ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের অনুষ্ঠানমালা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের অনুষ্ঠানমালা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃষ্টি ঝরা বিকেলে বাজছে ঢাক-ঢোলের বোল। সেই বোলের তালে চলছে নৃত্যশিল্পীদের নাচ। ছোট-বড় সকলেই শামিল হলো সেই আনন্দ আয়োজনে। এরপর নাচটি রূপ নেয় শোভাযাত্রায়। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় মিলনায়তন থেকে বেরুনো উচ্ছ্বাসমাখা শোভাযাত্রাটি একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তনের গিয়ে শেষ হয়। মিলনায়তনের লবিতে ফুলে ফুলে ফুলে সাজানো আল্পনার মাঝে রাখা প্রদীপটি প্রজ্জ্বল করা হয়। আর এমন সব আনুষ্ঠানিকতার হেতু ছিল বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনা। আগামী ২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস উপলক্ষে রবিবার থেকে শুরু হলো নৃত্যানুষ্ঠান ও মেলায় সাজানো অনুষ্ঠানটি। রবিবার বিকেলে চিত্রশালা প্লাজায় মেলা উদ্বোধন করেন নৃত্যশিল্পী সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা নৃত্যগুরু রাহিজা খানম ঝুনু। সন্ধ্যায় মূল আনুষ্ঠানিকতা ছিল একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। আলোচনা ও নৃত্যানুষ্ঠানে সাজানো পর্বটির প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশ নেন সংস্থার উপদেষ্টা লায়লা হাসান, আমানুল হক ও সাজু আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সভাপতি নৃত্যশিল্পী মিনু হক। লায়লা হাসান বলেন, দেশে আবার কালো থাবা মেলে ধরেছে জঙ্গীবাদ। আর জঙ্গীবাদকে পরাজিত করতে হলে সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। সংস্কৃতির শক্তিতে ভর করে মোকাবেলা করতে মৌলবাদকে। এ লক্ষ্যে শিল্পী সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আলোচনা শেষে ছিল সংস্থার শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনা। সোমবার থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত চিত্রশালা প্লাজায় চলবে মেলা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণের মঞ্চে রাজধানীর বিভিন্ন নৃত্য ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিবেশনায় থাকবে নৃত্যানুষ্ঠান। ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে এ উৎসবের সমাপনী আয়োজন। জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি থাকবেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলা এবং আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ। এ বছর নৃত্য দিবসের আজীবন সম্মাননা জানানো হবে নৃত্যজন ইলিয়াস হায়দারকে। সমাপনী দিনের সকালে মঙ্গল নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নৃত্য দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। কপিরাইট দিবসের সেমিনার কপিরাইট আইনের প্রয়োগ নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা যথেষ্ট নয় বলেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাদের জন্য কপিরাইট তাদের মধ্যেও এ বিষয়ে কোন সচেতনতা নেই। আমরা কপিরাইট অফিস ও এর কার্যক্রমকে তাদের সামনে ঠিকমতো তুলে ধরতে পারিনি। যদি পারতাম তাহলে সংস্কৃতি অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে যেতে পারত। রবিবার আন্তর্জাতিক কপিরাইট দিবস উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কপিরাইট অফিস শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষায় কপিরাইট আইনের ভূমিকা : বাংলাদশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান। কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কপিরাইট বোর্ডের সভাপতি মশিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন লিরিসিস্ট কম্পোজার পারফর্মার এ্যাসোসিয়েশনের (বিএলসিপিএস) প্রধান নির্বাহী সুজিত মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আতিক রহমান, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরিচালক খান মাহবুব প্রমুখ। সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং এ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক মোঃ মাহফুজুর রহমান, শেখ জিনাত শারমিন, শিল্পী বেগমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ সঙ্গীত, প্রকাশনা ও সফটওয়্যার শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, কপিরাইট আইনের কিছু ত্রুটি থাকলেও, যা আছে তাই যদি ঠিকমতো প্রয়োগ করা যেত তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম। কপিরাইট নিয়ে যে টাস্কফোর্স আছে তাও তেমন কার্যকর নয়। এরও নানাবিধ কারণ আছে। আসলে সব পক্ষের সম্মিলিত পদক্ষেপই পারে ভাল ফলাফল দিতে। আমরা অচিরেই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে চাই। এ কমিটি সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে কপিরাইট আইনের প্রয়োগ, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও আইনের দুর্বলতা নিরূপণ করে তা সংশোধনে ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নেবে। ইব্রাহীম হোসেন খান বলেন, কপিরাইট বিষয়ে আমাদের অবস্থান হতাশাব্যঞ্জক। আমাদের অক্ষমতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কপিরাইট অফিসে বাজেট, লোকবল ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। আমরা অচিরেই তা কাটিয়ে উঠতে পারবো। বিদ্যমান কপিরাইট আইনের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন আইনটির খসড়া প্রণীত হয়েছে। মূল প্রবন্ধে মশিউর রহমান বলেন, সারা পৃথিবীতে শিল্পসম্পদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও কপিরাইট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কপিরাইট নিবন্ধন ঐচ্ছিক হওয়ায় বাংলাদেশে সৃজনশীল ব্যক্তিরা তাদের সৃজিত কর্মের নিবন্ধন করতে আগ্রহী হন না। এ অসচেতনতার কারণে বাংলাদেশে কপিরাইট আইনের সঠিক প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ সুজিত মোস্তফা বলেন, ‘বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন এমনকি বিটিভি বা বাংলাদেশ বেতারেও শুধু গীতিকারকে রয়্যালটি দেয়া হয়, সুরকার ও শিল্পীকে দেয়া হয় না। উন্নত দেশে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রাজস্ব আসে মেধাসম্পদ থেকে। আমাদের দেশেও মেধাসম্পদের অভাব নেই। সচেতন হলে এ ক্ষেত্রে আমরাও এগিয়ে যেতে পারি।
×