ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখে আষাঢ়ের মেঘ!

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

বৈশাখে আষাঢ়ের মেঘ!

বৈশাখের আকাশে ঘনকালো মেঘ। মেঘনা ব্রিজের ওপর থেকে তোলা নয়নাভিরাম এই ছবিটি ছাপা হয়েছে শনিবারের জনকণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায়। তবে দৃষ্টিনন্দন হলে কী হবে, এই মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর বজ্র। ভারি বৃষ্টিপাত ও বিদ্যুত। সত্যি বলতে কি চৈত্র-বৈশাখ মাসের সন্ধিক্ষণ থেকে শুরু হয়েছে আবহাওয়ার এই অদ্ভুত আচরণ ও খামখেয়ালিপনা। মার্চ-এপ্রিলের এই অসময়ে হঠাৎ করে সিলেটের সুবিস্তীর্ণ হাওড়াঞ্চলের কাঁচাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে। এতে উঠতি ফসলের সমূহ ক্ষতি তো হয়েছেই, উপরন্তু হাওড় থেকে ভেসে উঠেছে ছোটবড় মাছ, ব্যাঙ, জলজপ্রাণী, সর্বোপরি হাঁস ও অন্যবিধ পাখপাখালি। এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ধানগাছ পচে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে বেড়েছে এ্যামোনিয়া-মিথেনের পরিমাণ। কেউ কেউ ভারতের মেঘালয়ের ইউরেনিয়াম ও কয়লাখনির বর্জ্যবাহিত পানির দ্বারা দূষণের কথাও বলছেন। তবে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ না করে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না কিছুই। অন্যদিকে, একটানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহর প্রায় পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বন্দর ও বাণিজ্যনগরীর চেহারা দাঁড়িয়েছে সুইমিংপুলের মতো। রাজধানীসহ সারাদেশেই পরিলক্ষিত হচ্ছে আবহাওয়ার এই অতি অদ্ভুত ও উদ্ভট আচরণ। এটা কি জলবায়ুর অনিবার্য পরিবর্তন নাকি অন্যকিছু। বৈশাখের শুরুতেই কেবল আষাঢ়ের ঘনকালো বজ্র-বিদ্যুতবাহিত মেঘের আনাগোনা! বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বা ডিএমডির তৈরি আবহাওয়া এ্যাপ গুগল প্লে স্টোর থেকে দেশের দৈনন্দিন আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে থাকে। এই যেমন, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাতাসের গতিপ্রবাহ ও বায়ুচাপ, আকাশের অবস্থা, ঝড়-বৃষ্টি বজ্রপাতের খবরাখবর। চাই কী ভূমিকম্প কিংবা সুনামির আদৌ কোন পূর্বাভাস থাকলে, তাও। সে প্রেক্ষাপটে তারা নিজেরা স্বউদ্যোগে সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। জানমাল ও সম্পদহানি ঠেকাতে নেয়া যেতে পারে যথাযথ ব্যবস্থা ও পরামর্শ। দেশের বিভিন্ন অংশে স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া মনিটরিং সেন্টার থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যাদি প্রদর্শিত হবে এই এ্যাপ্লিকেশনে। এতে করে নাগরিক সমাজের বাইরে অবস্থানরত বিপুলসংখ্যক গ্রামবাসীসহ কৃষক সমাজের উপকৃত হওয়ার কথা। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে। শত প্রতিকূলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশের কৃষক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফসল ফলাচ্ছে অক্লান্ত পরিশ্রম করে। অবশ্য এর জন্য যথাযথ সরকারী আনুকূল্য ও সহায়তা তারা পাচ্ছে। বর্তমানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এমনকি কিছু পরিমাণে খাদ্যশস্য রফতানিও হচ্ছে বিদেশে। তবে এক্ষেত্রে কৃষকের পাশাপাশি আবহাওয়া ও প্রকৃতির দয়া ও দাক্ষিণ্যের কথাও অস্বীকার করা যায় না। তবে এহেন অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে সর্বদাই বিরাজ করবে, এমন কথা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কেননা, বর্তমানে শুধু বাংলাদেশেই নয়; বরং বিশ্বব্যাপীই পরিলক্ষিত হচ্ছে জলবায়ু ও আবহাওয়ার বৈরী এবং খামখেয়ালিপনা। যে কারণে বৈশ্বিক প্রকৃতি ও পরিবেশ রীতিমতো হুমকি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বাংলাদেশও এই বৃত্তের বাইরে নয়। প্রকৃতি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আবহাওয়ার এহেন নেতিবাচক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলে কিছুকাল পরে বাংলাদেশের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। প্রকৃতির এই অবক্ষয়ের জন্য প্রধানত দায়ী মানুষ। মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণেই বর্তমানে প্রকৃতির এই দুরবস্থা। বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণসহ বন কেটে বসত, নির্বিচারে শিল্প-কারখানা ও উন্নয়ন, অপরিকল্পিত বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ করে নদ-নদীর গতিপথ পরিবর্তন ইত্যাদি বিরূপ প্রভাব ফেলছে প্রকৃতি ও পরিবেশে। সে অবস্থায় মোবাইল এ্যাপ সর্বস্তরের মানুষকে দৈনন্দিন আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্যাদি জানানোর পাশাপাশি সচেতন করে তুলতে পারে প্রকৃতির আসন্ন বিপদ-আপদ সম্পর্কে। এর পাশাপাশি সরকারকে হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে জরুরীভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
×