ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে কমলেও দেশে বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ২১ এপ্রিল ২০১৭

বিদেশে কমলেও দেশে বাড়ছে

আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়াদুধ, ছোলা, লবণ ইত্যাদির দাম কমলেও দেশে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। এর একটি আপাত কারণ হতে পারে যে, সামনেই রমজান। এ নিয়ে নানা কারসাজি ব্যবসায়ীরা করে থাকে প্রতিবছরই। তবে সিলেটের হাওড় অঞ্চলে হঠাৎ অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে চালের বাজারে। এর বাইরেও তেজীভাব বিরাজ করছে অন্যান্য নিত্যপণ্যেও। সরকারী বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসেবেই মিলেছে দাম বৃদ্ধির এই চিত্র। সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা। এর পাশাপাশি অস্থির হয়ে উঠেছে অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করেন ক্রেতারা। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছেন। কখনও বলছেন, আকস্মিক মৌসুমী বৃষ্টিপাত, কখনওবা বৈশাখ মাস, কখনও বলছেন চাহিদা বেশি, যোগান কম ইত্যাদি। কেউ কেউ বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করায় ব্যবসায়ীরা চাল আনছেন না। ফলে চাপ পড়েছে দেশীয় চালে। অথচ ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর এমনটি হওয়ার কথা নয়। রমজান আসতে এখনও কিছু দিন বাকি। অথচ এর মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজার। ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, ছোলা, ডাল, রসুন ও গুঁড়া দুধের দামের পারদ ক্রমশ উঠছে ওপরে। আটার দাম আপাতত স্থিতিশীল থাকলেও চালের বাজারে অস্থিরতা। মৌসুমী বৃষ্টিপাত তাতে যোগ করেছে অতিরিক্ত ইন্ধন। এর অনিবার্য প্রভাব পড়েছে শাক-সবজির বাজারেও। তবে সর্বাধিক উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দামে। গাবতলীসহ গরুরহাট এবং সীমান্তে গরু চোরাচালান নিয়ে প্রবল টানাপোড়েন চলতে থাকায় মাংসের বাজার বেশ চড়া। এর প্রতিবাদে মাংস ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট ডাকতে যাচ্ছেন আগামীতে। জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করা হোক। মাংসের দামের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে মাছ, ডিম ও দুধের বাজারেও। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, ডাল, লবণ, গুঁড়া দুধ, চিনি ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের দাম কমা সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে কেন অযৌক্তিকভাবে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের। গরম মসলার দামও মনিটরিং করা বাঞ্ছনীয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রো চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো খুবই শক্তিশালী এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অস্বীকার করা যায় না। জাতীয় সংসদেও ব্যবসায়ীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ এক রকম উপেক্ষিত ও অনালোচিত থাকছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
×