ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিনভর কুয়াশায় ঢাকা আকাশ, এ কেমন বৈশাখ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

দিনভর কুয়াশায় ঢাকা আকাশ, এ কেমন বৈশাখ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিতে চলছে শীত ও বর্ষাকালের আবহ। এটাকে আবহাওয়ার স্বাভাবিক অবস্থা বলে চালিয়ে যাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। কিন্তু বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে উল্টো কথা। গত বছর এই সময়ে ছিল দাবদাহ। তীব্র গরমে দুর্ভোগে পড়ে দেশবাসী। আর এ বছর কয়েকদিন ধরে দেশের আকাশজুড়ে ফুটে উঠেছে বর্ষার বৈশিষ্ট্য, মেঘলা আকাশ। গত চব্বিশ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় দুই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত কয়েক যুগেও গ্রীষ্মকালে একদিনে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। দেশের কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। শত শত হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। যা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। বয়ে যায়নি মাঘের হিমেল হাওয়া। গ্রীষ্মের তপ্ত কাঠফাটা রোদে বের হওয়া দুর্বিষহ হওয়ার কথা থাকলেও গরম কাপড় ছাড়া বাইরে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলবাসীর। সূর্যের দেখা মেলেনি কয়েকদিন ধরে। ঢাকার আকাশ শুধু মেঘলাই না, বস্তুত দিনভর ছিল কুয়াশায় ঢাকা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এনসো চক্রের তিনটি ধাপÑ এল নিনো, লা নিনা এবং এ দুটি যখন প্রবল থাকে না, তখন তাকে বলা হয় এনসো নিউট্রাল। এল নিনো হলো শুষ্ক মৌসুম, এ সময় গরম বেশি পড়ে, বৃষ্টি কম হয়। আর লা নিনার সময় বেশি বৃষ্টি এবং বেশি বন্যা দেখা যায়। তাপমাত্রাও কমে যায়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এতদিন এল নিনোর প্রভাবে গরম বেশি পড়েছিল। এখন আবার কমতে শুরু এল নিনোর প্রভাব। ফলে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের আবহাওয়াও। প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা প্রশমিত হয়ে এসেছে। এ থেকে আভাস মিলছে এল নিনো দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লা নিনা অর্থাৎ এল নিনোর সম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের আবহাওয়ার ধারা গড়ে ওঠার ৭৫ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হলে এবারের গ্রীষ্মে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, সাইক্লোন দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদরা। গত শীতকালের বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকালেও আবহাওয়ার ব্যতিক্রম আচরণ ছিল লক্ষ্য করার মতো। গত মাঘ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবার ফুটে উঠেনি হাড় কাঁপানো মাঘের বৈশিষ্ট! ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদটি মিথ্যা হয়ে যায়। মাঘ মাসে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করে মাত্র। ফেব্রুয়ারি মাসেও ছিল না তীব্র শীতের পূর্বাভাস। তীব্র শীত ছাড়াই মাঘ মাসের বিদায় ঘটে। গত শীতে ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় থাকে শীতের তীব্রতা! কনকনে শীতে কাঁপতে হয়নি দেশবাসীকে। মাঝারি ধরনের শীত পড়লেও স্বাভাবিকের কাছেই ঘোরাফেরা করে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শীতের মাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও গত বছরের মতো মানুষের হাড় কাঁপাতে পারেনি। জানুয়ারিতেও পুরো বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে পারেনি শীতকাল! এভাবে প্রতিবছর বদলে যাচ্ছে ছয় ঋতুর বৈশিষ্ট্যসমূহ। গ্রীষ্মে শীত এবং শীতে গ্রীষ্মের আবহ প্রত্যক্ষ করছে বাংলাদেশের মানুষ।
×