ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রানা প্লাজা ট্র্র্যাজেডি ও ঘুরে দাঁড়ানো তৈরি পোশাক শিল্প

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

রানা প্লাজা ট্র্র্যাজেডি ও ঘুরে দাঁড়ানো তৈরি পোশাক শিল্প

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির চতুর্থ বর্ষপূর্তি আজ। ২০১৩ সালে আজকের এই দিনে সংঘটিত রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত ও আহত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের আমরা সমবেদনা জানাই। যারা আহত হয়েছিলেন, তাদেরও সহমর্মী আমরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই মানুষগুলোর সঙ্গে আরও কিছু মানুষের মিলিত প্রয়াসই আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই কর্মীদের শ্রমে ও ঘামে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্তত পোশাক খাতে পরিচিতি পেয়েছে ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধস আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পকে বড় এক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল। পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ ও কর্মরত কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। রানা প্লাজা ধসের পর স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হয়। যে কোন দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে সেই দেশের শিল্পের ওপর। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিদেশে ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’ ইমেজ সৃষ্টি করেছে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প। কর্মসংস্থান, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে রেখেছে বিশেষ ভূমিকা। এই শিল্প টিকিয়ে রাখা শুধু নয়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের পাশাপাশি সরকার তথা রাষ্ট্রের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রায় ১১৩৮ জন নিহত এবং ২০০০ জনের বেশি শ্রমিক আহত হন। এই ট্র্যাজেডির পর সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রানা প্লাজার মালিককে গ্রেফতারসহ এ ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারকে অনুদান এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসা প্রদান ও পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং এখনও সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে সংস্কার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ এ সেক্টরে উত্তরোত্তর উন্নতি, মজুরি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের শ্রম আইনের যুগোপযোগী সংশোধন উল্লেখযোগ্য। সরকার ‘নিম্নতম মজুরি বোর্ড’ গঠনের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শ্রমিক-কর্মচারীদের নিম্নতম মজুরি দুই ধাপে প্রায় ২০০% বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া সংশোধিত শ্রম আইন কর্মপরিবেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে স¤পর্কোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। যুগোপযোগী ট্রেড ইউনিয়ন গঠন নীতিমালা প্রণয়নসহ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও রানা প্লাজা ও পরবর্তী পরিক্রমায় বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং বিজিএমইএ কর্তৃক প্রশংসনীয় এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেয়া সহায়তা ১. রানা প্লাজা ধসে নিহত ৯৭৬ জনের স্বজনদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ২২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭২০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা যাতে সুবিধা পায়, সে জন্য ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনদের প্রত্যেককে (বাবা, মা, ভাইবোন, স্ত্রী বা স্বামী) আলাদাভাবে চেক দেয়া হয়েছে। ২. প্রধানমন্ত্রী ২২টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য ১ কোটি ৪২ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আহত উদ্ধারকর্মী কায়কোবাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠাতে ৩৫ লাখ এবং অশনাক্ত শ্রমিকদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন। ৩. প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে গুরুতর আহত ৪১ জনের প্রত্যেককে ১০-১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। ৪. প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৯৬২ জনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ৫. সহায়তার প্রথম পর্যায়ে নিহত এক শ’ শ্রমিকের পরিবারপ্রতি দু’লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া পদক্ষেপ ১. ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২. বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) ২০১৩ প্রণয়ন। ৩. রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতপূর্বক ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠন নীতিমালা যুগোপযোগী করা হয়েছে। ৪. বাংলাদেশের সব পোশাক কারখানার মানোন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল এ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আইএলওর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি ত্রিপক্ষীয় যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যার প্রেক্ষিতে ত্রুটিপূর্ণ কারখানাগুলোতে সংস্কার কার্যক্রম চলছে। ৫. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে কারখানা মহাপরিদর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। ৬. কারখানাগুলো কার্যকর পরিদর্শনের জন্য সাম্প্রতিক শ্রমবিধির আলোকে শিল্পখাতের সব কারখানাকে সমন্বয় করে শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন চেকলিস্ট তৈরি করা হচ্ছে। ৭. সরকারের উদ্যোগে নিহতদের ১৪ অনাথ শিশুকে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ হোমে আশ্রয় ও শিক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ১৭টি শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ৮. দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ৭৭৭ জনকে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছে। ৯. সরকারী প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তহবিলে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠান জমা দিয়েছে। ১০. পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ জাতীয় নীতি ২০১৪ প্রণীত হয়েছে। ১১. খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ১২. অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও কাঠামোগত নিরাপত্তা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। ১৩. কারখানা নিবন্ধন, কেমিক্যাল ও পরিবেশ সনদ প্রদান প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধনে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এখন আমরা দৃষ্টি দিতে চাই বিজিএমইএর দিকে। কী করেছে বিজিএমইএ। প্রাপ্ত তথ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছিÑ ১. বিজিএমইএর পক্ষ থেকে চিকিৎসা, বেতন ও অন্যান্য সুবিধা, প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে অনুদান, গর্ভবতী শ্রমিকদের সহায়তা, উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম এবং অন্যান্য খাতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ২. রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির শিকার হওয়া ২৬ জন শ্রমিককে বিজিএমইএ, হোপ বাংলাদেশ, সিআরপি, সিডিডি ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে কৃত্রিম অঙ্গ সরবরাহ করা হয়েছে। ৩. রানা প্লাজাসহ অন্যান্য পোশাক কারখানায় সংঘটিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় যেসব শ্রমিক অঙ্গহানির শিকার হয়েছে, তাদের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং এ বিষয়ে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান বিষয়ে বিজিএমইএ, এওত, ওঈজঈ ঔঈজচ যৌথভাবে ঙৎঃযড়ঃরপং ্ চৎড়ংঃযবঃরপং শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বিজিএমইএ এ প্রকল্পে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। ৪. সর্বমোট উদ্ধারকৃত (আহত অবস্থায়) প্রায় ২৪০০ জনের মধ্যে ৮৫০ জনকে বিজিএমইএর সহযোগিতায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। ৫. রানা প্লাজার মোট পাঁচটি পোশাক কারখানার ২৮৩৪ শ্রমিক-কর্মচারীকে বিজিএমইএ বেতন-ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া মোট ১২ গর্ভবতী শ্রমিকের প্রত্যেককে ৩৫,০০০ টাকা অনুদান দিয়েছে। ৬. প্রায় ২৩৯ আহত শ্রমিককে সিআরপিতে কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ৭. রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক ‘আন্না’ ক্যা›সার আক্রান্ত হয়েছিল। বিজিএমইএর উদ্যোগে মহাখালী ক্যা›সার হাসপাতালে ভর্তি করায় ও তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বিজিএমইএ বহন করে। ৮. বিজিএমইএ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রায় ২ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করে। ৯. বিজিএমইএ ৫৮ এতিম শিশুর দায়িত্ব নিয়েছে ও তাদের পেছনে বিজিএমইএ প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা খরচ করছে। ১০.২ জন নিহতের ৪ জন এতিম ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করছে। ১২. বিজিএমইএর প্রত্যক্ষ তৎপরতায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় কর্মহীন হয়ে পড়া ১৪২ জনকে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় যোগাযোগ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। পোশাক খাত বিষয়ে টিআইবির প্রতিবেদন ২০১৬ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত টিআইবির ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন : অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ঐ প্রতিবেদনে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের বহুমুখী উদ্যোগে পোশাক খাতের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিশেষ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনী ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর গত তিন বছরে এই ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। টিআইবি জানিয়েছে, পোশাক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও স্টেকহোল্ডারদের নেয়া ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ৭৭ শতাংশ উদ্যোগের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে অগ্রগতি এসেছে। তবে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন ও শ্রমিক অধিকারের মতো ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে কিছু কিছু দুর্বলতা ও ধীরগতি এখনও সুস্পষ্ট। শ্রমিক ছাঁটাই ও ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের হয়রানি এবং শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারার অপব্যবহারও বন্ধ হয়নি। টিআইবির মতে, ‘সার্বিক বিবেচনায় পোশাক খাতের সুশাসন নিয়ে গর্ব করার জায়গায় এসেছে বাংলাদেশ। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে প্রধান শিল্প খাতে এত অগ্রগতি বিশ্বের আর কোন দেশে সম্ভব হয়নি। তবে তাজরীন ফ্যাশনস কারখানার অগ্নিদুর্ঘটনা এবং রানা প্লাজা ধসের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত এ কথা বলা যাবে না, এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’ টিআইবি আরও উল্লেখ করেছে, ‘রানা প্লাজা ধসের পর ব্যাপক সংস্কারে ব্যয় যোগ্য অর্থের কথা মাথায় রেখে পোশাকের দর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রেতারা। কিন্তু তারা সে কথা রাখেননি। পোশাকের দর বরং কমেছে। গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দর কমেছে ৪১ শতাংশ।’ টিআইবির আরও একটি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ‘অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও কিছু কিছু অগ্রগতি এখনও কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। এগুলো কার্যকর করতে হবে। কারখানা মালিকদের মানসিকতায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তবে ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়টি এখনও অনেকে মেনে নিতে পারেন না। জীবনযাত্রার ব্যয় অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি গ্রহণযোগ্য কি-না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।’ সুশাসনের ঘাটতি পূরণে এ সংস্কারের ধারা অব্যাহত রাখা, পোশাক খাতের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনসহ ১০টি সুপারিশ করা হয় টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে। টিআইবির এ ১০টি সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় তদারকি ও সমন্বয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা, যেসব কারখানা বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর সদস্য নয়, সেসব কারখানার টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। এ ছাড়া এতে রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনায় বিভিন্ন মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা, শ্রমিক ডাটাবেজ গঠন, দ্রুত সাব-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালা গঠন ও শ্রমিক সংগঠন এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিতে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম আইনের বিধিমালা অনুমোদন ও ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৬ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মজুরি বাড়ানো হয়েছে। মালিকদের পক্ষ থেকে ৯৫ শতাংশ কারখানায় ন্যূনতম মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সংস্কার এবং অগ্নিমহড়া দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। ক্রেতাদের পক্ষ থেকে ইউরোপ এবং মার্কিন জোট এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের সব কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক মানসংক্রান্ত প্রাথমিক পরিদর্শন শেষ হয়েছে। পরিদর্শনে চিহ্নিত ত্রুটির ৪৪ শতাংশ সংশোধন হয়েছে। এছাড়া সফলভাবে তিন কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। শেষ কথা আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক বিপর্যয় এড়িয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রমনিষ্ঠ কর্মী, সরকার ও মালিকপক্ষের সম্মিলিত প্রয়াসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এ দেশের মানুষের আবেগ ও ভালবাসার ঐকান্তিক শুভ কামনায়। এই ঘুরে দাঁড়ানো শিল্পকে আরও বেগবান করার দায়িত্ব আমাদের। লেখক : নাট্যজন
×