ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মেসিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ভক্ত-সমর্থকরা

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

মেসিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ভক্ত-সমর্থকরা

এমনিতেই শঙ্কার কালো মেঘ। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা খেলতে পারবে কিনা তা নিয়ে শুরু থেকেই আছে সংশয়। এ দোলাচলের মধ্যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। চিলির বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে সহকারী রেফারির সঙ্গে অশোভন আচরণের জন্য জাতীয় দলের হয়ে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। যে কারণে গত ২৮ মার্চ বলিভিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি মেসি। ওই ম্যাচে ২-০ গোলে হেরে গিয়ে আরও বিপাকে পড়েছে আর্জেন্টিনা। দলটির অধিনায়ক খেলতে পারবেন না আরও তিন ম্যাচ। বাছাইপর্বে বাকিই আছে আর মাত্র চারটি ম্যাচ। এখন আপিল করার পর যদি নিষেধাজ্ঞা না কমে তাহলে আর্জেন্টিনার কি হবে তা নিয়ে চিন্তিত বিশ্বব্যাপী তাদের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকরা। কেননা এখন দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে পঞ্চম স্থানে আছে আর্জেন্টিনা। এ অঞ্চল থেকে সরাসরি চারটি দল টিকেট পাবে রাশিয়ার। পঞ্চম হওয়া দলটিকে খেলতে হবে প্লে-অফ। কিন্তু মেসি খেলতে না পারলে শেষ পর্যন্ত প্লে-অফ খেলার সুযোগও হবে কিনা তা নিয়ে ঘোরতর শঙ্কা আছে। এমন দুঃসময়ে মেসির নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে ফুটবল বিশ্বে চলছে তোলপাড়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করা হচ্ছে। চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানাও করা হয়েছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে। ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এ কারণে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে পারেননি মেসি। শুধু তাই নয় উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা ও পেরুর বিরুদ্ধে পরবর্তী তিনটি ম্যাচেও খেলবে পারবেন না। ২৩ মার্চ ঘরের মাঠে চিলির বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় পায় আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচে বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ম্যাচ অফিসিয়ালের সঙ্গে মৌখিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন মেসি। ম্যাচের শেষদিকে মেসির বিরুদ্ধে ফাউলের নির্দেশ দেন রেফারি। এরপর লাইন্সম্যানের উদ্দেশে বার্সিলোনার তারকাকে হাত নেড়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও চিৎকার করতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, লাইন্সম্যান মার্সেলো ভন গাচ্চিকে গালাগালও করেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। এমনকি ম্যাচ শেষে ম্যাচ রেফারির সঙ্গে হাত মেলাতেও অস্বীকৃতি জানান। এ কারণেই কনমেবল গভনিংবডির ডিসিপ্লিনারি কমিটি মেসির বাজে আচরণের জন্য শাস্তি দিয়েছে। মেসিকে দেয়া এ শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করবে আর্জেন্টাইন ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (এফএ)। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সেক্রেটারি জর্জ মিয়াডসকি শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাতে আমরা বিস্মিত। খেলার ঘণ্টাখানেক আগে বিষয়গুলো যেভাবে করা হয়েছে, তাতে আমরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। ফিফার শাস্তির বিরুদ্ধে আমরা আপিল করতে যাচ্ছি। কিছু অতীত উদাহরণ থেকে মনে করছি, শাস্তি কমতে পারে। মিয়াডসকি বলেন, মেসি ব্যথিত, আমরাও। বিষয়টা যেভাবে করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমরা একমত নই। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে মাত্র ১০টি দেশের মধ্যে বিশ্বকাপ বাছাই হওয়ায় হিসাবটা এমনিতেই গোলমেলে। এর মাঝেও ব্রাজিল নিজেদের কাজটা সেরে নিয়েছে। কিন্তু বাদবাকি তিনটি স্থানের জন্য লড়াইটা জমে উঠেছে বেশ। পরের চারটি ম্যাচে জিতলে সহজেই বিশ্বকাপের টিকেট পাবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ঝামেলা সৃষ্টি করছে দুটি বিষয়। এ চার ম্যাচের মধ্যে নিজেদের মাঠের দুই প্রতিপক্ষই তুলনামূলক সহজ। ভেনিজুয়েলা (তলানিতে) ও পেরু (সপ্তম)। কিন্তু প্রতিপক্ষের মাটিতে খেলতে হবে যাদের সঙ্গে, সে দুটো দল উরুগুয়ে (তৃতীয়) ও ইকুয়েডর (ছয়) ভালভাবেই আছে বিশ্বকাপের দৌড়ে। এর মাঝে উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা ও পেরুর বিরুদ্ধে মেসিকে ছাড়াই হয়তো খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। আর মেসি ছাড়া এই আর্জেন্টিনা কতটা ছন্নছাড়া সেটা তো সবাই জানেন। বাছাইপর্বে মেসি খেলেছেন, এমন ছয় ম্যাচের পাঁচটি জিতেছে আর্জেন্টিনা। আর মেসিবিহীন আট ম্যাচে জয় মাত্র একটি। তাই বাছাইপর্বে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মেসি না থাকলে কি হয় সেটা নিয়ে সন্দিহান সবাই। ইতোমধ্যে ১৪ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে রাশিয়ার টিকেট কেটে ফেলেছে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। বাদবাকি চারটি স্থানের জন্য লড়াইটা জমে উঠেছে বেশ। দুইয়ে থাকা কলম্বিয়ার পয়েন্ট ২৪, আবার ১৮ পয়েন্ট নিয়ে আটে আছে প্যারাগুয়ে। তাই সাত দলেরই সুযোগ আছে প্রথম চারে থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে যাওয়ার। অথবা পঞ্চম হয়ে প্লে-অফ খেলে বিশ্বকাপে ওঠার। ২২ পয়েন্ট নিয়ে আর্জেন্টিনা আছে পঞ্চম স্থানে। তাই পয়েন্টের হিসেব মেলাতে গেলে আর্জেন্টিনা খুব একটা খারাপ অবস্থানে নেই। পরের চারটি ম্যাচে পূর্ণ পয়েন্ট তো বটেই, একটু ভাগ্য হাত বাড়ালেই বিশ্বকাপের টিকেট কেটে ফেলতে পারবে আলবিসেলেস্টেরা। বাকি ম্যাচগুলোর মধ্যে উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা ও পেরুর বিরুদ্ধে মেসিকে ছাড়াই হয়তো খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। দুঃসংবাদ আছে আরও আর্জেন্টিনার। টানা তিন ম্যাচ হারলেও প্রতিদ্বন্দ্বী উরুগুয়ের সামনে আর্জেন্টিনা ছাড়া আর কোন কঠিন প্রতিপক্ষ নেই। কলম্বিয়ারও নিজেদের মাঠে ব্রাজিল ম্যাচটা ছাড়া আর খুব বেশি পরীক্ষা দিতে হবে না। সে তুলনায় চিলির সামনের পথটা বেশ কঠিন। ব্রাজিল ও বলিভিয়ার মাঠে গিয়ে খেলতে হবে তাদের। আবার ঘরের মাঠে ইকুয়েডরের সঙ্গের ম্যাচটাও খুব গুরুত্ব পাচ্ছে। দুই দলের মাঝে যে মাত্র ৩ পয়েন্টের পার্থক্য। আর ইকুয়েডরের পরের ম্যাচ কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্রাজিলের সঙ্গেই। চিলি ও ইকুয়েডরের এ কঠিন পথই সাহস দিচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সব হিসাব মিলবে ১০ অক্টোবর। ইকুয়েডরের প্রায় নয় হাজার ফুট উঁচু আটাহুয়ালপা স্টেডিয়ামে। যদি কোন নাটকীয় না ঘটে তবে সেদিনই আবার ফিরবেন মেসি। ওই ম্যাচ দিয়েই হয়তো আবারও দেখা যাবে ম্যারাডোনার সেই সøাইডের মতোই কোন কিছু। ২০০৯ সালের ওইদিনটাও কিন্তু ছিল এমনই এক ১০ অক্টোবর! ম্যারাডোনার স্থলে না হয় অন্য কোন কোচই হলেন। সøাইড না হোক, দুহাত ছুড়ে পাগলাটে চিৎকার করে দৌড়াতে দৌড়াতেও তো অবিস্মরণীয় কিছুর সৃষ্টি করতে পারেন নতুন কোচ হিসেবে যিনি দায়িত্ব পাবেন। এখন জোর গুঞ্জন, ফিফার কাছে ক্ষমা চাইলে নিষেধাজ্ঞা মওকুফ হয়ে যাবে মেসির। কিন্তু আর্জেন্টাইন অধিনায়ক নাকি তাতে রাজি নন। আগামী ৪ মে জুরিখে ফিফার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে হাজির হওয়ার কথা মেসির। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংবদামধ্যমের খবর, মেসি হাজির হলেও, নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছা তার নেই। অথচ সেরা তারকার নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনতে জোর চেষ্টা করছে আর্জেন্টিনার ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)। যত দ্রুত সম্ভব মেসির ব্যাপারটি নিষ্পত্তি করতে চায় দেশটি।
×