ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকার অবকাঠামো ঢেলে সাজা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

আমেরিকার অবকাঠামো ঢেলে সাজা হচ্ছে

আমেরিকার বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। এর জন্য নেয়া হয়েছে ‘নেক্সট জেন’ নামে এক কর্মসূচী যা পাল্টে দেবে এতদিনের বিমান চলাচল প্রযুক্তির ধারা। প্রচলিত প্রযুক্তি হলো ১৯৪০ এর দশকের প্রযুক্তি। আর নেক্সট জেন নামে ফেডারেল এ্যাভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও এ্যাভিয়েশন কমিউনিটির যে যৌথ কর্মসূচী নেয়া হয়েছে তাতে এতদিনের বেতার প্রযুক্তিকে পাশে সরিয়ে রেখে সে জায়গায় জিপিএস দিয়ে আমেরিকার আকাশের আধুনিকায়ন ঘটানো হবে। এতে বাঁচবে অর্থ, জ্বালানি ও সময়। ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি এই কর্মসূচীর ব্যাপ্তিকাল কয়েক দশকের। এতে সেই ১৯৪০ এর দশক থেকে চলে আসা বেতার প্রযুক্তি আর থাকছে না। সে জায়গায় আসছে হাইটেক প্রযুক্তি, সুদক্ষ লোকজনের নতুন এক নেটওয়ার্ক এবং পদ্ধতি ও সাজসরঞ্জামের নতুন এক আয়োজন। এতে বিপুল পরিমাণ জেট ফুয়েলের সাশ্রয় হবে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন বহুলাংশে হ্রাস পাবে। বহু দশক ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বিমানগুলোর মধ্যে কয়েক মাইল দীর্ঘ ব্যবধান বজায় রাখতে এবং এভাবে নিরাপত্তা রক্ষা করতে হয়েছে। পুরনো রাডার ব্যবস্থা দৃষ্টিগোচর সীমার মধ্যেই শুধু কাজ করে। ঘণ্টায় ৫শ’ মাইলের বেশি গতিতে চলা বিমানের খবরাখবরের আপডেট দেয় প্রতি ৫ থেকে ১২ সেকেন্ড পর পর। বিমান গ্রাউন্ড বেসড্ এন্টেনা থেকে যত দূরে চলে যায় ততই এন্টেনার অস্পষ্টতা বাড়তে থাকে। এখন অবস্থাটা তা নয়। এখন ফেডারেল এ্যাভিয়েশন এজেন্সির গ্রাউন্ড বেসড্ সেন্সরের সহায়তায় জিপিএস বিমানের অবস্থান সম্পর্কে প্রতি সেকেন্ডে কন্ট্রোলারদের আপডেট দিচ্ছে। ফ্লাইটগুলোকেও আরও কাছাকাছি ব্যবধানে নিরাপদে স্পেস দেয়া যাচ্ছে। ২০২০ সালে আরেকটা ব্যাপারও শুরু হবে। বিশ্বের বড় বড় বিমানবন্দরের চার পাশে অতিমাত্রায় ঘিঞ্জি আকাশপথে উড়ন্ত বিমানগুলোকে অটোমেটিক ডিপেনডেন্ট সাতেইলেন্স ব্রডকাস্ট ব্যবহার করতে হবে। এটি হবে প্রচলিত রাডারের পরিপূরক। স্যাটেলাইটভিত্তিক ব্যবস্থা থাকায় এটি আরও নিখুঁতভাবে অবস্থান জানিয়ে দিতে পারবে। জিপিএসএ উত্তরণের ফলে আরও সরাসরি ফ্লাইটের পথ ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাবে। অনেক ক্ষেত্রে এতে করে জটিল ও ঘুরানো পথ পরিহার করা যাবে। বিমানকে রানওয়েতে নিয়ে আসার জন্য যে এ্যাপ্রোচ ও ল্যান্ডিং পদ্ধতি আছে সেগুলোও আপডেট করে তাতে জিপিএস ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয় ফ্লাইটের পথও সুগম করবে। নেক্সট জেন কার্যক্রমে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে যাতে করে বিমান নামার সময় জ্বালানির ব্যবহার হয় ন্যূনতম। এফএএর হিসেবে দেখা গেছে শুধু ২০১৪ সালেই ‘নেক্সট জেন কর্মসূচীতে ১ লাখ ৭০ হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঠেকানো হয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত ‘নেক্সট জেন’ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে অর্থের বিচারে তার পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। মধ্যে জ্বালানির পরিমাণ কমবে ২৮০ কোটি গ্যালনেরও বেশি। আমেরিকার বিদ্যুত গ্রিডগুলো জীর্ণ পুরনো হয়ে গেছে। সেগুলো এখন যুগোপযোগী করার কাজ চলছে। ২০০৯ সাল থেকে শত শত কোটি ডলারের ফেডারেল অর্থায়নে বিদ্যুৎ গ্রিডগুলোর উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটানো হয়েছে। সেগুলো আরও দক্ষ ও শক্তিশালী এবং যে কোন বিপর্যয়ের মুখে অক্ষত ও টেকস্ই থাকার ক্ষমতাসম্পন্ন করা হচ্ছে। আমেরিকার অবকাঠামোর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হলো এর ২৫ হাজার মাইল অভ্যন্তরীণ জলপথের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত বাঁধ ও ড্যাম। জীর্ণ পুরনো হয়ে নৌযান চলাচলের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে সেগুলোর এখন ব্যাপক সংস্কারে হাত দেয়া হয়েছে। আমেরিকার এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীর ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ নেই। ইন্টারনেট সুবিধার ক্ষেত্রে এই বিভাজন ঘোচানোর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন নগরীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের যে ব্যবস্থা রয়েছে সেটির অবকাঠামো নেটওয়ার্ক পুরনো হয়ে গেছে। এক শ’রও বেশি নগরীর পানি ও পয়োব্যবস্থার উন্নয়নে ফেডারেল বা রাজ্য সরকারের পরিবেশগত ম্যান্ডেট রয়েছে। এর জন্য অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গোটা আমেরিকায় জালের মতো অসংখ্য ট্রেন লাইন ছড়িয়ে আছে। তেমনি আছে টিউব। এগুলো শতাব্দী পুরনো। সেগুলো সংস্কারের লক্ষ্যে এখন কাজ চলছে। কিন্তু কাজটা চাট্টিখানি কথা নয়। রেললাইনসহ গোটা অবকাঠামো এত পুরনো যে সংস্কার কাজ হতে দিলে দৃষ্টান্তস্বরূপ নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির মধ্যে ট্রানজিট ট্রেন ৭৫ শতাংশ কম চলবে। এতে শুধু ম্যানহাটানেই যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে তাতে প্রতিবছর উৎপাদনের ক্ষতি হবে বছরে ৩০ কোটি ডলার ‘টানেল বন্ধ রাখা নিউইয়র্ক, নর্থ ইস্ট তথা গোটা দেশের অর্থনীতির অস্তিত্বের প্রতি হুমকি। তার পরও সমস্যার একটা সমাধান কোনভাবে বের করা হয়েছে। গেটওয়ে প্রোগ্রাম নামে কার্যক্রমে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি ও ম্যানহাটানের পেন স্টেশনের মধ্যকার অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২৪শ’ কোটি ডলার। গেটওয়ে প্রোগ্রাম এমনি অনেক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×