ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাজকিয়া নুর মুন

ডি ভিলিয়ার্সের আশায় বসতি

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

ডি ভিলিয়ার্সের আশায় বসতি

ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা যেন ভাগ্যবিড়ম্বিত এক নাম। বর্ণবাদের অপবাদ মাথায় নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে সেই ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর থেকে প্রতিটি বৈষয়িক টুর্নামেন্টেরই হট-ফেবারিট প্রোটিয়ারা। অথচ ১৯৯৮Ñএ প্রথম ‘নকআউট’ ছাড়া কোন ফরমেটেই আর শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরা হয়নি। নকআউট ট্রফিকে নিশ্চই বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করা চলে না। কালের পরিক্রমায় এখন যেটি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ২০১৫ বিশ্বকাপেও ব্যর্থ তারা। একাধিকবার কাছাকাছি গিয়েও বিশ্বকাপ জিততে না পারায় প্রোটিয়াদের সঙ্গী হয়েছে ‘চোকার্স’ অপবাদ। এবার হতাশার এই শব্দটা মুছে ফেলতে চাইছেন দলটির বড় তারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স। সেটা শুরু করতে চান আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পুনরুদ্ধারে মধ্য দিয়ে, অতঃপর স্বপ্নটাকে নিয়ে যেতে চান আরও সামনে, ২০১৯ বিশ্বকাপে। ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বিশ্বশ্রেষ্ঠত্বের অর্জন থেকে আমরা খুব দূরে নই। সেটা হতে পারে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে। দল হিসেবে আমাদের সম্ভাবনা প্রবল এবং এটা করতে আমরা প্রস্তুতও।’ বলেন এবি। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে সেটির নামকরণ হয় ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’, যেখানে আর কখনই শিরোপার স্বাদ পায়নি প্রোটিয়ারা। দেশটির অন্যতম সফল অধিনায়ক (সাবেক) গ্রায়েম স্মিথ অনেকটা আফসোস করে বলেন,‘দুর্ভাগ্যক্রমে চোকার্স-শব্দটা বিশ্বসেরা এক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে!’ আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে সেটি মুছে ফেলতে চান ডি ভিলিয়ার্স। পঞ্চাশ ওভারের বর্তমান অধিনায়ক বিশ্বাস করেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা শিরোপা জয়ের জন্য লড়াই করতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত।’ স্মিথের ধারণার জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় না, এটি জয় করা অসম্ভব। হয়তো স্মিথের জন্য কঠিন ছিল, যখন তিনি খেলেছেন।’ ডি ভিলিয়ার্স আরও বলেন,‘আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এবং ভাল কিছু করে দেখানোর দারুণ এক সুযোগ। ১৯৯৮ সালের পর আমরা আইসিসির কোন ইভেন্ট জিততে পারিনি। তবে জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০১৯ বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে সেটি সম্ভব।’ বর্তমান পারফরমেন্সই এবিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শিরোপা জয় থেকে আমরা খুব বেশি দূরে নই। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আইসিসির কোন শিরোপা না জিততে পারব, ততক্ষণ আমাদের সামনে প্রশ্নগুলো হাজির হবে। সাম্প্রতিক সময়ে দলের পারফর্মেন্স শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে আমাদের। পারফরমেন্স ধরে রাখতে পারলে, ভাল কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে।’ ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপে টানা দু-বার বিশ্বকাপের সেমি থেকে দুর্ভাদ্য ও নাটকীয়ভাবে বিদায়। ২০০৩Ñএ বৃষ্টি আইনের ফাড়ায় সুপার সিক্সে ওঠা হয়নি! ২০০৭ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের কাছে হারের কারণে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া-বাধায় সব শেষÑ ‘চোকার্স’ অপবাদ তো আর এমনিতে যুক্ত হয়নি। ১-১৮ জুন’২০১৭ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসর। ‘বি’ গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আছে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। ‘এ’ গ্রুপে- বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। এবারই প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্ত্রী ড্যানিয়েল ডি ভিলিয়ার্সকেই নিজের বড় প্রেরণাদাতা বলে উল্লেখ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্স। ‘আমার পুরো ক্যারিয়ারে ড্যানিয়েলের অবদান অনেক বেশি। এখনও সে আমাকে সমানে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে।’ বলেন তিনি। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার পর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে এবারের আসরে নিজের প্রথম ম্যাচেই ৪৬ বলে অপরাজিত ৮৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। যদিও সেদিন তার দল হেরে যায় ৮ উইকেটে। পরের দুই ম্যাচে করেন ১৯ ও ২৯ রান। সফল পুরুষের পেছনে একজন মহিলার অবদান থাকে বলে মনে করেন এবি। ‘সব সফল পুরুষের পেছনেই একজন নারীর অবদান থাকে। যেমনটা আছে আমার স্ত্রী ড্যানিয়েলেরও। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে সে আমাকে যেভাবে সহায়তা করে আসছে। পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আমি আমার স্ত্রী’কে ফোন করেছিলাম কারণ, ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর খেলতে নামার আগে কিছুটা সংশয়ে ছিলাম। ড্যানিয়েল তখন ছেলের সঙ্গে ঘুমুচ্ছিল। আমি ওর কাছে জানতে চাই আমার কি করা উচিত? ড্যানিয়েল আমাকে বললো, ওর সমর্থন আমার সঙ্গে আছে এবং আমাকে ঠা-া মাথায় খেলতে বললো। এতেই সাহস অনেকগুণ বেড়ে যায়।’ শুধুমাত্র ম্যাচের আগেই নয়, ম্যাচ শেষে ড্যানিয়েল নিজ থেকে ফোন করে এবিকে আরও বড় সুসংবাদ দেন, ‘প্রথমে আমাকে অভিনন্দন জানায় এরপর বলে, সামনের ম্যাচগুলোতেও তুমি ভালো খেলবে। সামনের ম্যাচগুলোতে আমি তোমার পাশে থাকতে চাই। এ জন্য আমি খুব শীঘ্রই ভারত আসছি। এটি শুনে আমি শিহরিত হয়ে উঠি। জীবনসঙ্গিনীর পাশে থাকাটা অনেক বড় প্রাপ্তি।’ পিঠের ইনজুরির কারণে সম্প্রতি নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েও বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে পারেনি ডি ভিলিয়ার্স। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে আইসিসির বড় কোন শিরোপা উপহার দিতে চান তিনি। প্র্রতিটি বড় বড় টুর্নামেন্টে তারাই হট-ফেভারিট। বিশ্বের মস্তবড় ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং লাইনআপ নিয়ে মাঠে নামে। কিন্তু নামের পাশে যে ‘চোকার্স’ খেতাব রয়েছে সেটা তো আর মুছতে পারে না! অনেক চেষ্টা করেছে, বিনিময়ে কতটুকু সফল হয়েছে, সেটা সবারই জানা। বাংলাতে একটি কথা আছে ‘ছেলে খেলে ভাল কিন্তু বল পায় না’। একদমই! তাদের সামর্থ্য অপ্রতুল কিন্তু বাস্তবতার কাছে তারা বারবারই পরাস্থ। হিমশিম খেতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশকে চোকার্স অপবাদ থেকে মুক্ত করতে চান বড় তারকা ডি ভিলিয়ার্স।
×