ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দৃশ্যপট দক্ষিণ এশিয়া ক্ষমতার শীর্ষে এলেও নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

দৃশ্যপট দক্ষিণ এশিয়া ক্ষমতার শীর্ষে এলেও নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হয়নি

রাজনীতিতে নারীদের শীর্ষে আরোহণের ঘটনা ভারত উপমহাদেশে যেমনটি দেখা যায় বিশ্বের আর কোথাও তেমনটি দেখা যায় না। ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, পাকিস্তানের বেনজীর ভুট্টো, মিয়ানমারের অংসান সুচি সবই বিখ্যাত নাম। তবে শ্রীলঙ্কাই প্রথম দেশ সেখানে একজন নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট পদেও ছিলেন নারী। মুসলিম প্রধান দেশ এবং সে দেশের জনসংখ্যা জার্মানি ও ফ্রান্সের মিলিত জনসংখ্যার চেয়েও বেশি সেই বাংলাদেশ গত ২৫ বছরের মধ্যে ২২ বছরই নেতৃত্ব দিয়েছেন নারী। আর ভারতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু পর্যন্ত বেশকিছু রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেছেন নারীরা। অথচ সামগ্রিক বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের অবস্থা ভাল নয়। ক্ষমতার শীর্ষ পদে নারীদের আগমন ঘটলেও প্রকৃতপক্ষে নারী সমাজের ক্ষমতায়ন তেমন ঘটেনি। নারী শিশু হত্যা বন্ধ ও নারী শিক্ষার প্রসারের মতো দুএকটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে চিত্রটা হতাশাব্যঞ্জক এবং লিঙ্গ বিভাজন অতি প্রকট। ভারতে কর্মজীবীদের ২৭ শতাংশ নারী যা কিনা চীন, ব্রাজিল এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেকেরও কম যদিও তা পাকিস্তানের তুলনায় সামান্য বেশি। ২০১২ সালের এক পারিবারিক জরিপে দেখা যায় যে, চার পঞ্চমাংশ ভারতীয় নারীর স্থানীয় ক্লিনিকে যেতে হলে স্বামী বা পরিবারের অনুমতি নিতে হয়। এদের এক-তৃতীয়াংশ একা সেখানে যেতে সক্ষম নয়। অর্ধেকেরও বেশি জানায় যে, কারোর সমর্থন ছাড়া তারা দোকানে, এমনকি বন্ধুর কাছেও যেতে পারে না। অনেকের কাছে বাড়ির বাইরে যাওয়ার ব্যাপারটাই ভয় পাওয়ার মতো। ৭০ শতাংশ বলেছে যে, বাড়ির বাইরে কাজ করতে যাওয়া অনিরাপদ বলে তাদের মনে হয়। ৫২ শতাংশ নারী মনে করে যে কোন নারী স্বামীকে না বলে বাইরে গেলে সে যদি স্বামীর দ্বারা প্রহৃত হয় সেটা স্বাভাবিক। অবশ্য বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত ভারতীয় নারীর স্বাধীনতার ক্রমশ প্রসার ঘটেছে। অনুভা ভোশলে নামে এক টিভি কর্মী ১৫ বছর আগের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন তিনি নিজে স্কুটার চালিয়ে অনেক রাস্তা দিয়ে যেতে শুরু করেন। ব্যাপারটা তার কাছে যেমন বিচিত্র লাগত তেমনি অনেকে একজন নারীকে একাকী স্কুটার নিয়ে চলাচল করতে দেখে অবাক হয়ে যেতেন। আর আজ কেউ তাকিয়েও দেখে না। কিন্তু তারপরও অনেক পেশায় মেয়েদের বলতে গেলে খুব কমই দেখা যায়। ভারতের উচ্চ আদালতগুলোর ৭শ’ বিচারকের মধ্যে মহিলা ১০ শতাংশও নয়। আর ভারতীয় প্রশাসনিক সার্ভিসের ৫ হাজার অফিসারের মাত্র ১৭ শতাংশ মহিলা। রাজনীতিতে মহিলাদের উপস্থিতি এত সামান্য যে সেটাকে বিরলও বলা যেতে পারে। লোকসভার মাত্র ১২ শতাংশ এমপি মহিলা। রাজ্য বিধানসভাগুলোরও অবস্থা মোটামুটি একই। সত্যবটে যে আসনগুলোয় মহিলাদের ভাগ বেড়েছে। তবে সেটা অতি ধীরগতিতে। ৫০ বছর আগে লোকসভার মাত্র ৬ শতাংশ এমপি ছিল মহিলা। শুধুমাত্র গ্রাম ও জেলা পরিষদে মহিলাদের সংখ্যাগত দাপট আছে তবে সেটা অংশত আইনগত কারণে। কারণ আইনে বলা আছে, এসব পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ কি অর্ধেক আসন মহিলাদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। সম্প্রতি নাগাল্যান্ডে স্থানীয় নির্বাচনে মহিলাদের বর্ধিত কোটা বেঁধে দেয়ার প্রতিবাদে উপজাতীয় পুরুষরা দাঙ্গা বাধায়। কারণ স্থানীয় প্রথায় মহিলাদের গ্রামপ্রধান হতে মানা। এর মধ্য দিয়ে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে মন্থর অগ্রগতির একটা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। এ অঞ্চলের নারী রাজনীতিকদের সফল হওয়ার জন্য অনেক সময় রণরঙ্গিনী রূপে আবির্ভূত হতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লোকসভার এমপি থাকাকালে একবার এক পুরুষ এমপিকে লোকসভা থেকে কলার ধরে টেনে বের করে নিয়েছিলেন। তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মতো ক্ষমতা ও আচার-আচরণে চেপে যেতে চান তিনি একজন নারী। এ ব্যাপারে তারা বেশ সাবধানীও বটে। সেটা হওয়ার কারণ বোধগম্য। পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীরা নারী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে তারা যে নারী সে বিষয়টিকে কাজে লাগাতে পিছপা হন না। উত্তর প্রদেশের এক রাজনৈতিক দলের নেতা একবার দলিতদের নেত্রী মায়াবতীর বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়েছিলেন যে তিনি একজন গণিকার মতো টিকেট বিক্রি করেছেন। কংগ্রেস নেত্রীর বিরুদ্ধে তার এক সহকর্মী একবার অভিযোগ করেছিলেন যে, তিনি পাকিস্তানের একটি এসকট এজেন্সির পক্ষে কাজ করছেন। ক্ষমতা যাওয়ার পথে এত সব অন্তরায় থাকা সত্ত্বেও এটা মোটেও বিস্ময়কর নয় যে, এ অঞ্চলের অনেক সফল নারী রাজনীতিক শুরুতে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন। গত এক দশকে ভারতের অর্ধেকের বেশি মহিলা এমপি ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে তাদের আগে পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। অনেক সময় বংশীয় সম্পর্ক নাটকীয় কাজও দেয়। যেমন শেখ হাসিনা ও অংসান সুচি দুজনেই নিজ নিজ দেশের স্বাধীনতার জনকের কন্যা। সোনিয়া গান্ধী ও খালেদা জিয়া দুজনেই নিহত নেতাদের বিধবা স্ত্রী। জয়ললিতা ও মায়াবতী দুজনেই রাজনীতিতে এসেছিলেন লোকরঞ্জনবাদী ক্যারিশম্যাটিক নেতাদের অনুগত সহকর্মী হিসেবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×