ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মান্দায় কোটি টাকা নিয়ে এনজিও কর্মকর্তা উধাও

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

মান্দায় কোটি টাকা নিয়ে এনজিও কর্মকর্তা উধাও

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ মান্দায় গ্রাহকের অন্তত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পল্লী শিশু ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, চৌবাড়িয়া বাজার শাখার ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন। এরিয়া ম্যানেজার আতিকুর রহমানের সহযোগিতায় সঞ্চয় ও মঞ্জুর ঋণের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে লাপাত্তা হয় সে। ঘটনায় সংস্থার পক্ষে ওই শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মান্দা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। রবিবার ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গ্রাহকদের অভিযোগ, ঋণ নেয়ার জন্য তিন শ’ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, দুই কপি ছবিসহ তাদের প্রত্যেককে দিতে হয়েছে ব্যাংক এ্যাকাউন্টের স্বাক্ষরিত দুই থেকে তিনটি করে ফাঁকা চেক। ঋণের টাকা হাতে না পেলেও এনজিওর ওই শাখা কার্যালয়ে তাদের জমা রয়েছে এসব ডকুমেন্ট। এ অবস্থায় ভবিষ্যত ঋণ পরিশোধের শঙ্কায় তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। চরম ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে তাদের মাঝে। সংস্থার এরিয়া ম্যানেজার আতিকুর রহমান গ্রাহকের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিছু অনিয়মের কারণে শাখা ব্যবস্থাপক কামাল হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। গ্রাহকদের ঋণের টাকা বিষয়ে সমস্যা হলে সেগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। তবে প্রোগ্রাম অফিসার আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, ওই শাখা ব্যবস্থাপককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঋণ দেয়ার জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ফাঁকা চেক নেয়ার কোন বিধান নেই। শাখা ব্যবস্থাপক এ ধরনের কাজ করে থাকলে তা মতো সঙ্গত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সংস্থার গ্রাহক বাঁকাপুর গ্রামের ইনতাজ আলী জানান, চৌবাড়িয়া বাজারে তার পেইন্টিং ব্যবসা রয়েছে। এ সংস্থা থেকে মাসিক কিস্তিতে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেয়ার জন্য ১৫ হাজার সঞ্চয় ও দুইটি ফাঁকা চেক জমা দিয়েছেন। এ সঞ্চয় জমার বিষয়ে শাখা ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন তাকে কোন কাগজপত্র দেননি। মঞ্জুরকৃত ঋণের টাকা উত্তোলনের জন্য চেক না দিয়ে নগদ টাকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন ওই কর্মকর্তা। পরে টাকা না দিয়ে রাতারাতি তিনি উধাও হয়ে যান। হুসেনপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন এক লাখ টাকার জন্য ১০ হাজার, বাঁকাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন পাঁচ লাখের জন্য ৫০ হাজার, মাদারীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম পাঁচ লাখের জন্য ৪০ হাজার, আইওরপাড়া গ্রামের চয়ন উদ্দিন ম-ল দেড় লাখের জন্য ১৫ হাজার, হুসেনপুর গ্রামের মালেকা বেগম তিন লাখের জন্য ৩০ হাজার টাকাসহ ৫০ জনেরও বেশি গ্রাহকের কাছে একইভাবে সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন ও তাদের নামে ঋণ মঞ্জুর করেন শাখা ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন। মঞ্জুর ঋণের টাকাও তাদের দেয়া হয়নি বলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অভিযোগ। গ্রাহকরা আরও জানান, ঋণ মঞ্জুরের আগে এরিয়া ম্যানেজার আতিকুর রহমান প্রত্যেক গ্রাহকের বাড়ি পরিদর্শন করেন। তার উপস্থিতিতে গ্রাহকরা ওই শাখা ব্যবস্থাপকের হাতে সঞ্চয়ের টাকা প্রদান করেন। কিন্তু তাদের দেয়া জমা টাকারও কোন ডকুমেন্ট দেয়া হয়নি। টাকা গ্রহণ না করেও এখন তাদের মাথার ওপর ঝুলছে ঋণের বোঝা। তারা আরও দাবি করেন, যেসব গ্রাহক ওই সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে কিস্তি পরিশোধের জন্য তাদের পাস বহি দেয়া হয়নি। ঋণের কিস্তি পরিশোধের টাকা আদৌ তাদের নামে জমা হয়েছে কি-না এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে তারা।
×