ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১ জুলাই থেকে প্রায় সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট

ভ্যাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

ভ্যাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীন যখন তাদের দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ৫৫ বিলিয়ন ডলার ভ্যাট কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, ঠিক তখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় আগামী ১ জুলাই থেকে প্রায় সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আগাম চাপে। চীনের মানুষ যাতে কেনাকাটা বাড়িয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে মূলত সেজন্যই এ ছাড় বলে জানিয়েছে দেশটির স্টেট কাউন্সিল। অথচ বাংলাদেশে কমানোর তো দূরের কথা বাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত সরকার। এদিকে শিল্পের বিকাশ, বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই মন্ত্রী এ নিয়ে পড়েছেন চরম চিন্তায়। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে কোন সমঝোতায় নারাজ। তিনি ব্যবসায়ীদের তুলে ধরা আতঙ্ক, শিল্প খাতের ওপর এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব আমলে না নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে বড় শিল্প মালিক সবার কাছ থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে চান। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেই একমাত্র ভরসা মানছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ১ জুন নতুন বাজেট ঘোষণায় ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে সহনীয় পর্যায়ে না নামালে শেখ হাসিনার কাছে যাবেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘প্রগ্রেসিভ’ রাজস্ব ব্যবস্থার নামে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। এরপর ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন সংসদে পাস হয়, যেখানে অল্প কিছু পণ্য বাদে বাকিগুলোতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানোর কথা বলা হয়েছে। তখন থেকেই ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে এ আইন প্রয়োগ করতে পারেনি সরকার। ২০১৮ সালের শেষে সংসদ নির্বাচনের আগে আগামী অর্থবছরই পুরো বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ পাবেন অর্থমন্ত্রী। তাই আগামী অর্থবছর থেকেই এ আইন বাস্তবায়ন করে ১৯৯১ সালে ভ্যাট আইন প্রয়োগ করার সময়কার অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মতো স্মরণীয় হতে চান তিনি। ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রী কয়েক দফা এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার এনবিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বলেছে, সংস্থার কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে শৈথিল্য, উদ্যোগহীনতা বা উদাসীনতা দেখালে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন ভ্যাট আইনে তাদেরও আপত্তি নেই। প্যাকেজ ভ্যাট, টার্নওভার ট্যাক্স বিষয়েও তাদের খুব একটা সমস্যা নেই। তবে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ কেবল ভোক্তাদেরই চাপে ফেলবে না, পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কেনার সামর্থ্য কমে যাবে, যা চূড়ান্ত বিচারে শিল্পের উৎপাদন কমিয়ে দেবে। এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে, কর্মসংস্থানে, সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। নতুন আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভ্যাট বাড়ার সঙ্গে কমবে আমদানি পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক। অর্থাৎ আমদানি পণ্যের দাম কমে যাবে। একদিকে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে আমদানি পণ্যের মূল্য হ্রাস দেশের শিল্পপণ্যকে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলে দেবে। তাই ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি দেশী শিল্প সুরক্ষার ব্যবস্থা চান ব্যবসায়ীরা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে বিতর্ক চললেও সরকার এর বাস্তবায়ন থেকে সরে আসবে না। কারণ এর পরের অর্থবছরের সর্বোচ্চ ছয় মাস পরই নির্বাচন হবে। তাই এখনই এটি বাস্তবায়ন শুরু না করলে তা আর সম্ভব হবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনের পরে সরকার আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে। গত রবিবার সচিবালয়ে অর্থ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান, হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ, এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। পরে অর্থমন্ত্রী নিজের অনড় অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। আর ভ্যাট ১৫ শতাংশই থাকবে। অর্থমন্ত্রীর এই অবস্থানের সঙ্গে একমত নন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি ভ্যাট কমানোর পক্ষে। তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবার জন্য সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ভ্যাট কমানো বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে রাজি করানোর সাধ্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের।
×