ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ার কেলেঙ্কারী মামলায় খালাস পেলেন রউফ ও সাইদ এইচ চৌধুরী

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

শেয়ার কেলেঙ্কারী মামলায় খালাস পেলেন রউফ ও সাইদ এইচ চৌধুরী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় র‌্যাংস গ্রুপের কর্ণধার এম এ রউফ চৌধুরী ও এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ এইচ চৌধুরী খালাস পেয়েছেন। একইসঙ্গে অভিযোগ থেকে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রবিবার শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিচারক বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ১৯৬৯ অধ্যাদেশের ২৪ ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামী এম এ রউফ চৌধুরী, সাঈদ এইচ চৌধুরী ও কোম্পানি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজকে এ মামলা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হলো। আদালতে রায় ঘোষণাকালে আসামি এম এ রউফ চৌধুরী, সাঈদ এইচ চৌধুরী, আসামীপক্ষের আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম, আব্দুস সালাম খান, আলহাজ্ব মো. বোরহান উদ্দিন ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা খান, আব্দুল্লাহ এম রফিকুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাঈদ এইচ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত জীবনে কোন কলঙ্ক ছিল না। আর ভবিষ্যতেও থাকবে না। তবে ১৯৯৬ সালে কিছু দুষ্টু লোকের সাথে পরিচয় হয়। যা পরে বুঝতে পারি। যে কারনে মামলায় জড়াতে হয়েছে। অথচ প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে টাকাও ফেরত পাইনি। অন্যরা কোম্পানি বেনামে বিক্রয় করে টাকা আত্মসাত করে। কোন অপরাধ না করেও অভিযুক্তদের হয়রানি হতে হয়েছে বলে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী আলহাজ্ব মো. বোরহান উদ্দিন। এতে সুনাম ও সময় উভয়ই নষ্ট হয়েছে। অথচ বিএসইসি সচেতনতার সাথে মামলা করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। বরং বিএসইসি ভালো কিছু ফল পেতে পারত। প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পরে তা বিএসইসিতে দাখিল করা হবে। এর আলোকে উচ্চ-আদালতে আপিল করবে কি না তা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। এ মামলার আসামীরা হলেন- প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজসহ প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এম এ রউফ চৌধুরী, পরিচালক সাঈদ এইচ চৌধুরী ও আনু জায়গীরদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান। তবে এ মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। যা আগামি ২ মে পর্যন্ত কার্যকরি। যে কারণে শুধুমাত্র প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ, এম এ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরীকে নিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। এই মামলায় মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজে দুই দফায় ৬ মাস করে এক বছরের স্থগিতাদেশ দেয় উচ্চ আদালত। প্রথমবার ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল এ বিচারকাজে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে ২৯ নবেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। এর আগে ১০ এপ্রিল বাদি ও বিবাদি উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ওইদিন আসামীপক্ষের আইনজীবী আলহাজ্ব মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, মামলায় দায়ের করা পিটিশন অসম্পূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া ক্রটিপূর্ণ পিটিশন দায়ের করা হয়। যেখানে অভিযুক্তদেরকে দোষী হিসাবে সাব্যস্ত করার মতো কোন প্রমাণাদি নাই। এর আগে ২১ মার্চ এ মামলার আসামী সাঈদ এইচ চৌধুরী সাফাই সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ সময় তিনি কোন অপরাধ করেননি এবং কোন অপরাধের সাথে জড়িত নন বলে জানান। সততার সঙ্গে ব্যবসায় করেছেন বলে উল্লেখ করেন। সাফাই সাক্ষী প্রদানের পর বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান তাকে জেরা করেন। অন্যদিকে ৮ মার্চ আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এ মামলার আসামি এম এ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরী। এদিন এম এ রউফ চৌধুরী আত্মপক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি নিজেই সাফাই সাক্ষী প্রদান করেছিলেন। এর আগে ১৮ জানুয়ারি এ মামলার ৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ডিএসই’র মহা-ব্যবস্থাপক রুহুল খালেক, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন ও বিএসইসি’র সহকারী পরিচালক এনামুল হককে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। আর ১ মার্চ অপর সাক্ষী মনিরউদ্দিন আহমেদকে জেরা করা হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নবেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে।
×