ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্র এলাকায় কৃষি জমিতে প্রতিষ্ঠান গড়ছে কারা?

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

বরেন্দ্র এলাকায় কৃষি জমিতে প্রতিষ্ঠান গড়ছে কারা?

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ উত্তরের চলনবিল থেকে শুরু করে পুরো বরেন্দ্র ভূমিকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চিহ্নিত গোষ্ঠী কর্মসূচী নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যেই উত্তরাঞ্চলকে দুটি জোনে বিভক্ত করে অঘোষিত কর্মসূচী শুরু করেছে। এ অঞ্চলে একাধিক পাবলিক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য স্কুল ও মহাবিদ্যালয় রয়েছে। গোষ্ঠীটি কৌশল পরিবর্তন করে তাদের আয়ত্তে আনতে চাচ্ছে তরুণদের। তারা বরেন্দ্র কৃষিজমিকে ব্যবহার করে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে মনোযোগ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এতিমখানা, মসজিদ, মক্তব ও মাদ্রাসা গড়ার কাজ। বিশেষ করে সীমান্তের কাছাকাছি এসব প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হচ্ছে, যাতে ভারতের পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদ ও মালদহসহ একাধিক জেলাকে ব্যবহার করতে পারে। নির্জন বরেন্দ্রর মৌজা আবিলন্দা। কাজীপাড়ার কাছাকাছি মৌজাটি আমনুরা জংশনগামী সড়কের ধারে। আবার এখান থেকে পাকা রাস্তা ধরে পদ্মার ধারে লালগোলা হয়ে মুর্শিদাবাদ পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টার পথ। তাই তারা বেছে নিয়েছে আবিলন্দা মৌজা। ইতোমধ্যে কয়েক শ’ একর আবাদযোগ্য ফসলের জমির ওপর নির্মাণ করেছে মসজিদ ও এতিমখানা। বিশাল চত্বরজুড়ে এতিমখানার অবস্থান। এ এলাকার মৌলবাদী গোষ্ঠীরা টার্গেট করেছে হাজার একর জমির। তাই আশপাশের চাষযোগ্য জমি কেনার জন্য চড়ামূল্য দেয়ার প্রলোভন দিচ্ছে জমির মালিকদের। বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি করেছে বহুতল ভবন। ঘোষণা দিয়েছে এতিমখানা হিসেবে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো তৈরিসহ জমি কেনার কাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এসব অর্থের উৎস মধ্রপ্রাচ্যের একাধিক দেশ। তারা নানান উপায়ে অর্থ পাঠাচ্ছে এখানে। তবে অধিক অর্থ আসছে হুন্ডির মাধ্যমে বলে জানা গেছে। যারা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে তাদের সিংহভাগ বিশেষ রাজনৈতিক দলের আদর্শে উদ্বুদ্ধ। তাদের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে অর্থ যোগানের ব্যাপারটি ড্রিল করে থাকে বা দেখাশোনা করে স্থানীয় একটি সংস্থা। তাদের মাধ্যমেই বিদেশ যাওয়ার শর্তানুসারে তারা উপার্জনের একটি অংশ এখানে পাঠিয়ে থাকে। ওই অর্থে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলাতেই তাদের শাখা রয়েছে। এদিকে ইতোমধ্যে তারা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। যে শিবগঞ্জকে বলা হয়ে থাকে আতঙ্ক বা সন্ত্রাসের জনপদ। তাদের লক্ষ্য উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় যতগুলো সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার দ্বিগুণ মাদ্রাসা তৈরি করা, যাতে লেখাপড়া করবে গরিব শ্রেণী থেকে উঠে আসা ছেলেমেয়েরা। আর এসব কারণেই তারা ইসলামী কমপ্লেক্স তথা মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা তৈরির আড়ালে প্রস্তুত বা তৈরি করছে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র কৃষিজমি ধ্বংস করে। সাধারণ গরিব কৃষকদের তাদের মুখাপেক্ষী করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। কৃষিজমিতে এসব বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান গড়ার ব্যাপারে অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব রয়েছে। অর্থের উৎস খোঁজ করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান কৃষিজমি নষ্ট করলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপরন্তু অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণের একাধিক কর্মকর্তা এ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে নির্জন এলাকায়। এসব এলাকা সম্পর্কে প্রশাসনের কোন ধারণা নেই।
×