ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিভি তৈরির কারিগর নিয়াজ আহমেদ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

সিভি তৈরির কারিগর নিয়াজ আহমেদ

ডিপ্রজন্ম- আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন- নিয়াজ আহমেদ : ‘কর্পোরেট আস্ক’ নামের একটি ছোট প্রতিষ্ঠান আছে আমার। আমরা এখান থেকে মানুষের সিভি তৈরি করে দেই ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী অথবা যারা জব খুঁজছেন তাদের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়াও আমরা হেড হান্টিং কাজের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন কোম্পানিকে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে আমরা সহায়তা করি। নিজেদের লেখনী দ্বারা প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলে তাদের ভেতরের সেরাটি ফুটিয়ে তুলতে কাজ করি আমরা। এরপর সেরা কোম্পানিগুলোর সেরা জায়গায় তাকে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করি আমরা। ডিপ্রজন্ম- ‘কর্পোরেট আস্ক’ প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প- নিয়াজ আহমেদ : আমি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, আমার ৪ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল এনার্জি সেক্টরে কাজ করার। লন্ডনের একটি ভার্সিটিতে আমি পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স করার জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি। শতাধিক ট্রেনিং করার অভিজ্ঞতা ও খুব কঠিন জিনিস সহজে মানুষকে বোঝাতে পারার কারণে ট্রেনিং ইন্ডাস্ট্রিতে আসার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু চুল দাড়ি না পাকলে নাকি ট্রেনিং করানো যায় না, কেউ সুযোগ দিল না। বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়ে হয়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে শুধু সিভি লেখার আইডিয়া নিয়ে জানুয়ারি ২০১৬ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেই। ডিপ্রজন্ম- সিভি রাইটিং নিয়ে আগ্রহী হলেন যে কারণে- নিয়াজ আহমেদ : আমাদের দেশে মানুষ প্রচুর, সেই মানুষের ভিড়ে দক্ষ মানব সম্পদ নিতান্তই নগণ্য। আর তাছাড়া অনেকে আছেন দক্ষ, কিন্তু তারা তাদের দক্ষতা ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। যে কাজ করছেন, তার সঙ্গে, যে সার্কুলারের বিপরীতে তিনি সিভি পাঠাচ্ছেন, দুইয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে পারেন না। এজন্য অনেকের অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই সিভি রাইটিং এ আসা। তবে উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সিভি রাইটিং সার্ভিস আছে। তাই, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে নিজের কাজ, অর্জন ও দক্ষতাগুলোকে সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলা খুবই জরুরী। আর সেই গুরুত্ব বুঝতে পেরেই আসলে এই চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসা। সিভি রাইটিং দিয়ে কিভাবে প্রতিদানকে ইমপ্রেস করা হয়- অন্যকে ইমপ্রেস করতে হলে নিজেকে এক্সপ্রেস করতে হবে, আপনি নিজে সেসব জায়গায় জীবনেও যেতে পারবেন না, যেখানে আপনার সিভি যাবে, আপনার সিভি যদি ইউনিক হয়, তাহলে সিভিই আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার কাক্সিক্ষত জবের কাছে। সুতরাং সিভিকে গুরুত্ব না দিয়ে, ক্যারিয়ারে খুব বেশিদূর যাওয়া যাবে না। ডিপ্রজন্ম- যেসব সফলতা এসেছে এখন পর্যন্ত নিয়াজ আহমেদ : আমরা গত ১৪২৪ সালের পহেলা বৈশাখে ১৪২৪তম সিভি লেখা শেষ করলাম। মোট ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ হাজার ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক কর্মশালা করিয়েছি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও পোর্টাল মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক ক্যারিয়ার বিষয়ক লেখা লিখেছি যেগুলো লক্ষাধিকবার পঠিত হয়েছে। ২৭টি দেশের ৮১টি ভিন্ন প্রফেশনের মানুষের সিভি করেছি। জিএম, সিইও, এমডি লেভেলের শতাধিক প্রোফাইল তৈরি করেছি। ডিপ্রজন্ম- এত পড়াশোনা করে সিভি রাইটিংয়ের মতো এ রকম ভিন্নধর্মী উদ্যোগ কেন? নিয়াজ আহমেদ : আমি খুব গর্বিত এ কাজ নিয়ে। আসলে নিজেকে সর্বোত্তমভাবে প্রকাশ করাটা খুব জরুরী। আমরা এই ব্যাপারটি খুব বেশি ইগনোর করি। যে কারণে আমরা পদে পদে ক্ষতিগ্রস্ত হই। কিন্তু তবুও আত্মোন্নয়নের চেষ্টা করি না। আমি চাই, আমার লেখার মাধ্যমে ক্যারিয়ারের সর্বোত্তম দিকগুলো সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলতে। আমি এই পর্যন্তু ৬শ’র অধিক সিভি লিখেছি। ১৭টি দেশে প্রবাসী বাঙালীদেরও সিভি লিখে দিয়েছি। কেউ যখন আমার লেখা সিভি দিয়ে বেশি বেশি ইন্টারভিউ কল পায় বা জব পায়, তখন আনন্দে মনটা ভরে যায়। ডিপ্রজন্ম- বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন নিয়াজ আহমেদ : সবাই চতুর্থ বর্ষের শুরুতে সিভি বানান, সিভিতে কি কি জিনিস থাকতে হয় সেগুলো জানুন, আপনার কি কি স্কিলের ঘাটতি আছে দেখুন, সেগুলো ঠিক করে নিন। প্রতি সেমিস্টারে এমন কিছু এক্সট্রা কাজ করুন, যাতে সিভিতে নতুন কিছু লিখতে পারেন। নিজের কাজ ও দক্ষতাকে গুরুত্ব দিন, কাজই আপনার হয়ে আপনার চাকরির জন্য সুপারিশ করবে। ডিপ্রজন্ম- ধন্যবাদ আপনাকে। নিয়াজ আহমেদ : ধন্যবাদ আপনার মাধ্যমে ডিপ্রজন্মের সকল পাঠককে।
×