ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ

পহেলা বৈশাখ বাঙালীর সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রথম দিবস। অতীতের সব শোক-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা ও গ্লানি ভুলে সামনে চলাই নববর্ষের মূল চেতনা। জাতি, ধর্ম, বর্ণসহ সকল ভেদাভেদ দূর করে প্রাণের সংস্কৃতিকে অভ্যর্থনা জানাতে দেশের সকল বিভাগীয় ও জেলা শহরে আয়োজন করে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এইদিন বাঙালী সকল কুসংস্কার ও বাধা ভেঙ্গে নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠে। তাই তো তরুণেরা রমনার বটমূলে সম্মিলিত হয়ে গেয়ে ওঠে- এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ...। ষাটের দশকে বাঙালী চেতনাবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানট সংগঠনটি প্রথম আয়োজন করে বৈশাখ উদ্যাপন অনুষ্ঠান। নববর্ষকে সামনে রেখে প্রতিবছর রমনার বটমূলের জাঁকজমকপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে শত শত শিল্পী, সমাজের বরেণ্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। পরে সময়ের পরিবর্তনে বাঙালীর সাংস্কৃতিক জাগরণে পহেলা বৈশাখ পালিত হয় ভিন্ন মাত্রায়। বছর পার হয়- নববর্ষের সাংস্কৃতিক ধারা যেন আরও মজবুত ও প্রাণবন্ত হতে থাকে। বাঙালী জাতিসত্তার সাংস্কৃতিতে যেন এটি আঁকড়ে ধরে আছে আবহমানকাল থেকে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিবসটি যেন পূর্ণতা লাভ করে এক অনন্য মহিমায়- যেন এ আনন্দে দুলতে থাকে সারাদেশ। ঢাকার রাজপথসহ অলিতে-গলিতে সেদিন মানুষের এক সমারোহ ঘটে- যা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে বিরল। তবে দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীরাও নববর্ষের শুভেচ্ছাসহ এ আনন্দে অংশগ্রহণ করতে চায়। ঢাকার রাজপথে চলা তরুণদের বাহারি কারুকাজের পাঞ্জাবি ও তরুণীদের কালো মাথার খোঁপায় গোঁজা রঙিন গোলাপ ফুল, হাতে চুড়ি, রঙিন আলতা আঁকা পা, পরনে রঙিন সাদার মাঝে লালরঙের কারুকাজ সজ্জিত শাড়িÑ এসব দেখে মনে হবে এ যেন এক ভিন্ন জগত। নববর্ষে ঢাকা শহরে লোকে লোকারণ্য এক মনুষ্যপুরীতে রূপান্তরিত হয়। মনে হয় শহরের ঘর ছেড়ে সব নর-নারী কোন এক অজানা রহস্যে রাস্তায় নেমেছে। স্কুল, কলেজ, পার্কের কোথাও যেন ফাঁকা নেই, যেদিকে তাকাই সেদিকে যেন লোকে লোকারণ্য। সেইসঙ্গে রমনার বটমূলের অনুষ্ঠানের পর মঙ্গল শোভাযাত্রাটি যেন মানুষের হৃদয়-মন কেড়ে নেয়। এবারে মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য আয়োজন ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পালন করা হবে। শুধু ঢাকাতে নয়, দেশের প্রতিটি অঞ্চলেও নববর্ষকে বরণ করতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠান যেন বাঙালীদের প্রাণের অনুষ্ঠান। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলাতে চোখ ধাঁধানো রঙ-বরঙের নানারকম খেলনা, কুটির শিল্প, মিষ্টিসহ অসংখ্য বাহারিপণ্যে দোকান সজ্জিত থাকে। এছাড়া দেশের কোথাও দেখা যাবে নৌকাবাইচ, ষাঁড়ের লড়াই, কুস্তি, লাঠিখেলা ইত্যাদি গ্রাম-বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যে কোন জাতির ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তো- নববর্ষের প্রারম্ভে সকল অশুভ শক্তিকে অন্তর থেকে পদদলিত করে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে তথা বাঙালীর সাংস্কৃতিকে অন্তরে ও বাস্তবে সংরক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ভবিষ্যতের সঠিক দিগন্তের পথ প্রদর্শন করতে হবে। আলাদাতপুর, নড়াইল থেকে
×