ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমেছে

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সীমান্তবর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সফল সমন্বিত কার্যক্রম চালানো না হলে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমেছে। নিয়ন্ত্রণ নয়, চিরতরে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচীতে নেমেছে বাংলাদেশ। আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণে ম্যালেরিয়াজনিত স্থানীয় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কর্ম পরিকল্পনা চলছে। এক্ষেত্রে পার্শ্ববতী দেশসমূহেও ম্যালেরিয়া নির্মূলে সফলতা আসতে হবে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার পালিত হবে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘ চিরতরে ম্যালেরিয়া হোক অবসান’ । রবিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর ভবনের সম্মেলনকক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ব্র্যাক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লাইন ডিরেক্টর ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ, জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. এ মান্নান বাঙ্গালী, ব্র্যাকের ম্যালেরিয়া ও ওয়াশ কর্মসূচীর প্রধান ডা. মো. মোকতাদির কবির প্রমুখ। ডা. নজরুল ইসলাম তাঁর মূল প্রবন্ধে বলেন, ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলার ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভবা রয়েছে। প্রতি বছর দেশের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর মধ্যে প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ সংঘটিত হয়ে থাকে এই ১৩টি জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রামে। দেশে গত তিন বছরে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৪৮০ জন। ২০১৫ সালে তা কমে ৩৯ হাজার ৭১৯ জনে এবং ২০১৬ সালে আরো কমে ২৭ হাজার ৭৩৭ জনে দাঁড়ায়। তবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার ৮ জন বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে এই রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের , সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ জনে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করা একটি কঠিন কাজ। ম্যালেরিয়া নিমূলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ডোবা, গর্ত, নর্দমা ইত্যাদি যেখানে মশা ডিম পাড়ে ও বংশ বিস্তার ঘটায় সেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নয়। এটি আরেকটি মন্ত্রণালয়ের কাজ। অর্থাৎ সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ম্যালেরিয়া নির্মূল করা যাবে না। তবে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বেশ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ একা সফল হলেই চলবে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারেও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সফলতা আসতে হবে। মহাপরিচালক বলেন, জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ব্যাপক সফলতায় দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ এখনো নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ম্যালেরিয়া নির্মূলের বিষয়টি এখন আঞ্চলিক পর্যায়ে চলে গেছে। আঞ্চলিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে নির্মূল কার্যক্রম প্রত্যাশা করা যাবে না। পার্শ্ববর্তী/ সীমান্তবর্তী দেশসমূহে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এবং আন্ত: সীমান্ত চলাচল/ পারাপারকারীর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের প্রবণতা রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় দুর্বল যাতায়াত ব্যবস্থা এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর দেরিতে চিকিৎসা গ্রহণের ঘটনাও ঘটে থাকে। পার্বত্য এলাকায় উপসর্গবিহীন ম্যালেরিয়ার আবির্ভাবও দেখা যাচ্ছে এবং বিভিন্ন গোত্রভেদে ভাষাগত জটিলতা রয়েছে। মশার প্রজাতি(ম্যালেরিয়া, বাহক) ও আচরণ পরিবর্তনও পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনও বিশেষ করে অত্যধিক গরম এবং থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ইত্যাদিও ম্যালেরিয়ার প্রবণতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
×