ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাজিদ আরাফাত

বিশ্বাসঘাতকতা, ভালবাসা ও রক্তের জবানবন্দীর নাম রুলেট

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

বিশ্বাসঘাতকতা, ভালবাসা ও রক্তের জবানবন্দীর নাম রুলেট

সিদ্ধার্থ ও সাবাতিনি। সম্পর্কে যুগলবন্দী তারা। খানিকটা টক, আবার খানিকটা ঝাল ধরনের সম্পর্ক ছিল সিদ্ধার্থ ও সাবাতিনির। রুলেট মূলত এ যুগলের জীবনেরই গল্প! পৃথিবীতে আবেগের সম্পর্কের একটি স্তরে গিয়ে ভালবাসা যেমন ভালবাসার নিয়মেই বিষাক্ত হয়ে উঠে, তেমনি সম্পর্কের নিয়মেই সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়ে। সবশেষে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, বিশ্বাসঘাতকতার ছলাকলা, রক্তের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত কষ্টের পরিণতির মাধ্যমে ব্যবচ্ছেদ ঘটে যায় একটি যুগলবন্দী মানবিক গল্পের। পৃথিবী থেকে আবারও বিদায় নেয় একটি মানবিক সম্পর্কের মৌলিক ভালবাসার গল্প, যেখানে কঠোরভাবে প্রমাণিত হয় যে, মানব সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তির নাম বিশ্বাসঘাতকতা। এই স্বল্প দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রের নির্মাতা হলেনÑ মোহাম্মদ সামিউল মুঈদ। নির্মাতার প্রথম কাজ এটি। ১২ মিনিটের এ সিনেমার গল্পে পাক ভারত উপমহাদেশের যুগলবন্দী তরুণ-তরুণীর ভালবাসার মনস্তত্ত্বের সঙ্গে ইউরোপীয় ঘরানার সংস্কৃতির একটি মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন পরিচালক। মূলত রুলেট (জঙটখঊঞঞঊ) স্বল্প দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রটি একটি মানবিক মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও ভালবাসার অনুভূতির গল্পের ফসল। সিনেমায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় কাজ করেছেন টেলিভিশন পর্দার সফল অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। সিদ্ধার্থ চরিত্রে কাজ করা ফায়জুর মিল্টন গত ১০ দশ ধরে মঞ্চে দুর্দান্ত কাজ করছেন। অনন্য দক্ষতায় গল্পের অন্যতম মৌলিক চরিত্র সিদ্ধার্থকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। ছবিটিতে আরও কাজ করেছেন জান্নাত রোজ ও রাশেদ খান। মূলত পুরো সিনেমার গল্পটি সত্যিকার অর্থেই একটি এক রাতের উপ্যাখান এবং ছবিটির শূটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে জুলাই/২০১৬ সালে। পরে ছবিতে তুলির শেষ আঁচড় দিতে কয়েক মাসজুড়ে চলে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। ছবিটিতে চিত্র সম্পাদনার কাজ করেছেন সালাউদ্দিন বাবু এবং শব্দ গ্রহণ ও প্রকৌশলের দায়িত্বে ছিলেন নাহিদ মাসুদ। পুরো চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা ও সুর সঙ্গীতের কাজ করেছেন রাসেল রহমান। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্কুলের একটি প্রোডাকশন হলো রুলেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রী শেষ করেছেন ছবির পরিচালক মোহাম্মদ সামিউল মুঈদ। ছবিটি সুপারভাইজ করেছেন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন এবং ছবিটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এ জে এম শফিউল আলম এবং চলচ্চিত্র শিক্ষক হায়দার রিজভী। রুলেট ছবির প্রি-প্রোডাকশন দল ত্রিশুলে কাজ করা বেশিরভাগই সদস্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে রুলেট। ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত আইচিল ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা সিনেমাট্রোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছে রুলেট। একই বিভাগে স্পেনের দুটি ও ডেনমার্কের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রকে হারিয়ে সেরা সিনেমাট্রোগ্রাফির পুরস্কার জিতে রুলেট। রুলেট ছবিটিতে সিনেমাট্রোগ্রাফি করেছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ মল্লিক। গত মার্চ মাসে আয়ারল্যান্ডের ইলিভেশন ইন্ডি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেস্ট স্পটলাইট ফিল্ম বা সেরা স্বল্প দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রের ক্যাটাগরিতে সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নিয়েছে রুলেট। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলসের একটি চলচ্চিত্র উৎসবেও সেরা ছবির তালিকায় সেমি ফাইনাল রাউন্ড পর্যন্ত মনোনয়ন পায় রুলেট। বর্তমানে ইউরোপের ইতালি, রোমানিয়া, কানাডা, ব্রাজিলসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ রুলেটে প্রদর্শিত হয়েছে ও বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশে ছবিটির প্রদর্শনের কথা রয়েছে।
×