স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গাজীপুরে এক পরীক্ষার্থীনীকে এক মাসের কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় আরো ৩ পরীক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। রবিবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাদিয়া আফরোজ এ দন্ড দেন।
দন্ডপ্রাপ্তের নাম ফারহানা সুলতানা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তেলিপাড়া এলাকার ওসমান খানের মেয়ে ফারহানা গাজীপুর সরকারী মহিলা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জানান, রবিবার সকালে এইচএসসি’র হিসাব বিজ্ঞান দ্বিতীয় বিষয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর আগে গাজীপুর জেলা শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ কেন্দ্রে প্রবেশের সময় ফারহানা সুলতানা নামের এক পরীক্ষার্থীনীর কাছ থেকে ওই কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ একটি মোবাইল ফোন জব্দ করে।
তারা মোবাইলের হোয়াটস্ আপ নামের একটি গ্রুপ অ্যাপস পরীক্ষা করে তাতে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার উত্তরসহ প্রশ্নপত্রের সন্ধান পান, যা রবিবার অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। খবর পেয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ও গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাদিয়া আফরোজসহ পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে যান।
তারা এ ব্যাপারে পরীক্ষার্থীনী ফারহানা সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে স্থানীয় গাজীপুর সরকারী মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে একই বিষয়ের অপর দুই পরীক্ষার্থী আসিফ উদ্দিন খান ও ওমর ফারুক সাব্বিরকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী নাফিস আনামকে শহরের উত্তর বিলাসপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়।
তাদের কাছ থেকে আলামতসহ একটি ট্যাব ও দুইটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এদের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব চান্দনা এলাকার আলাউদ্দিন খানের ছেলে আসিফ উদ্দিন খান ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজের, উত্তর বিলাসপুর এলাকার আক্তার হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক সাব্বির গাজীপুর মেট্রোপলিটন কলেজের এবং একই এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাফিস আনাম কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে।
জিজ্ঞাসাবাদকালে আটককৃতরা জানায়, আসিফ উদ্দিন খান ফেসবুকে হোয়াটস আপ নামের একটি গ্রুপ অ্যাপস্ খুলে। এ গ্রুপে আটককৃতরাসহ বেশ কয়েক এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে। তারা ‘অভিশপ্ত ব্যাচ’ নামের অপর একটি অ্যাপস থেকে দেড়শ’ টাকার বিনিময়ে প্রতিজনের জন্য প্রতিটি প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে তিনশ’ টাকা করে বিক্রি করে। হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের ১মপত্র ও আইসিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ ও সরবরাহ করে। অভিশপ্ত ব্যাচ’র জন্য আদায়কৃত টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
পরে আটককৃতদের গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাদিয়া আফরোজ নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ফারহানা সুলতানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। এসময় আটক অন্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তাদেরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এদিন ফারহানা সুলতানা, আসিফ উদ্দিন খান ও ওমর ফারুক সাব্বিরকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জয়দেবপুর থানার এসআই সাইদুর রহমান জানান, ফারহানা সুলতানাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং আটক অন্যদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
