ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুদীপ্ত ধ্রুব

ফোর্বসের দৃষ্টিতে উদীয়মান তরুণ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

ফোর্বসের দৃষ্টিতে উদীয়মান তরুণ

মিজানুর রহমান কিরণ ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন দেশের জন্য কিছু করবেন। ছোট বেলায় প্রায় সময়ই দেখতেন প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের কথা তুলে ধরার মতো কেউ ছিলেন না। তাই ২০০৮ সালে মিজানুর রহমান কিরণ তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য গড়ে তোলেন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিবন্ধী মানুষ বিশ্ববৈচিত্র্যের একটি ভিন্ন রূপমাত্র। তাদের আলাদা কিংবা অবহেলার চোখে দেখার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। প্রতিবন্ধীরা আমাদের পরিবারেরই সদস্য, আমাদের ভাইবোন। তাই একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সাধারণ মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। সেই ভাবনার থেকে পিডিএফ এর যাত্রা শুরু। ওই সময়ে পিডিএফের কাজের পৃষ্ঠপোষকতা করেন সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ড. ভেলরি এ্যান টেলর। বর্তমানে এ সংগঠনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিবন্ধীর কল্যাণার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ প্রতিবন্ধীরা অংশগ্রহণ করতে পারলেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পারত না। তারাও যাতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেন পিডিএফের সদস্যরা। এর ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলতে পিডিএফ আয়োজন করে শীতকালীন ক্যাম্প। যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সংগঠনটি আয়োজন করে সামার চ্যালেঞ্জ যেখানে সংগঠনের বিভিন্ন সদস্য কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্লাস লেকচার রেকর্ড করে দেয়া, তাদের ক্লাসে নিয়ে যাওয়া, শ্রুতি লেখক হিসেবে তাদের পরীক্ষা দিয়ে দেয়াসহ তাদের অধিকার আদায়ে সকল ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠন। ‘আগে প্রতিবন্ধীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারত না।এ সমস্যাটি অনুধাবন করতে পেরে এই নিয়মকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হাইকোর্টে একটি রিট করে পিডিএফ। শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট পিডিএফের পক্ষে রায় দেন এরপর থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধীরাও অংশগ্রহণ করে।’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসের এশিয়ার অনুর্ধ-৩০ তরুণ সামাজিক উদ্যোক্তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে স্থান পেয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান কিরণ। এশিয়া থেকে ৩০ জন তরুণ সামাজিক উদ্যোক্তাকে নিয়ে এক তালিকা প্রকাশ করে ম্যাগাজিনটি। ৩০ বছরের কম বয়সী যেসব তরুণ ব্যবসা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তাদের স্থান দেয়া হয়। আমাদের মিজানুর রহমান কিরণ তার ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের সেবাদান ও অধিকার আদায়ের কাজ করার জন্য অনুর্ধ-৩০ তরুণ সামাজিক উদ্যোক্তাদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। এছাড়া ফোর্বসের একই তালিকা স্থান পেয়েছেন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যুবদূত বাংলাদেশের সওগাত নাজবিন খান। সামাজিক উদ্যোক্তাদের মূল খাতের পাশাপাশি এবারে নতুন করে শুরু করা ‘পাইওনিয়ার উইম্যান’ ক্যাটাগরিতে তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এর আগে নাজবিন খান কমনওয়েলথ ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স-২০১৬, এশিয়া ইয়ং পারসন অব দ্য ইয়ার ২০১৬ এবং গ্রিন ট্যালেন্ট এ্যাওয়ার্ড ২০১৫ লাভ করেন। ময়মনসিংহের ফুলপুরে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এইচ এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কারণে তাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। এইচ এ ফাউন্ডেশনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হচ্ছে এইচ এ ডিজিটাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া-নির্ভর ক্লাসরুম শিক্ষার পাশাপাশি ল্যাপটপ, ট্যাবের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর এই বিদ্যালয়টিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিনা খরচে আধুনিক শিক্ষা পাচ্ছে। শিক্ষকদেরও দীর্ঘ সময়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযোগী করা হয়েছে। বর্তমানে আশপাশের ৫০টি গ্রামের ৬০৫ জন শিক্ষার্থী ওই স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছে।
×