ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে বয়লার বিস্ফোরনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে

প্রকাশিত: ০১:১৮, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

দিনাজপুরে বয়লার বিস্ফোরনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরে একটি অটোমেটিক রাইসমিলের বয়লার বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনোরঞ্জন রায় (৩৬) নামে একজন শ্রমিক মারা যান। এ নিয়ে ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরনে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। আর চিকিৎসাধীন আটজনের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। দিনাজপুর সদর উপজেলার ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর গোসাইপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে চলছে শোকরে মাতম। সুবল ঘোষের যমুনা অটো রাইস মিলে ১৯ এপ্রিল ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরন হয়ে ২২ জন গুরুতর আহত হয়। আহতদের দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে, সোমবার নিহত রিপনের স্ত্রী মোমেনা বেগম কোতয়ালী থানায় মিল মালিক সুবল ঘোষকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ মামলার আসামীদের গ্রেফতারের তৎপরতা শুরু করেছে বলে কোতয়ালী থানা পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়াও দিনাজপুরের রানীগঞ্জে প্রতিদিন কোন না কোন বাড়ীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুলখানী। সেই সাথে চলছে দাফন কাজ। হাসপাতালে চিকিৎসাধিন দগ্ধদের কারো না কারো মৃত্যু ঘটছে। সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেলো, এখনো নিহতদের পরিবারগুলোর কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। মৃত রোস্তম আলীর ছেলে সেলিম হোসেন জানান, তাদের গোটা পরিবারটি নির্ভর করতো বাবার উপার্জনের উপর। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাদের সকলের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। উপজেলার ভবানীপুর গিয়ে দেখা যায়, বয়লার বিস্ফোরনে মারা গেছে, এমন পরিবারের সদস্যরা আগামী দিনগুলো নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছেন। এখন পর্যন্ত মিল মালিকের কোন সাহায্য-সহযোগিতা তারা পায়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে মিল মালিক এগিয়ে আসেননি। হাসপাতালে গুরুতর আহতদের পরিবারগুলো উৎকন্ঠায় রয়েছে কখন যে কার মৃত্যুর খবর আসে! তারা নির্ঘুম অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি কোন বাড়ীতে চলছে কুলকানী আর কোন বাড়ীতে চলছে লাশ দাফন। নিহত ও আহতদের পরিবারগুলো মিল মালিকের উপর চরম ক্ষুব্ধ। মিল মালিক দুর্ঘটনার দিন ১৯ এপ্রিল থেকে সোমবার ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কোন খোজ-খবর নিতে আসেনি এবং তার কোন প্রতিনিধিও পাঠাননি। নিহত মোকছেদ আলীর ছেলে মতিউর রহমান জানান, ক্ষতিপূরন বা সাহায্য তো দুরের কথা, শোকাহত পরিবারের একটি বারও খবর নেয়নি মিল মালিক ও তার লোকজন। দিনাজপুর জেলা চাতাল শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক সাইফুর রাজ চৌধুরী জানান, ত্রটিপূর্ন বয়লারের বিষয়ে বার বার মিল মালিককে অভিযোগ করা হলেও, তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। মিল মালিক সুবল ঘোষকে গ্রেফতার ও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপুরন দাবী জানান তিনি। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, হতাহতদের পরিবারকে তাৎক্ষনিক কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এধরনের ঘটনা রোধে মন্ত্রনালয়ের মতামত চাওয়া হবে। দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর নেতৃত্বে একটি ৬ সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার রিপোর্ট দাখিল করবেন বলে আশা করছি। রিপোর্ট এর পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য গত ১৯ এপ্রিল দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জের শেখহাটি এলাকায় যমুনা অটো রাইস মিলের ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরন হয়। এত দগ্ধ হয় ৩০ জন। ২৮ জনকে নেয়া হয় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দগ্ধদের অবস্থার অবনতি হলে রাতেই পর্যায়ক্রমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জনকে স্থানান্তর করা হয়। ২৪ এপ্রিল সোমবার পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যু তালিকায় একই পরিবারের ৩ জন সদস্য রয়েছেন।
×