী দাস, কাঞ্চন মালা, শান্তি রানী দাস ও ফুলমতি রানী। দৈনিক ২৫০ টাকা মজুরি ও দুই বেলা খাবার চুক্তিতে তারা এ কাজ করতে এসেছেন। হাটোইর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আবুল কাসেম জানান, অর্ধেক চুক্তিতে শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন তারা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সারা বছর খাবারের চিন্তায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। উপজেলার গাংতা গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, পরানপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিন, মফিজ উদ্দিন, দেউল গ্রামের ওমর আলী, কোঁচড়া গ্রামের নুর মোহাম্মদ সোনাসহ আরো অনেকে জানান, এ বছর বোরো ধানের চাষ করতে ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে তাদের ঋণ নিতে হয়েছে। এছাড়া বাঁকিতে কিনেছেন সার ও কীটনাশক। শেষ মুহুর্তে এসে ফসল হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে তাদের। নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ও বলিহার ইউনিয়নের নীচু জমির ধান তলিয়ে গেছে। দুবলহাটি ইউনিয়নের মনসুর বিলে পানি বৃব্ধি পাওয়ায় কৃষকের ধান ডুবে গেছে। অপরদিকে কীর্তিপুর ও বর্ষাইল ইউনিয়নে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির সব্জি ক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে উজানের নেমে আসা ঢলের পানিতে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী চরের উঠতি ফসল বিশেষ করে ভুট্টা, বাদাম, পিঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া এবং বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা এই প্রতিবেদককে জানান, উল্লেখিত পরিমার জমির বোরো ধান তলিয়ে গেলেও রবিবার- সোমবার তেমন বৃষ্টি হয়নি। আগামী দু-চার দিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে মাঠের বোরো ধানের তেমন একটা ক্ষতি হবেনা বলে দাবী করেন তিনি।
×